Sports News

বল কেড়েছে চোখ, তবু থামেননি হকির ‘পটৌডী’

হাতে হকি স্টিক। আর শুধু অনুশীলন। সঙ্গে একটাই স্বপ্ন, ইউরোপিয়ান ট্যুর।কিন্তু পুণের শিবিরে সেই সকালটা যে আসবে, কখনও ভাবনাতেও আসেনি! এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে জাতীয় দলের শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন বলজিত সিংহ।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১৮
Share:

দুর্ঘটনার আগে (বাঁ দিকে) ও পরে (ডানদিকে) বলজিৎ সিংহ।

হাতে হকি স্টিক। আর শুধু অনুশীলন। সঙ্গে একটাই স্বপ্ন, ইউরোপিয়ান ট্যুর।

Advertisement

কিন্তু পুণের শিবিরে সেই সকালটা যে আসবে, কখনও ভাবনাতেও আসেনি!

এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে জাতীয় দলের শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন বলজিত সিংহ। কিন্তু, স্বপ্নটা ভেঙে গিয়েছিল সেই সকালে। দিনটি ছিল ২০০৯-এর ১৭ জুলাই। তার সাত দিন পরে শুরু হবে ইউরোপিয়ান ট্যুর। হাতে মাত্র ওই ক’টা দিন! তাই চলছিল প্র্যাকটিস। আরও, আরও প্রাকটিস। ইউরোপিয়ান ট্যুর শেষে ২০১০-এ দেশের মাটিতে কমনওয়েলথ গেমস। সব কিছুই লক্ষ্য ছিল। তবে পাখির চোখ ছিল ২০১২-র লন্ডন অলিম্পিক্স। কিন্তু, কোনওটাই শেষ পর্যন্ত হল না। হল না দেশের জার্সি ফিরে পাওয়া!

Advertisement

কী ভাবে ভেঙেছিল স্বপ্ন?

এক চোখে সাফল্যের শুরু। ওয়ার্ল্ড হকি সিরিজে। বলজিৎ সিংহের অ্যালবাম থেকে।

সে দিন সবার অনুশীলন শেষে গলফ বলে অনুশীলন করছিলেন বলজিৎ। সকলের প্রিয় বল্লি। একটা বল হঠাৎই মিস করেন। বলের গতির সামনে নিজেকে সরাতেও পারেননি। বল এসে সরাসরি লাগে তাঁর ডান চোখে। তার পর অনেকদিন নিজেই বুঝতে পারেননি, ঠিক কী অবস্থায় আছেন? কলকাতা সাই-এর মাঠে বসে সাত বছর আগের সেই স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে এখন আর গলা কাঁপে না বল্লির। আজ তিনি অনেক স্ট্রং। কিন্তু, কিছুদিন আগে পর্যন্ত স্বপ্ন দেখতেন ফিরবেন জাতীয় দলে। তাঁর কথায়, ‘‘সে দিন যখন চোখে লাগল, ভাবিনি দেশের জার্সিটাই চলে যাবে জীবন থেকে। লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছি ফেরার আশায়। হকিতে ফিরেছি, কিন্তু দেশের হয়ে আর খেলা হল না।’’ চোখ হারানোর ব্যথাকে ছাপিয়ে যায় অন্য এক যন্ত্রণা। দেশের হয়ে খেলতে না পারার কষ্ট!

আরও খবর:

‘স্টিং অপারেশন কাকে বলে জানতামই না’

তখন তিনি দেশের এক নম্বর গোলকিপার। তাঁকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে হকির ভারত। জাতীয় দলে মাত্র চার বছর হয়েছে। সে দিন পুণে থেকে সরাসরি বল্লিকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লি এইমসে। সেখানে তাঁর চোখে ঘণ্টা তিনেকের অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিত্সকেরা জানিয়ে দেন, চোখের আর কিছুই ঠিক নেই। কর্নিয়া, লেন্স, রেটিনা, আই-বল— সব বলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ। শেষ পর্যন্ত বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানেও তাঁর চোখে করা হয় অস্ত্রোপচার। কিন্তু, না! কেউ ভরসা দিতে পারেননি। নিরুত্তাপ গলায় তিনি বললেন, ‘‘দেশে, আমেরিকায় কোথায় না গিয়েছি। সবাই বলে দিয়েছে, ঠিক হবে না। তখনও দেখতে পেতাম, জানেন! ঝাপসা ছিল, কিন্তু পেতাম। আস্তে আস্তে সেটাও চলে গেল। এখন আর কিছুই দেখতে পাই না। এক চোখে গোটা দুনিয়া অন্ধকার।’’

দেখুন ভিডিও

সেই এক চোখেই এখনও একই ভাবে গোলের নীচে দাঁড়ান। একই ভাবে বাঁচিয়ে যান দেশের সেরা প্লেয়ারদের গোলমুখী শট। অসুবিধা হয় না? জবাবে বলেন, ‘‘কোথায়! আমার তো কোনও সমস্যা হয় না। এক চোখই এখন দু’চোখের কাজ করে। প্রথম প্রথম বেশ সমস্যা হত, জানেন। বলের লেন্থ, হাইট— কিছুই বুঝতে পারতাম না। তার পর শুধু অনুশীলন করে গিয়েছি। এখন সবটাই খুব স্বাভাবিক।’’ চোখে আলো লাগলে কষ্ট হত। সারা ক্ষণ সানগ্লাস পরে থাকতে হয়। কিন্তু, খেলার সময় তো তা পরা যাবে না। তাই খেলতে নামার কিছু আগে সানগ্লাস খুলে আলোর সঙ্গে মানিয়ে নেন বলজিৎ। তখন বেশ কষ্ট হয়। সয়ে গেলে খেলতে নামেন।

সাত বছর আগের বলজিতকেই ফিরে পাওয়া যায় হকির মাঠে। কী ভাবে সম্ভব হল? বল্লি জানাচ্ছেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেছি। নবাব পটৌডী পেরেছেন, আমি কেন পারব না? দু’বছর পর শিবিরে ডাক এসেছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপ দলে ঠাঁই পাইনি। নবস (কোচ) বলেছিলেন, অবসর নিয়ে নিতে। মানতে পারিনি। আসলে, ফেডারেশন চ্যালেঞ্জটাই নিতে পারল না। বুঝতেই পারল না, এই চোট থেকেও ফিরে আসা যায়। আমি কিন্তু ফিরেছিলাম। এখন আর দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখি না।’’

একটা সময় পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য সরকারি সাহায্যও পেয়েছিলেন। কিন্তু, হঠাৎই সেই সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সময় ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন এমএস গিল। থমকে যায় চিকিৎসা। ভাগ্যিস, ইন্ডিয়ান অয়েলের চাকরিটা ছিল! পঞ্জাব পুলিশে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল। সেটাও হল না চোখের জন্যই। এখন আর কোনও স্বপ্ন দেখেন না।

আরও খবর: ‘ট্রাক নিয়ে বাবা এখন বাংলাদেশ সীমান্তে, দেখা হবে বলেছে’

ভিডিও: অজয় রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন