সামনে নায়ক রোহিত। ইডেনে ৪-০ করে কোহলিরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
লেখাটা একটা ইন্টারেস্টিং পরিসংখ্যান দিয়ে শুরু করা যাক। চলতি দশকে আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে-তে প্রথমে ব্যাট করা দলের ইনিংসের গড় রান যত, রোহিত একাই তার চেয়ে ১৮ রান বেশি করেছে ইডেনে!
মনে রাখবেন, ওয়ান ডে-র প্লেয়িং রুল যতই বদল হোক— পুরো ৫০ ওভারই তিরিশ গজ বৃত্তের বাইরে চার জনের বেশি ফিল্ডার রাখা যাবে না। দু’দিক দিয়ে দু’টো নতুন বল ব্যবহার। ওভারে একটামাত্র বাউন্সার। পাশাপাশি উন্নত থেকে উন্নততর ব্যাটের আবির্ভাব। যা বলের উপর গদার মতোই নেমে আসে। কিন্তু তেমনিই তো ওয়ান ডে-র পিচগুলোও ইদানীং আরও ঢ্যাবঢ্যাবে হচ্ছে। বল সেভাবে ভাল মতো ব্যাটে আসে না। সাবলীল স্ট্রোক প্লে সমস্যা।
এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবারের রোহিতের ইনিংসটা কোথায় থাকবে?
পরিষ্কার বলছি, এ দিনের ইডেন-কাণ্ডের পরেও রোহিতের সঙ্গে এখনই সচিন, সৌরভ, সহবাগ, কোহলিদের অসংখ্য ঝলমলে ওয়ান ডে পারফরম্যান্সের তুলনায় যাব না।
অবিশ্বাস্য ২৬৪-র পরেও আমার মত হল; রোহিতের সেরাটা আমরা এখনও দেখিনি! ওর যা বিরাট প্রতিভা আর গত বছর দেড়েক যাবত নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করার যে প্রবণতা ওর ব্যাটিংয়ে দেখা যাচ্ছে, তাতে রোহিতের পারফরম্যান্সে আরও বেশি ধারাবাহিকতা আশা করাই যায়। দু’-তিনটে অসাধারণ ইনিংস খেলার পর এখনও আচমকা পরের পাঁচটা ইনিংসে হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ওর মধ্যে রয়েছে। রোহিত শর্মা অবশ্যই দুর্ধর্ষ ব্যাটসম্যান। কিন্তু গ্রেট ব্যাটসম্যান হয়ে উঠতে গেলে তাকে প্রত্যেক তিন বা চার ইনিংসে একটা বড় স্কোর করতে হয়।
তা হলেও ২০০৮-এ আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শুরুর পর ২০১২ পর্যন্ত দেশের জার্সিতে রোহিতের ব্যাটিংয়ে যে ধারাবাহিকতা দেখেছি, ২০১৩-র মাঝামাঝি ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে সেই ধারাবাহিকতা অনেক অনেক ভাল। আমার মতে ওই টুর্নামেন্টটাই রোহিতের কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।
ওর সঙ্গে অনেক বার কথা বলার অভিজ্ঞতা থেকে সিওর হয়ে বলছি, গত ষোলো-আঠারো মাসে রোহিত নিজের জীবনযাত্রা প্রচুর পাল্টেছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি রোগা, অনেক বেশি ফিট। যে জন্যই এ দিন বলেছে, আরও পঞ্চাশ ওভার ব্যাট করতে পারত।
তবে সবচেয়ে বড় কথা, আগে ওর ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, প্রচুর পরিমাণ প্রতিভাটাই! আমার মতো গড়পরতা ব্যাটসম্যানদের যেখানে প্রতিটা বলে কেবল দু’টো শটের বিকল্প থাকে— হয় ডিফেন্স, নয়তো অ্যাটাক, সেখানে রোহিতের হাতে কম করে চার-পাঁচটা শটের বিকল্প থাকে। আমার তো মনে হয়, প্রতি বল-য়েই ওর দু’ধরনের স্ট্রোক মারার ক্ষমতা আছে। কিন্তু সেটাই গোড়ার দিকে ওর কাল হয়েছিল! ‘প্রবলেম অব প্লেন্টি’ আর কী!
কিন্তু গত দেড় বছরে ও শট বাছাইয়ে অনেক বেশি নিখুঁত হয়ে উঠেছে। মন থেকে পুরো ছেঁটে ফেলতে পেরেছে যে, আমি যে-হেতু সব শট খেলতে পারি, তা হলে সব বলেই শট খেলব না কেন? সত্যিকারের ভাল বলকেও তার ন্যায্য সম্মান দেওয়ার ব্যাপারটা রোহিত মাথায় রাখতই না। সেটাও এখন মাথায় রাখছে। ইডেনে ১৭৩ বলে ২৬৪-তেও যে রোহিত স্লগ করেনি, প্রায় সব শটই মিডল অব দ্য ব্যাট-এ মারা, তার কারণ একটাই— নিখুঁত শট বাছাই আর নিজের দুধর্র্র্ষ ব্যাটিং ফর্মের দিনেও সত্যিকারের ভাল বল-কে সম্মান দেওয়া।
রোহিত হল অনেকটা ভিভিএস টাইপ। মানে লক্ষ্মণের মতো বল যত ভাল ব্যাটে আসে, যত বেশি বাউন্সে আসে, ততই ভাল ব্যাটিং করে। অস্ট্রেলিয়ার পিচেও রোহিত নিশ্চয়ই আরও ভাল খেলবে। পাহাড়প্রমাণ আত্মবিশ্বাসটা তো দেড়শো বছরের ইডেনে থেকেই নিয়ে যাচ্ছে!
ওঁরা বলেন...
• অসাধারণ ব্যাটিং রোহিত। এই হল আসল রোহিত, অবিশ্বাস্য প্রতিভা। জাত ক্রিকেটারের খেলা দেখুন আর প্রাণভরে উপভোগ করুন।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি
• ইডেনে রেকর্ড! অসাধারণ নক রোহিত! অভিনন্দন নাও! হারানো সময়টা দারুণ ভাবে পুষিয়ে নিলে! সর্বোচ্চ স্তরের ব্যাটিং! শ্রীলঙ্কার সামনে এখন প্রথম টার্গেট ২৬৫...তারপর ৪০৫। আর রোহিতের পরের টাগের্ট কি আইপিএলে একটা ডাবল সেঞ্চুরি... স্রেফ জানতে চাইছিলাম... সবই সম্ভব! যা দেখলাম, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না!
অনিল কুম্বলে
• এই রেকর্ডটা থেকে যাবে!! কী ব্যাটিং, চোখ জুড়িয়ে গেল! ওয়েল ডান ব্রো, ইতিহাস গড়ে ফেললি!
হরভজন সিংহ
• মাই গড!!! রোহিত শর্মা তুমিই সেরা চ্যাম্পিয়ন!!! অবিশ্বাস্য। অনেক অনেক অভিনন্দন রইল।
অভিষেক বচ্চন
• সুন্দর একেই বলে! ব্যাটিংয়ের উপর কী অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়! অবিশ্বাস্য একটা ইনিংস খেললি ভাই।
যুবরাজ সিংহ
• শ্রীরামচন্দ্রের পর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতের দ্বিতীয় সেরা পারফর্মার এখন রোহিত শর্মা।
রবীন্দ্র জাডেজা
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ৪০৪-৫ (রোহিত ২৬৪)।
শ্রীলঙ্কা ২৫১ (ম্যাথেউজ ৭৫, কুলকার্নি ৪-৩৪)।