প্রত্যয়: কোর্টে স্বমহিমায় ক্যারোলিনা মারিন। ফাইল চিত্র
তাঁর দল ‘পুণে সেভেন এসেস’ প্রিমিয়ার ব্যাডমিন্টন লিগ থেকে ছিটকে গিয়েছে আগেই। তবু তিনি বেঙ্গালুরুতেই আছেন এখন। ধারাভাষ্যের কাজে। তার মধ্যেও এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করতে চান না। সময় পেলেই নেমে পড়ছেন ব্যক্তিগত অনুশীলনে। শনিবার সকালে তাই তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে ছুটতে হল কর্নাটক ব্যাডমিন্ট সংস্থার ইন্ডোর হল-এ। সেখানে অনুশীলন সেরে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি— ক্যারোলিনা মারিন।
প্রশ্ন: গত মরসুমে আপনি দুরন্ত প্রত্যাবর্তন করেছেন। চোট সারিয়ে কোর্টে ফিরে তৃতীয় বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব জিতেছেন। তবু মরসুমের শেষে এসে পিবিএলে পুণেকে সেমিফাইনালে তুলতে না পেরে কি হতাশ?
ক্যারোলিনা মারিন: ভারতে আসতে আমি বরাবরই খুব ভালবাসি। এখানকার সংস্কৃতি, খেলাধুলো সব কিছুই আমার খুব পছন্দের। পিবিএল আমার কাছে নিজের খেলা উন্নত করার খুব ভাল একটা সুযোগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে একই দলে থাকার ব্যাপারটাও আমি দারুণ উপভোগ করি। অবশ্যই পুণের হয়ে এ বার সেমিফাইনালে উঠতে পারলে ভাল লাগত। সেটা পারিনি বলে হতাশ হয়েছি বলব না। খেলাধুলোয় হার-জিত রয়েছে। আশা করি এ বারের শিক্ষাটা পরের বার কাজে লাগাতে পারব আমরা।
প্র: স্পেনে যে হেতু ব্যাডমিন্টন খুব একটা জনপ্রিয় নয়, আপনার কি মনে হয় নিজের দেশের চেয়েও ভারতের আপনার জনপ্রিয়তা বেশি?
মারিন: (হেসে উঠে) দুর্ভাগ্যবশত কথাটা সত্যি। এই যে দেখুন বাচ্চারা আমার কাছে অটোগ্রাফ, সেলফি চায়, আমার খুব ভাল লাগে (কথা বলতে বলতেই কয়েক জন খুদে ইতিমধ্যে সেলফির আবদার জানিয়ে গিয়েছে, মারিন কথা দিয়েছেন সাক্ষাৎকার পর্বের পরে দেবেন)। যার মানে, ওরা খেলাটাকে ভালবাসে। ভারতে এ রকম আবদার আমাকে প্রায়ই মেটাতে হয়। আমার মনে হয় এটা আমার একটা দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে, সঙ্গে ব্যাপারটা উপভোগও করি।
প্র: আপনাকে প্রতিযোগিতায় নামলে গলায় একটা লকেট পরে থাকতে দেখা যায়। অবশ্য সব সময় সেটা পরেন না। এখন যেমন অনুশীলনেও পরেননি। এর পিছনে কি কোনও সংস্কার রয়েছে?
মারিন: না না, সে রকম কিছু নয়। আমার সে রকম কোনও কুসংস্কার নেই। ম্যাচের সময় এটা পরতেই হবে, ওটা পরতেই হবে, এ রকম কিছু নেই। কোর্টে নামার সময় যা পরতে ভাল লাগে, পরি। অনুশীলনে যদি মনে হয় সেটা পরতে ভাল লাগছে না, পরি না। তবে আমার বাবা-মা বা প্রেমিক যদি কিছু উপহার দেয়, সেটা প্রতিযোগিতার সময় পরতে ভাল লাগে।
প্র: মরসুমের শেষে ভারতে পিবিএলে যোগ দিতে নামার পাশাপাশি নতুন মরসুমের প্রস্তুতি নেওয়াটাও কি সহজ হয়ে যায় আপনার কাছে? কেন না এই ধারাভাষ্যের কাজের ফাঁকেও আপনাকে এ রকম কঠিন অনুশীলন করতে দেখা যাচ্ছে।
মারিন: সেটা বলতে পারেন। তবে বড় দিনের সময় পরিবারের সঙ্গে সবাই সময় কাটাতে চায়। তাই অনেক সময় সে সব ছেড়ে আসাটা কঠিন হয়ে যায়। আমি যেমন গত তিন বছর ধরে বড়দিনের সময় ভারতে আসছি। জানি না কবে স্পেনে আমার নিজের শহরে (হুয়েভা) যেতে পারব। তবে হ্যাঁ, ভারতে থাকার সময় আমি নিজের খেলাকে আরও উন্নত করার কোনও সুযোগ হারাই না। কারণ, স্পেনে আমি ভারতের মতো অনুশীলনের সঙ্গী পাই না। এখানে অনেক ভাল খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ পাওয়া যায়।
প্র: রিও অলিম্পিক্স ফাইনালে আপনি পি ভি সিন্ধুর মুখোমুখি হয়েছেন। গত মরসুমে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও প্রতিপক্ষ ছিলেন সিন্ধু। আপনার সব চেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে সিন্ধুকে কতটা এগিয়ে রাখবেন?
মরিন: দেখুন বিশ্বের প্রথম দশ বা কুড়িতে যারা থাকে তারা সবাই খুব কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই আলাদা করে সিন্ধুকেই সব চেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী বলব না। আমার মনে হয় সিন্ধু আর সাইনা দু’জনেই খুব কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। দু’জনের খেলার ধরন আলাদা। দু’জনকেই সামলানো সোজা নয়।
প্র: নতুন মরসুমে অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জনের চাপও রয়েছে আপনার সামনে। তাই এই মরসুমকে কি তুলনামূলক ভাবে গত বারের চেয়ে কঠিন মনে করছেন?
মারিন: কঠিন তো বটেই। আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন সংস্থা মনে হয় বছরে আঠারোটা প্রতিযোগিতায় খেলা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। তা ছাড়া অলিম্পিক্সের যোগ্যতাও রয়েছে এ বছর। তাই এই চাপ সামলানোর পাশাপাশি আমার লক্ষ্য অলিম্পিক্সের আগে নিজেকে চোটমুক্ত রাখা।
প্র: আপনি আগেও বলেছেন রাফায়েল নাদাল আপনার আদর্শ। দু’দিন পরেই বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম অস্ট্রেলীয় ওপেন শুরু হচ্ছে। আপনার কি মনে হয় চোট সারিয়ে নাদাল প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারবেন?
মারিন: শুনেছি, এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের জন্য নাদালের হাতে একটা নতুন সার্ভিস রয়েছে। পঁয়ত্রিশ বছর বয়েসেও নাদাল ক্রমশ নিজের খেলা উন্নতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ভাবা যায়! অবশ্যই নাদাল আমার আদর্শ। স্পেনে ও খুব জনপ্রিয়। আমাদের দেশের সেরা অ্যাথলিট। আমি নিশ্চিত, নাদাল দুরন্ত ভাবে প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারবেন। (বলেই কথামতো দ্রুত অপেক্ষারত খুদে ভক্তদের ভিড়ে অটোগ্রাফ, সেলফির আবদার মেটাতে চলে গেলেন তিন বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন)।