এই নারিনেও একই বিষ, বলছে কেকেআর

নতুন-পুরনো নক্ষত্র নিয়ে ক্রিকেট এল শহরে

রোহিত শর্মা এখন কোথায়? ইডেন ড্রেসিংরুমে বসে। নেট সেশনটা হল না। বৃষ্টিতে পণ্ড। আজকের মতো ইডেন-বাদশার আর কী করার আছে? সুনীল নারিনের বোলিং দেখা গেল? গেল। কেকেআর নেটে দীর্ঘক্ষণ সেই মারণ স্পিন, সেই চেনা ব্যাটসম্যানের নাকানিচোবানি। প্রায়ান্ধকার ইডেনে ক্যাচ প্র্যাকটিস দিচ্ছেন কে? জন্টি রোডস, আবার কে! বৃষ্টি তো কী, বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফিল্ডারের পক্ষে আর কতক্ষণ চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৩
Share:

আলিঙ্গন। কলকাতা বিমানবন্দরে অনুষ্কা-বিরাট।

রোহিত শর্মা এখন কোথায়?

Advertisement

ইডেন ড্রেসিংরুমে বসে। নেট সেশনটা হল না। বৃষ্টিতে পণ্ড। আজকের মতো ইডেন-বাদশার আর কী করার আছে?

সুনীল নারিনের বোলিং দেখা গেল?

Advertisement

গেল। কেকেআর নেটে দীর্ঘক্ষণ সেই মারণ স্পিন, সেই চেনা ব্যাটসম্যানের নাকানিচোবানি।

প্রায়ান্ধকার ইডেনে ক্যাচ প্র্যাকটিস দিচ্ছেন কে?

জন্টি রোডস, আবার কে! বৃষ্টি তো কী, বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফিল্ডারের পক্ষে আর কতক্ষণ চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব?

কোহলি, বিরাট কোহলি কখন আসবেন?

এসে গেলেন তো। সোমবার সন্ধের এয়ারপোর্টে অনুষ্কা শর্মাকে নিয়েই তো বেরোলেন।

শহরটা এত দিন এক দিক থেকে শুষ্কই ছিল বলতে গেলে। বিশ্বকাপ চলছে, ভারত দারুণ খেলতে খেলতে সেমিফাইনালে উঠল, বিরাট কোহলি টেস্ট সিরিজে ঝামেলার পর আবার মিচেল জনসনের মুখোমুখি— কিন্তু সাধারণের মাঠে বসে দেখার উপায় নেই। টিভিই ভরসা। তা-ও প্রাইম-টাইম নয়, অফিসে নাইট শিফ্‌ট করে এসে ঘণ্টাদুয়েক ঘুমিয়ে, একেবারে যাকে বলে সাতসকালে। ক্রিকেট পুণ্যার্থীরা সে দিক থেকে ভাবলে অনেক, অনেক দিন পর স্বস্তির বৃষ্টি পেলেন। আগামী পাঁচ-ছ’দিন তো শুধু কেকেআর নয়, শুধু গম্ভীর-ইউসুফ-মণীশ নয়, চাইলেই চোখের সামনে ডে’ভিলিয়ার্স, টিকিট কাটলেই ক্রিস গেইল। আর যদি উদ্বোধনে ঢুকে পড়েন তা হলে তো কথাই নেই। একসঙ্গে এক মঞ্চে আট-আটটা ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্যাপ্টেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থেকে ডেভিড ওয়ার্নার, জেপি দুমিনি থেকে বিরাট কোহলি— কেউ বাদ নেই।

খুব সহজে, ক্রিকেট এল শহরে। আজ থেকে আবার রাস্তায় রাস্তায় সোনালি-বেগুনি হোর্ডিং, টিকিট কাউন্টারে সর্পিল লাইন, টিম হোটেলের বাইরে প্রিয় নায়কদের ক্যামেরাবন্দি করার ভিড়। বিশ্বকাপ সৃষ্ট দেশাত্ববোধে পঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাত-মরাঠার সঙ্গে বঙ্গের মিলে যাওয়া আর নয়। দু’মাসের জন্য কলকাতা, শুধুই কলকাতা।

আজ থেকে আবার আইপিএল। ভারতবর্ষের টি-টোয়েন্টির সেরা ক্রিকেট-যজ্ঞ।

একটু ভুল হল বোধহয়। শহরের জনজীবনে ক্রিকেটের দখল নেওয়া তো মঙ্গল নয়, সোমবার থেকেই শুরু হয়ে গেল। ইডেনে গেল দু’টো টিম। কেকেআর আর মুম্বই। সল্টলেকে আবার একটা ক্রিকেটাড্ডা বসল আইপিএল নিয়ে। যেখানে উপস্থিত থাকলেন আবার নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন ও বর্তমান। শোয়েব আখতার এবং গৌতম গম্ভীর! শোয়েব সেখানে কেকেআর ক্যাপ্টেনের উচ্চ প্রশংসা করতে করতে বলে ফেললেন যে, এত ‘দিলের’ ক্যাপ্টেন খুব কমই আছে। যে হৃদয় দিয়ে টিমকে নেতৃত্ব দেয়। কেকেআরের খুব ভাল সম্ভাবনা আছে ট্রফিটা ধরে রাখার। শুনেটুনে নাকি গম্ভীর বলে দেন, জেতার মতো টিম তাঁর আছে ঠিকই। কিন্তু তাজ রেখে দিতে হলে আগামী পঁয়তাল্লিশ দিনে হাড়ভাঙা খাটুনিটাও আছে।

কেকেআর কেমন খেলবে, চ্যাম্পিয়নের মুকুট কলকাতায় থেকে যাবে কি না, সময় বলবে। এখন শুধু এটুকু বলা যায় নারিনের ‘রাহুমুক্তি’ টিমের মনোভাব এতটাই পাল্টে দিয়েছে যে, দেখলে ইডেনে বিশ্বরেকর্ড করা রোহিত শর্মা কেন, ডে’ভিলিয়র্সও ভাবনায় পড়তেন। সোমবার সে সুযোগ দেয়নি। মঙ্গলবার দেবে। এ দিন কেকেআর যখন প্র্যাকটিস করছে ইডেনে, বিরাটের আরসিবি তখন এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলের পথে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তখনও ইডেন পৌঁছয়নি। কেকেআর শিবির থেকে ততক্ষণে মুম্বই ম্যাচ নিয়ে বেসরকারি গর্জন তোলা হচ্ছে, মুম্বই আগে গাঁট ছিল। এখন নয়। গত বার দু’বার পাওয়া গিয়েছিল, দু’বারই হারানো গিয়েছে। প্রায়ই দেখা যায়, ইডেনে কেকেআর মানে পিচ নিয়ে টুকটাক চলবে। এ দিনও মাঠকর্মীদের কারও কারও থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেল যে, প্রকাশ্য দাবিদাওয়া না এলেও হাবেভাবে নাকি বোঝানো হয়েছে ঘাস একটু ছাঁটলে ভাল হয়। দৃশ্যত শুধু এটুকু দেখা গিয়েছে যে, গম্ভীর এবং আক্রম পিচ কভার তুলে দেখছেন এবং কিউরেটর সহ মাঠকর্মীদের কিছু বলছেন। কেকেআর শিবির ব্যাপারটা শোনামাত্র ওড়াল। বলল, পিচে ঘাস আছে না নেই, কিছু যায় আসে না। বাউন্স থাকলে ভালই। মর্নি মর্কেল আছে। উমেশ যাদব আছে। আন্দ্রে রাসেলকেও না হয় তৃতীয় সিমার হিসেবে খেলিয়ে দেওয়া যাবে। আর স্পিনার থাকবেন সাকিব-নারিন। আর হ্যাঁ এটাও বলা হল যে, অ্যাকশন পাল্টেছেন বলে নারিনের কার্যকারিতা কমবে, এ সব না ভাবাই ভাল। ভাবলে ভুগতে হতে পারে!

শহরের ক্রিকেট কার্নিভালের মেজাজে একটাই যা খচখচানি পাওয়া গেল। আকাশ। যা নাইট শিবিরের মতো টুর্নামেন্ট সংগঠকদেরও চিন্তায় ফেলছে। নাইটদের চিন্তা, বুধবারও এ ভাবে চলবে কি না। প্রথম ম্যাচটাই ভেস্তে যাবে কি না। সংগঠকদের আবার আতঙ্ক, মঙ্গলবারও এ রকম বৃষ্টি চললে সোজা ডুবতে হবে কি না। একে আইপিএল, তার উপর শহরে উদ্বোধন মানে অবধারিত সেখানে ক্রিকেট-মোহনায় এসে মিশবে বলিউড। অনুষ্কার সঙ্গে বিরাট যেমন এ দিন সন্ধেয় নামলেন, তেমন হৃতিক রোশনও নামলেন। যুবভারতীতে তুমুল রিহার্সালও চলল। কিন্তু স্টেজ শো-র চূড়ান্ত গ্যারান্টি এখনও নেই। কারণ হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, মঙ্গলবার বিকেলের দিকে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। ক্লাবহাউসে শুকনো মুখে আইপিএল সিইও সুন্দর রামন বলছিলেন, ‘‘আকাশটা শুধু ঠিক থাকুক। লেজার শো-টা দেখবেন।’’

দেখতেই তো চায় কলকাতা। সত্যি, এপ্রিলের দাবদাহে প্রার্থনার কালবৈশাখীগুলো সংগঠকদের মতো শহরকেও এখন স্বস্তির চেয়ে বেশি অস্বস্তি দিচ্ছে।

ছবি: শৌভিক দে, শঙ্কর নাগ দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন