ওঁর শিকার ছিল মূলত স্কুল, কলেজের ছাত্রীরা। তবে পাচারের তালিকায় শিক্ষিকা বা অন্য পেশায় থাকা মহিলারাও আছেন। যাঁদের বয়স ১৬ থেকে ৩৮-এর মধ্যে। আর নিজের টার্গেট খুঁজে পেতে অ্যাডাম কামিস ফাঁদ পাততেন ফেসবুকে। সেখানেই চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে বেছে নেওয়া হত মেয়েদের। যে ফেসবুক প্রোফাইলে এই সব বিজ্ঞাপন দেওয়া হত তার নাম ছিল ‘অ্যাঞ্জেল ট্যান’। সেই ‘অ্যাঞ্জেল ট্যান’এর খোঁজ করতে গিয়েই সিঙ্গাপুর পুলিশের হাতে উঠে এসেছে এক ভয়ঙ্কর সত্য। উঠে এসেছে সেই দেশের এক প্যারা অলিম্পিয়ানের বদলে যাওয়ার কাহিনী।
৩৭ বছরের অ্যাডাম কামিসের একটি হাত নেই। তিনি দেশের নাম করা প্যারা অলিম্পিয়ান। ২০১০ এর দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন অ্যাডাম। তার তিন বছরের মধ্যেই কী ভাবে যেন বদলে ফেললেন জীবনটা। ২০১৩ সালে খুলে বসলেন এসকর্ট এজেন্সি। নাম এসজি ফ্রিলান্সার। টাকার খোঁজে সেই ফাঁদে পা দিতে থাকল স্কুল ছাত্রী থেকে চাকুরিরত মহিলারাও। সঙ্গে চলত ‘চাইল্ট ট্রাফিকিংও’।
বাইক দুর্ঘটনায় অ্যাডামকে হারাতে হয়েছিল ডান হাত। অসার হয়ে গিয়েছিল বাঁ হাত। দুই হাত হারিয়ে খেলায় মন দিয়েছিলেন তিনি। দিল্লি কমনওয়েলথ, এশিয়া প্যারা গেমসে যোগ দিয়ে নিজেকে ফিরে পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। ক্রমশ হারিয়ে যেতে শুরু করেন খেলার জগত্ থেকে। শুরু হয় নতুন ‘ব্যবসা’। ২০১৩ থেকে ২০১৫-এর মধ্যে অ্যাডামের এজেন্সিতে যোগ দেন অনেকেই। যাদের রোজগার ছিল দিনে ৫০০ সিঙ্গাপুর ডলার।
অ্যাডামের এই রমরমা ব্যবসায় বাধ সাধে ১৬ বছরের একটি মেয়ে। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে টাকার জন্য কিছু না বুঝেই অ্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই মেয়ে। নিজের ফ্ল্যাটে ইন্টারভিউ-এর নামে সেই ১৬ বছরের মেয়েকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়। বলা হয় এখানে সবাইকেই এই পরীক্ষা দিতে হয় যে সে কতটা শারীরিকভাবে সক্ষম।
এই মুহূর্তে অ্যাডামের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে প্রসটিটিউশন, হিউম্যান ট্র্যাফিকিং, চাইল্ড ট্র্যাফিকিং।
অ্যাডামের বাড়িতে মা ও স্ত্রী রয়েছেন। নিজে হাতে খেতে পারেন না অ্যাডাম। মা বা স্ত্রী খাইয়ে দিতেন এত দিন। জেলে দেখা গিয়েছে কোনও রকমে থালায় মুখ লাগিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী অ্যাডামের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে পাঁচ বছরের জেল আর ১০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার। কিন্তু কেন বদলে গেলেন অ্যাডাম সেই তথ্য এখনও জানা যায়নি।
আরও খবর
একদিনের র্যাঙ্কিংয়ে উঠে এলেন অক্ষর, দ্বিতীয় কোহালি