বছরের এই সময়টা দিন হোক বা রাত— হোটেলের এয়ারকন্ডিশনড ঘরের বাইরে পা রাখলে মনে হয়, যন্ত্রণাটা যেন শেষই হচ্ছে না। শুক্রবার রাতেও মুম্বই আর সিএসকের থেকেও মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছে গরমের দৈত্যটাই। আর তেন্ডুলকর, পন্টিংয়ের মতো জ্যোতিষ্করা মাঠে থাকা সত্ত্বেও বলব, মাঠ কাঁপিয়ে গেল সেই গরমের দৈত্যই। তবে চেন্নাইয়ের এই টিপিক্যাল দীর্ঘ রাতে স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় গরমের থেকেও আমার মাথায় কিন্তু ঘুরছিল অন্য কিছু।
হার্দিক পান্ডিয়াকে তখন সদ্য ম্যাচের সেরা ঘোষণা করা হয়েছে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানাতেও প্রায় ভুলে যাচ্ছিল ও। যেন প্রচণ্ড তাড়াহুড়োয় রয়েছে। তাতে অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু নেই! এই বিশ বা একটু বেশি বয়সি এ দিনের ম্যাচে তিনটে ছক্কা হাঁকিয়েছে ওর মতো বয়সেরই পবন নেগিকে, যে ব্যাট হাতেও প্রথম ইনিংসে কম দাপট দেখায়নি। এই দুটোই টুর্নামেন্টের টিপিক্যাল ব্যাক-টু-ওয়াল পারফরম্যান্স। কেউ এক জন এসএমএসে বলছিল এ বারের আইপিএলে ঠিক এ রকম ইনিংসেরই অভাব দেখা যাচ্ছে।
টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং লাইন আপের ‘প্রথম চার’ ব্যাটসম্যান নিয়ে একটা ভুল ধারণা রয়েছে। এই জন্যই গেইল-কোহলি-ডে’ভিলিয়ার্স হয়তো প্রথম তিনে থাকে। এই জন্যই ওয়ার্নার-ধবন শুরুতে নামে। কিন্তু এই ‘প্রথম চার’ তত্ত্বকে পিছনে ফেলে যে সব টিম এগিয়ে গিয়েছে তাদের দিকে একবার দেখুন— ফকনার, ধোনি, রাসেল, পোলার্ড— সবাই ম্যাচ উইনার। এই কারণেই এদের টিম আইপিএলের সেরা।
ব্যাক-টু-ওয়াল বলতে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একটা ইনিংস। টি-টোয়েন্টিতে মানেটা হল, যা শেষ ক’য়েক ওভারে দেখাতে হয়। প্রথম ক’য়েক ওভার বা মাঝে হয়তো ‘প্রথম চার’রা মণি-মুক্তোগুলো কুড়োতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচগুলোয় দেখুন এক বার— এক ডজনের কম রান, শেষ বল, শেষ উইকেট— স্কোরবোর্ডে দাপট দেখাতে উঠে আসবে কোনও পান্ডিয়া বা নেগির নাম।
এদের স্নায়ু ইস্পাত কঠিন। প্রতিভাও কম নয়। বিশেষ করে এত প্রতিকূলতা ঠেলেই কিন্তু এদের উঠে আসতে হয়— ওভার শেষ হয়ে আসছে, সেরা বোলাররা আক্রমণে ফিরে এসেছে, অনেক সময় অপর প্রান্তের নড়বড়ে পার্টনারকে ঠেকাতে দু’দিকেই ব্যাটিংয়ের চাপটাও নিতে হয়। এরা কিন্তু সব সামলে ড্রেসিংরুমে ফেরে, আর পরের দিন হেডলাইন জুড়ে থাকে অন্য কেউ। টাফ লাক।
এই কারণেই পান্ডিয়াকে শুক্রবার ম্যাচের সেরা দেখে আমি এত খুশি হয়েছিলাম। ওর ব্যক্তিগত রানটা খুব বেশি না হলেও টিমকে জেতাতে ভূমিকা কম ছিল না। বিচারকরা ওর রানের ওজনের থেকেও সেটার মূল্য বেশি দিয়েছিলেন। ম্যাচে ওর তিনটে ক্যাচ নেওয়ার ব্যাপারটাও ভুলে গেলে চলবে না। তার পরও যদি পান্ডিয়াকে হেডলাইনে খুঁজে না পান, সেটার কারণটা এতক্ষণে নিশ্চয়ই লেখাটা পড়ে বোঝা হয়ে গিয়েছে।