সতর্ক: ডার্বির সাফল্যে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন না পিন্টু। ফাইল চিত্র
অভিষেকের ডার্বিতেই গোল করে তিনি এই মুহূর্তে মোহনবাগানের নতুন তারকা। অথচ সেই পিন্টু মাহাতোই কয়েক মাস আগে হতাশায় ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন! তাঁকে আটকান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী।
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন ফুটবলারদের মোহনবাগান কোচ বলেছিলেন, ‘‘এই ম্যাচ এক জন ফুটবলারের জীবন বদলে দিতে পারে।’’ ডার্বি যে জীবন বদলে দেয়, তা খুব ভাল ভাবেই উপলব্ধি করছেন পিন্টু। সোমবার সকাল থেকেই বিরামহীন ভাবে বেজে চলেছে সবুজ-মেরুনের নতুন তারার মোবাইল ফোন। ইলিয়ট রোডে মোহনবাগান ফুটবলারদের মেসের সামনে সংবাদমাধ্যমের ভিড়। জঙ্গলমহলের বছর কুড়ির পিন্টুর কাছে এ একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। ডার্বি ম্যাচের পরে দিপান্দা ডিকা, হেনরি কিসেক্কা নন, আকর্ষণে কেন্দ্রে পিন্টুই। বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, অভিষেকের ডার্বিতেই গোল করেছেন। তাই মেসে ফিরেই টেলিভিশনের সামনে বসে পড়েছিলেন রিপ্লে দেখতে। সোমবার অনুশীলন ছিল না। ভেবেছিলেন জঙ্গলমহলে নিজের গ্রাম চাঁদড়ায় যাবেন বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু ডান পায়ের গোড়ালিতে সামান্য চোট থাকায় তা বাতিল করেন। এমনকি, বিকেলে মেসের সতীর্থদের সঙ্গে কাছাকাছি ঘুরতে যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন। শেষ মুহূর্তে তা-ও করেননি। গোড়ালিতে আইসপ্যাক লাগিয়ে মেসেই দিনটা কাটিয়ে দিলেন। তবে ফোনে বেশ কয়েক বার কথা বলেছেন বাবা-মায়ের সঙ্গে। ছেলেকে কৃষক বাবা বলেছেন, ‘‘উচ্ছ্বাসে গা ভাসিয়ো না। এখনও অনেক দূর যেতে হবে।’’ এ দিন মেসে পিন্টুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মোহনবাগান জুনিয়র দলে তাঁর প্রথম কোচ অমিয় ঘোষ। কিন্তু মেসের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা পিন্টুর সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে দেননি। অপমানিত অমিয়বাবু বলেন, ‘‘কলকাতায় আমার বাড়িতে থেকেই বড় হয়েছে পিন্টু। তাই ওকে আশীর্বাদ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ক্লাবের নিয়মে হয়তো ওকে বিরক্ত করা যাবে না। তাই দেখা হল না।’’
পিন্টুর আদর্শ ও সতীর্থ মেহতাব হোসেন বলছিলেন, ‘‘পিন্টুকে প্রথম দিন অনুশীলনে দেখেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তবে একটা ডার্বিতে গোল করে উচ্ছ্বাসে ভাসলে হবে না।’’
পিন্টুর মধ্যে দলের সম্পদ হয়ে ওঠার উপাদান রয়েছে বুঝতে পেরেই তাঁকে রেখে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মোহনবাগান কোচ। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের শেষ তিনটি ম্যাচের প্রস্তুতির মধ্যেই শঙ্করলাল বললেন, ‘‘গত মরসুমে নিয়মিত সুযোগ না পেয়ে এ বার মোহনবাগান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পিন্টু। আমি ওকে বুঝিয়ে মত পরিবর্তন করাই।’’ কী বলেছিলেন পিন্টুকে? সবুজ-মেরুন কোচ বললেন, ‘‘বলেছিলাম, ধৈর্য ধরো। সুযোগ এক দিন আসবেই। চেষ্টা করো সে দিন নিজেকে প্রমাণ করার।’’ পিন্টুর সাফল্যে উচ্ছ্বাসের মধ্যেও এই মুহূর্তে শঙ্করলালের প্রধান লক্ষ্য ফুটবলারদের মানসিক ভাবে উজ্জীবিত করা। বললেন, ‘‘এখনও তিনটি ম্যাচ বাকি রয়েছে। লিগ জয়ের সম্ভাবনা প্রবল। মঙ্গলবার ফুটবলারদের সঙ্গে আলোচনা করব। লিগের অঙ্ক ওদের বোঝাব। ওরা কী ভাবছে, সেটাও শুনতে চাই।’’