লড়াকু: হাফ সেঞ্চুরি করে পূজারা। ওয়ান্ডারার্সে। ছবি: এএফপি
প্রথম একাদশ নির্বাচন নিয়ে তর্ক চলছিল এত দিন। সেটা থামতে না থামতেই নতুন বিষয় চলে এল। ওয়ান্ডারার্সে বিরাট কোহালি টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করে যে, সবুজ পিচে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কি ঠিক হল?
ভারতীয় শিবিরে খোঁজ নিয়ে অবশ্য জানা গেল, গত কালই মাঠ থেকে যাওয়ার সময় ঠিক হয়ে গিয়েছিল, টস জিতলে ব্যাটিং নেওয়া হবে। কারণ? ওয়ান্ডারার্সের পিচের একটা বিশেষত্ব হচ্ছে, ম্যাচ যত এগোবে, তত বড় বড় ফাটল দেখা দিতে পারে। সেই ফাটলে পড়ে বল এলোমেলো বাঁক খেতে পারে। প্রথম দিনেই দু’এক বার ফাটলে বল পড়ে এ রকম বাঁক খেতে দেখা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এ রকম পিচে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা খুবই কঠিন হতো।
বিরাট কোহালি এবং তাঁর টিম ম্যানেজমেন্টের টস জিতে ব্যাটিংয়ের পিছনে আরও একটি কারণ আছে। প্রথম দু’টি টেস্টেই চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করতে গিয়ে তাঁরা পারেননি। ভারতীয় দল মনে করছে, এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজে চতুর্থ ইনিংসে টার্গেট যত ছোটই হোক, সেটা তাড়া করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারও কারও বিশ্বাস, কেপ টাউন এবং সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যদি চতুর্থ ইনিংসে একই রান তাড়া করতে হতো, তা হলে ফ্যাফ ডুপ্লেসি-দের পক্ষেও কাজ সহজ হতো না।
দিনের খেলা শেষে চেতেশ্বর পূজারা সাংবাদিক বৈঠকে বলে গেলেন, ‘‘এই পিচ আমার দেখা কঠিনতম। যত সময় যাবে, তত আরও খারাপ হতে থাকবে। বড় বড় ফাটল বেরিয়ে পড়বে। প্রথম দিনেই বল অনেকটা বাঁক খাচ্ছে। কয়েকটি বল ফাটলে পড়ে অভাবনীয় রকম বাঁক খেয়েছে। এ সব মাথায় রেখেই আমরা টস জিতে ব্যাটিং করেছি।’’ পূজারা বলছেন, ব্যাটিং নেওয়া সাহসি এবং সঠিক সিদ্ধান্ত। প্রতিপক্ষকে এই পিচে দেড়শো রানের মধ্যে রেখে দেওয়া সম্ভব বলেও তিনি মনে করছেন। আর সেটা পারলেই এই টেস্টে ভাল জায়গায় থাকা যাবে।
আরও পড়ুন: ‘নতুন বলের সুযোগ নিতে হবে ভুবিদের’
কী করলে কী হবে, সেটা সময়ই বলবে। চলতি সিরিজে বেশ কয়েক বার সুযোগ তৈরি করেও রাশ আলগা হয়ে যেতে দিয়েছে ভারতীয় দল। তারই খেসারত দিয়ে এখন কোহালিরা ০-২ পিছিয়ে সিরিজ খুইয়ে বসে আছেন। ওয়ান্ডারার্সের লং রুমে গিয়ে পাওয়া গেল দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি গ্রেম পোলক-কে। তিনিও বেশ অবাক হয়েছেন কোহালিদের টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেখে। বললেন, ‘‘ওয়ান্ডারার্সে ফাস্ট বোলারদের পিচ হয় আমি জানি। কিন্তু এতটা সবুজ পিচ আমি কখনও দেখিনি। ভারত খেলছেও পাঁচ বোলারে। আর সবই ফাস্ট বোলার। আমার মনে হয়েছিল, টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়াই ঠিক।’’ সুনীল গাওস্করের মতও একই রকম। হার্দিক পাণ্ড্য-কে নিয়ে পাঁচ বোলারে খেলছে বলে ভারতের উচিত ছিল ফিল্ডিং করা, মনে করছেন সানি।
কোহালির ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করে পোলক এর পর বললেন, ‘‘বিশ্বের সেরা দু’তিন জন ব্যাটসম্যানের মধ্যে ও এক জন। ওর সঙ্গে অন্যদের তফাত হচ্ছে, কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজের খেলা খেলতে পারে। বোলারকে মাথায় চড়তে দেয় না। রান করলেই তো শুধু হয় না, কী ভাবে করলাম সেটাও দেখতে হয়। ওখানেই কোহালি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে, আজও দেখিয়ে গেল।’’ টেস্টের ভাগ্য কী হবে বলে মনে হচ্ছে? ঠিক তখনই কোহালি আউট হয়ে গেলেন। গ্রেম পোলক বলে ওঠেন, ‘‘কোহালি আউট হল। দক্ষিণ আফ্রিকা নিশ্চয়ই লাফাচ্ছে। এই উইকেটটাই ওদের দরকার ছিল।’’ তার পরেই যোগ করেন, ‘‘ভারতীয় পেসাররাও ভাল বল করছে। ওয়ান্ডারার্সের এই উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য খুবই কঠিন পরীক্ষা। ভারতের বোলাররা যদি ভাল করতে পারে, কাজটা সহজ হবে না ডুপ্লেসিদের জন্যও। তখন আবার টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হতে পারে। ক্রিকেট খেলাটাই এত মজার, তাই না?’’
জোহানেসবার্গে রাহুল দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে টেস্ট জিতেছিল ভারত। সেই টেস্টেও টস জিতে ব্যাটিং নেন দ্রাবিড়। সেটাও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু টেস্ট জেতায় দ্রাবিড়ই সঠিক প্রমাণিত হন। জোহানেসবার্গে গত কাল রাত থেকে বজ্র-বিদ্যুৎ সহকারে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি সকালে থেমে যাওয়ার পরে সঠিক সময়েই খেলা শুরু হয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, টেস্টের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনেও বৃষ্টি হতে পারে। এমনকী বুধবার রাতেও হয়েছে। তবে জল নিষ্কাশনী ব্যবস্থা ভাল বলে ম্যাচ শুরু হতে বেশি সময় লাগবে না। যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে, শুধু সবুজ পিচ সামলালেই চলবে না। ব্যাটসম্যানদের লড়তে হবে জোহানেসবার্গের আবহাওয়ার সঙ্গেও।