আতঙ্কিত তামিমরা উড়লেন সকালেই

লবিতে নামার পরে বেশিক্ষণ তাঁদের অপেক্ষা করানো হল না। পনেরো মিনিটের মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল বিমানবন্দরের দিকে। কিন্তু হোটেলে পৌঁছে এ দিন যে রকম নিরাপত্তার বলয় দেখলাম, তা চলতি সফরে এক মাসের উপরে কাটিয়ে কখনও দেখিনি। মোট চারটি পুলিশের গাড়ি এসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। 

Advertisement

দেব চৌধুরী বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিক

ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩৭
Share:

ঘেরাটোপ: শুক্রবার মসজিদে হত্যালীলা চলার পরের সকালেই ক্রাইস্টচার্চ ছাড়লেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা। রাতেই অবশ্য নির্বিঘ্নে ঢাকায় পৌঁছে যান তামিম ইকবালরা। টুইটার

আতঙ্কের প্রহর কাটিয়ে অবশেষে শনিবার সকালে দেশের দিকে রওনা হলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা। নিউজ়িল্যান্ডের সময় সাড়ে আটটা নাগাদ হোটেলের লবিতে জড়ো হতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। যখন এক এক করে ক্রিকেটারেরা লবিতে এসে দাঁড়াচ্ছিলেন, তখনও তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। বিনিদ্র রজনীই হয়তো কাটিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

লবিতে নামার পরে বেশিক্ষণ তাঁদের অপেক্ষা করানো হল না। পনেরো মিনিটের মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল বিমানবন্দরের দিকে। কিন্তু হোটেলে পৌঁছে এ দিন যে রকম নিরাপত্তার বলয় দেখলাম, তা চলতি সফরে এক মাসের উপরে কাটিয়ে কখনও দেখিনি। মোট চারটি পুলিশের গাড়ি এসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

এই সিরিজে অনেক জায়গাতেই দেখেছি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীরা নেই। যেটা উপমহাদেশে খেলা হলে ভাবাই যায় না। কিন্তু শুক্রবার মসজিদে হত্যালীলার পরের দিন নজিরবিহীন নিরাপত্তার ছবি দেখা গেল। স্নিফার ডগ্স নিয়ে উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা অফিসারেরা। চার গাড়ি ভর্তি সশস্ত্র পুলিশ। বাংলাদেশ টিমের বাসকে এসকর্ট করে তাঁরাই নিয়ে গেলেন বিমানবন্দরে। উড়ান ধরার আগে বাংলাদেশের তারকা ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল বলে গেলেন, ‘‘মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হল, সেই আতঙ্ক কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে। আমরা যে তাড়াতাড়ি করে ফিরে যেতে পারছি, সেটাই ভাল। কারণ সকলের পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছে।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শুক্রবার মসজিদের ভিতরে যখন আক্রমণকারী হত্যালীলা চালাচ্ছিল, বাসে করে ১৭ জন বাংলাদেশের ক্রিকেটার সেখানে উপস্থিত হন। স্টেডিয়াম থেকে তাঁরা দেরি করে পৌঁছন বলে বেঁচে যান। বাসের মধ্যে বসেই তাঁরা দেখেন, গুলিতে রক্তাক্ত কয়েক জন মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসছেন। কয়েক জনের মৃতদেহ সামনে পড়ে রয়েছে। বাসের মধ্যে বসে থাকা নিরাপদ না-ও হতে পারে ভেবে দ্রুত বাস থেকে নেমে হ্যাগলি পার্ক ধরে মাঠে ফিরে আসেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রশ্ন তুলেছে, নিরাপত্তার অভাব নিয়ে। তামিমরা যখন শুক্রবার বাসে করে মসজিদে গিয়েছিলেন, তখনও তাঁদের সঙ্গে কোনও নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন না। চলতি সিরিজে সত্যিই সে ভাবে কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। বাংলাদেশ বোর্ড তাই জানিয়েছে, ভবিষ্যতে বিদেশ সফরে গেলে আগে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায় তারা। নিরাপত্তার সম্পূর্ণ আশ্বাস না পেলে সেই দেশে খেলতে পাঠানো হবে না ক্রিকেটারদের।

বাংলাদেশ দল রওনা হয়ে যাওয়ার পরে গিয়েছিলাম ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালে। এখানেই শুশ্রূষা চলছে আহতদের। অনেকেই নিখোঁজ আত্মীয়, পরিজনদের কথা জিজ্ঞেস করছেন। বাংলাদেশ থেকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ফোন করে আমাকেই যেমন এক জন খোঁজ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন উমর ফারুক নামের এক জনের। হাসপাতালে গিয়ে জানলাম, সনাক্ত হওয়া শবদেহের মধ্যে ফারুক নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি তাঁকে। শুনলাম, বেশ কয়েক জন এখনও নিখোঁজ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাঁরা সকলে মৃত। ফারুকও কি তাঁদের মধ্যে আছেন? দেশ থেকে মেসেঞ্জারে ফোন আসতে দেখলেও এখন বুক কেঁপে উঠছে!

(লেখক বাংলাদেশের নিউজ চ্যানেল টিভি একাত্তরের সিনিয়র রিপোর্টার। নিউজ়িল্যান্ডে চলতি সিরিজ কভার করছিলেন। শুক্রবার ছিলেন ক্রাইস্টচার্চের ঘটনাস্থলেই)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন