হতাশার রাত। রোনাল্ডো পুরো ম্যাচ খেললেও ব্যর্থ। কুঁচকির চোটে বেরিয়ে যাচ্ছেন মেসি। সম্ভবত তিন সপ্তাহের জন্য। - এএফপি
রিয়াল মাদ্রিদ ১ - ভিয়ারিয়াল ১
বার্সেলোনা ১ - আটলেটিকো মাদ্রিদ ১
দু’ঘণ্টার ব্যবধানে লা লিগায় খেলতে নেমেছিল রোনাল্ডো আর মেসি। স্বভাবতই সবাই একটা চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স আশা করেছিল।
না, হল না।
রোনাল্ডো গোটা ম্যাচ খেলেও কিছু করতে পারল না। মেসির ফিটনেস ওর সঙ্গ দিল না। চোট পেয়ে ম্যাচের মাঝখানেই বেরিয়ে যেতে হল। গোটা বিশ্বের সমর্থকদের হতাশ করে দিয়ে গেল দুই মহাতারকার খারাপ রাত।
কিন্তু কেন এমন হল? একটা থিওরি হল, ধারাবাহিকতা হারিয়েছে দু’জনে। এই মেসি-রোনাল্ডোর আর চার বছর আগের সেই আগুনে প্রতিভা নেই। বরং তাদের ছায়া।
আমি বলব, এই ধারণাটা ঠিক নয়। বুধবার রাতে ঘণ্টা খানেকের ব্যবধানে দু’জনকে দেখার পর আমার একটা জিনিস মনে হয়েছে। সুপার ব্র্যান্ড হওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে দু’জনকে। গোটা বিশ্বের প্রত্যাশার চাপের মাশুল এখন দিতে হচ্ছে দু’জনকে। বিশ্ব বলতে আমি শুধু ফুটবল দর্শকদের কথা বলছি না। বলছি, ফুটবলের সঙ্গে জড়িত বাকি ফ্যাক্টরগুলোর কথাও। যেমন স্পনসর, যেমন প্রচারমাধ্যম, যেমন মার্কেটিং, যেমন ক্লাব কর্তা।
প্রথমে আসি মেসি-প্রসঙ্গে। কিছু দিন আগেই ও চোট পেয়েছিল। তার পরেও উরুগুয়ের বিরুদ্ধে খেলেছিল। এর পর চোট আবার বাড়ে। কিন্তু অবিশ্বাস্য ভাবেই লা লিগায় আলাভেজের বিরুদ্ধে রিজার্ভ থেকে নামে। তার পর সেল্টিকের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করার পর সবাই ধরেই নিয়েছিল মেসি পুরোপুরি ফিট। আটলেটিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে সেই সিদ্ধান্তটা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসল। কুঁচকিতে চোট পেয়ে মাঝপথেই মাঠ ছাড়ল মেসি। দেখছিলাম, সপ্তাহ তিনেক বাইরে থাকতে হতে পারে মেসিকে।
চোটটা দেখে মনেই হল এটা নতুন করে পাওয়া চোট নয়। আগের সেই চোটের উপরই আবার লেগেছে মেসির। এতেই বোঝা যাচ্ছে, চাহিদার দাবিতেই আনফিট মেসিকে বার বার নামতে হচ্ছে মাঠে। রিকভার করার মিনিমাম সময়টাও পাচ্ছে না।
আসলে মেসি এখন শুধু একজন ফুটবলার নয়। বরং বার্সার ব্র্যান্ড। যে ব্র্যান্ড থেকে অসংখ্য জার্সি বিক্রি হচ্ছে। গ্যালারি ভরে যাচ্ছে। একের পর এক স্পনসর লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। তাই তো মেসিকে এখন যত বেশি সম্ভব ম্যাচে খেলানোর চেষ্টা হচ্ছে। ও পুরোপুরি ফিট থাকুক কি না থাকুক, কোচকে চাপে পড়ে রাখতেই হচ্ছে দলে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে ফুটবলারকে। বার বার চোট পেয়ে। একটা ম্যাচও ওকে বসিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কোচও ঝুঁকি নিতে পারছে না। বসালেই প্রচারমাধ্যমে জল্পনা শুরু হয়ে যাবে, তা হলে কি কোচের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয়ে গিয়েছে মেসির? সেটা তো দলের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন নয়।
অবশ্য পুরো সুস্থ না হলেও মেসি মানে বিপক্ষের আতঙ্ক। প্রতি বছর গোলের পর গোল করে এসেছে বলেই তো ও এত অপরিহার্য বার্সার জন্য। বুধবার রাতে আটলেটিকোর বিরুদ্ধে যতক্ষণ মাঠে ছিল ততক্ষণ সিমিওনের দল ভয়ে ভয়ে খেলছিল। কারণ মেসি শুধু স্কোরার নয়। প্লে-মেকারও। মুভ যেমন ফিনিশ করতে পারে, তেমন তৈরিও করতে পারে। তাই ও মাঠে থাকা মানে যে কোনও বিপক্ষ রক্ষণই সব সময় রেড-অ্যালার্টে থাকবে। কিন্তু মেসিও তো রক্তমাংসের মানুষ। মরসুমে প্রতিটা ম্যাচ ভাল খেলতে হবে, গোল করতে হবে— এর একটা মারাত্মক চাপ তো থাকবেই। ওর একটা ছোট্ট ভুল মানেই মিডিয়ায় কাটাছেঁড়া, ইন্টারনেটে ঝড়।
আটলেটিকো ম্যাচে মেসির মুভমেন্টই বলে দিচ্ছিল ওর পেশিতে সমস্যা হচ্ছে। হলও ঠিক তাই। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটে ম্যাচ খেলার চাপ নিতে পারল না। মেসি বসে যাওয়ার পরে আটলেটিকোও গোলটা করে। মেসি রিজার্ভে ফেরার পরে বার্সাও তাদের ‘ক্রিয়েটিভ হাব’-কে হারায়। নিটফল, ১-১ ড্র।
মেসির মতো রোনাল্ডোও রিয়ালের ব্র্যান্ড। ওকেও তো সেই এক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে যে রোনাল্ডোকে দেখলাম তাকে কী করে বলব পুরোপুরি ফিট। ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে রিয়ালের ১-১ ড্রয়ের ম্যাচে রোনাল্ডো তো ঠিক মতো নড়াচড়াই করতে পারছিল না। দু’একটা শট নিল ঠিকই, কিন্তু সেই রোনাল্ডোচিতো মুভমেন্টটাই ছিল না। দু’মাস বাইরে থেকে কারও পক্ষে সম্ভবও না এত দ্রুত ম্যাচ ফিট হওয়া।
এক সময় মেসি-রোনাল্ডোর ফিটনেস নিয়ে সবাই প্রশংসা করত। কিন্তু এদের নামের ভারটাই এখন ফিটনেসের উপর প্রভাব ফেলছে। না হলে একই রাতে দুই অবিশ্বাস্য প্রতিভা এ রকম নিষ্প্রভ থাকতে পারে!