লক্ষ্যে স্থির অনির্বাণ।
গল্ফের সবচেয়ে প্রাচীন মেজর টুর্নামেন্টে আত্মপ্রকাশেই তাঁর চোখ ধাঁধানো হোল-ইন-ওয়ান নিয়ে চর্চা হয় আজও। গত বছরও খেলেছেন ব্রিটিশ ওপেন। চেনা টুর্নামেন্ট এ বার অবশ্য হচ্ছে ইতিহাসে মোড়া অচেনা কোর্সে। তবে সেই চিন্তা দমাতে পারছে না নিজের তৃতীয় ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা নিয়ে অনির্বাণ লাহিড়ীর দুরন্ত উৎসাহ।
স্কটল্যান্ডের ঐতিহাসিক সেন্ট অ্যান্ড্রুজ ওল্ড কোর্সে খেলা হবে এ বারের ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৫৫২ সালে তৈরি যে কোর্সকে বলা হয় গল্ফের আঁতুড়। খেলাটা এই এলাকার মাঠেই প্রথম শুরু হয়েছিল। আর এতটাই জনপ্রিয় হয় যে উঠতি প্রজন্ম তির-ধনুক চালানোর অনুশীলন ফেলে গল্ফের নেশায় ডুবছে দেখে রাজা দ্বিতীয় জেমস ১৪৫৭ সালে গল্ফকে নিষিদ্ধই করে দিয়েছিলেন। পরে রাজা চতুর্থ জেমস নিজে গল্ফ খেলতে শুরু করার পর নিষেধাজ্ঞা ওঠে। সেন্ট অ্যান্ড্রুজে পুরাতন কোর্স সেই সময়েই তৈরি। লাগোয়া দ্য রয়্যাল অ্যান্ড এনশেন্ট গল্ফ ক্লাব গল্ফের অন্যতম অভিজাত ক্লাব।
তবে প্রাচীন এই কোর্সে নামার আগে লম্বা-চওড়া রাজকীয় ইতিহাস বা পরিবেশের ভার, কোনওটাকেই নিজের উপর চেপে বসতে দিতে রাজি নন অনির্বাণ। বিশ্বের আটান্ন নম্বর বলছেন, ‘‘এই কোর্সে প্রথম খেলব। তবে প্র্যাকটিস করতে গিয়েই কোর্সটা দারুণ পছন্দ হয়েছে। এখানে খেলার অনুভূতি অসাধারণ। আপনি বারবার ফিরে এসে খেলতে চাইবেন।’’
শুধু পরিবেশই নয়, গল্ফের ‘বামপন্থী’ আঁতুড়ে তাঁর খেলাটা খুলবে বলেই মনে করছেন অনির্বাণ। রণকৌশল কী হবে সেটাও ভেবে ফেলেছেন। ‘‘এই কোর্সে বেশি বাঁ দিকে শট মারা দরকার। বিশেষ করে টি-শট। যা দেখলাম, ডান দিকে শট নিলে বিপদ হতে পারে। আমি আবার বাঁ দিকেই বেশি মারতে পছন্দ করি। তাই আমার খেলার ধরনের সঙ্গে কোর্সটা মানানসই। কোন কোন হোল-এ স্কোর করার সুযোগ রয়েছে দেখে নিয়েছি। আমার স্ট্র্যাটেজি মোটামুটি তৈরি,’’ ওপেনে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে বলেছেন অনির্বাণ।
হালফিল তাঁর খেলায় ছন্দপতন ঘটছে, মানছেন। বলেছেন, ‘‘ভাল-মন্দ দু’টো সময়-ই আছে। তবে ইদানীং খারাপ খেলার চেয়েও আমার খুচখাচ ভুল হচ্ছে বেশি।’’
এমনিতে স্ত্রী ঈপ্সা, বাবা-মা, কোচ বিজয় দিবেচা সঙ্গেই ছিলেন অনির্বাণের। ওপেন-এর ঠিক আগে তাঁর ভারতীয় ক্যাডি রাজীব-ও পৌঁছে গিয়েছেন স্কটল্যান্ড। বাদবাকি মরসুম খেলার সময় গল্ফ ব্যাগটা রাজীবের কাঁধে থাকবে ভেবে দারুণ উৎফুল্ল অনির্বাণ। যিনি বলছেন, রাজীবের পাশে থাকা দারুণ পয়মন্ত। ‘‘আমার সাতটা জয়েই রাজীব গল্ফ ব্যাগ কাঁধে পাশে ছিল। ও থাকায় দারুণ সাহায্য হবে। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের এমন অদ্ভুত মানসিক যোগাযোগ যে, কথা না বলেই বুঝে যাই অন্য জন কী বলছে। রাজীব আমার সেরাটা বের করে আনতে পারে।’’
২০১২-য় অভিষেকে শেষ করেন একত্রিশতম হয়ে। গত বছরও কাট পান। তৃতীয় আবির্ভাবে ব্রিটিশ ওপেনে আরও গভীর ছাপ রাখতে পারেন কি না, এ বার সেটাই দেখার।