পোলার্ডদের নেটে স্থানীয় চায়নাম্যান

টেস্ট এবং ওয়ান ডে, দুই সিরিজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাঁটা হয়ে উঠেছিলেন কুলদীপ যাদব। টেস্ট সিরিজে দশটি উইকেট পান তিনি। ওয়ান ডে সিরিজে চার ম্যাচে ছিল ছয় শিকার।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০০
Share:

একাগ্র: অনুশীলনে ক্যারিবিয়ান তারকা পোলার্ড। নিজস্ব চিত্র

টেস্ট এবং ওয়ান ডে, দুই সিরিজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাঁটা হয়ে উঠেছিলেন কুলদীপ যাদব। টেস্ট সিরিজে দশটি উইকেট পান তিনি। ওয়ান ডে সিরিজে চার ম্যাচে ছিল ছয় শিকার। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হওয়ার আগের দিন তাঁর স্পিনের ছোবলের হাত থেকে বাঁচতে ক্যারিবিয়ান শিবিরের নেটে ডাক পড়ল স্থানীয় এক চায়নাম্যান বোলারের। তাঁকে নিয়েই চলল কায়রন পোলার্ডদের প্রস্তুতি।

Advertisement

অনুশীলনের শুরুতেই সেই চায়নাম্যান বোলার ঋষভ ভুতোরিয়ার হাতে বল তুলে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং কোচ কোরি কলিমোর। শেষ ব্যাটসম্যান বেরনো পর্যন্ত বল করে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। শোনা গেল, পোলার্ড, শিমরন হেটমায়ারেরা তাঁকে ‘‘ছোট কুলদীপ’’ বলে ডাকতে শুরু করে দিয়েছেন।

অনুশীলন শেষে আনন্দবাজারকে ২১ বছর বয়সি ঋষভ বলেন, ‘‘কাল কুলদীপকে কী ভাবে সামলানো হবে, সেটাই ওদের নেটে আলোচনা করা হচ্ছিল। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ স্টুয়ার্ট (ল) স্যর ওদের বলেন, আগে ছোট কুলদীপকে সামলাও। ওকে খেলেই আসল কুলদীপকে সামলানোর রাস্তা বার করতে হবে।’’

Advertisement

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনুশীলনে যা দেখা গেল, অবিশ্বাস্য। হাওড়ার শিবপুরের এই তরুণের ঘূর্ণিতেই নাজেহাল অবস্থা হেটমায়ারদের। ড্যারেন ব্র্যাভো, নিকোলাস পুরান, দীনেশ রামদিন এমনকি, হেটমায়ারকেও আউট হতে দেখা গেল তাঁর বলে। খেই খুঁজে না পেয়ে বোল্ড হন প্রাক্তন অধিনায়ক রামদিন। সাংবাদিক সম্মেলনে কুলদীপ ও যুজবেন্দ্র চহালকে নিয়ে কেন যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন অধিনায়ক কার্লোস ব্রাথওয়েট, তা বোঝা গেল তাঁদের অনুশীলনে। ব্রাথওয়েট বলেন, ‘‘ভারতের উইকেটে কুলদীপ ও চহালকে সমীহ করতেই হবে। আমাদের কাছে ওদের আটকানোর একটাই উপায়, পাল্টা আক্রমণ।’’ কিন্তু ইডেনের মহড়ায় দেখা গেল, পাল্টা আক্রম করা দূরে থাক, কলকাতার কুলদীপকে খেলতে গিয়েই ল্যাজেগোবরে অবস্থা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের।

নেটে আক্রমণাত্মক ভাবেই শুরু করেছিলেন প্রত্যেকে। কিন্তু চায়নাম্যান বোলারের বিরুদ্ধে যে এই পরিকল্পনা না-ও খাটতে পারে, তা দ্রুতই বুঝে যান ব্রাথওয়েটরা। দু’বছর আগে ইডেন তাঁদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্বাদ মেটালেও কুল-চা জুটির সামনে সেই স্মৃতি বিস্বাদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তাই হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান অধিনায়কও নিজেদের ‘আন্ডারডগ’ বলতে দ্বিধা বোধ করছেন না। ব্রাথওয়েটের কথায়, ‘‘ঘরের মাঠে যে কোনও ফর্ম্যাটেই ভারত খুব শক্তিশালী। আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলেও সেই দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার বর্তমান দলে নেই। এমনকি, আইপিএলে খেলা ক্রিকেটারও রয়েছে মাত্র কয়েক জন। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে পারফর্ম করা ক্রিকেটারদের দিয়েই এই দল গড়া হয়েছে। তাঁদের নিয়েই ‘আন্ডারডগ’ তকমাটি মুছে ফেলার চেষ্টা করব।’’

ব্রাথওয়েটদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে আন্দ্রে রাসেলের ছিটকে যাওয়ার খবর। কারণ, একমাত্র রাসেলেরই কলকাতা নাইট রাইডার্সে সতীর্থ হওয়ার সুবাদে কুলদীপকে নিয়মিত খেলার অভ্যাস ছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান শিবির থেকে জানানো হয়েছিল, ভারতগামী বিমান ধরতে পারেননি রাসেল। শনিবার ক্যারিবিয়ান শিবিরে খবর আসে, তাঁর পুরনো হাঁটুর চোট ফের সমস্যায় ফেলেছে। পুরো টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকেই ছিটকে গিয়েছেন তিনি। ২১ নভেম্বর থেকে আরব আমিরশাহিতে টি-টেন লিগের আগে ফিটনেস টেস্টে জানা যাবে তিনি সেই লিগে খেলবেন কি না।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন রাসেলকে পাচ্ছে না, তেমনই বিরাট কোহালি ও মহেন্দ্র সিংহকে বিশ্রাম দিয়েছে ভারত। এই দু’জন না থাকায় তাঁদের জেতার সুযোগ একটু হলেও বাড়ছে, মনে করেন ব্রাথওয়েট। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু আমরা কেন, ওরা না খেললে যে কোনও দলের কাছেই জেতার সুযোগ বেড়ে যায়। ওরা না থাকায় বিপক্ষের মান কিছুটা হলেও কমবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’’

কিন্তু ব্রাথওয়েট বোধ হয় ভুলে যাচ্ছেন, শেষ দুই ওয়ান ডে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের প্রায় একাই শাসন করেছেন রোহিত শর্মা। যিনি টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতীয় দলের অধিনায়ক। তার উপর রোহিতের কাছে পয়া মাঠ ইডেন। রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় ‘কুল-চা’ জুটি সামলে উঠলেও ‘রোহিত-ঝ়ড়’ তাঁরা থামাতে পারেন কি না সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন