উড়ে যাও পাখির মতো। পুণেতে প্রথম টেস্টের আগে অনুশীলনেও মরিয়া ক্যাপ্টেন কোহালি।-পিটিআই
মহারাষ্ট্র জুড়ে ১১ শহরে পুরভোট হয়ে গেল দু’দিন আগে। পুণেতেও ভোট ছিল সে দিনই। যাকে নাকি এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ‘ট্রেলার’ বলা হচ্ছে।
পশ্চিম ভারতের এই আইটি নগরীতে পা রাখার পর থেকে একাধিক বার কানে এসেছে যে, মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসের ভবিষ্যতের ইঙ্গিত নাকি পাওয়া যাবে এই নির্বাচনের ফল থেকেই। যা বেরবে বৃহস্পতিবার।
শহরের পুরভোটে যদি একটা ‘ট্রেলার’ দেখে থাকেন পুণের বাসিম্দারা, তা হলে আর একটা তারা দেখতে চলেছেন আগামী পাঁচ দিনে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্টে।
বিশ্বের এক নম্বর ও দু’নম্বর টেস্ট খেলিয়েদের যুদ্ধে কারা হাসবে শেষ হাসি? এই প্রশ্নের উত্তরের একটা আভাস পাওয়া যেতেই পারে এই পাঁচ দিনে।
মুম্বই-পুণে হাইওয়ের পাশে ৩৫ একরের ধূ ধূ প্রান্তর জুড়ে মাথা তুলে দাঁড়ানো এমসিএ স্টেডিয়ামের ভিতর ঢুকে বুধবার মাঠের মাঝখানের অংশের দিকে তাকাতে মনে হল পাশের হাইওয়ে থেকে কয়েক খণ্ড অংশ তুলে এনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ওখানে। যার নাম নাকি উইকেট। গোটা মাঠের সাদা-কালো ছবি তুললে শুধু সাদা আর ধূসর রং দু’টোই চোখে পড়ত।
পাশাপাশি আরও একজনের ছবিও তুলে রাখার মতো। তিনি এখানকার পিচ কিউরেটর পাণ্ডুরঙ্গ সালগাওকর। বাইশ গজের কথা জিজ্ঞেস করলেই যিনি এ দিন প্রায়ই মেজাজ হারাচ্ছিলেন।
হারাবেন নাই বা কেন? তিনি যে বানিয়েছিলেন এক রকম পিচ। শোনা যাচ্ছে, বোর্ডের চিফ কিউরেটর দলজিৎ সিংহ ও জোনাল কিউরেট ধীরজ পরসানা তাঁর সেই ঘাম-রক্ত ঝরানো ফসলের উপর দিয়ে নাকি বুলডোজার চালিয়ে দিয়েছেন। শুধুমাত্র ভারতীয় দলকে ‘টেলরমেড’ উইকেট ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। অনেকটা চোদ্দো মাস আগে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের মতো।
বিরাট কোহালি না ডেভিড ওয়ার্নার। প্রথম টেস্টে বিস্ফোরণ কার ব্যাটে?
নির্বাচনী উত্তাপের সঙ্গে এখানে প্রকৃতির মেজাজও বেশ গরম। দিনের বেলা যে ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়স তাপমাত্রা চড়ছে এখানে, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তাও বেশ অস্বাভাবিক বলে জানাচ্ছে স্থানীয় আবহাওয়া দফতর। আর আর্দ্রতার অভাব তো এই অঞ্চলের আবহাওয়ার চিরকালীন ব্যাপার। শুকনো ও চড়া এই গরমে দু’দিন ধরে উইকেটে এক ফোঁটা জল দেওয়া হয়নি বলে শোনা গেল। স্থানীয় ক্রিকেট মহলের খবর হল, তা বহিরাগত দুই কিউরেটরের নির্দেশে। সেই জন্যই ব্যাপক চটেছেন স্থানীয় কিউরেটর। সাধের উইকেটের বারোটা বাজিয়ে দিলে যা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ সাংবাদিকদের উইকেটের কথা বলতে গিয়ে যে দুটো শব্দ বললেন, তাতেই বোঝা যায় বাইশ গজের কী অবস্থা— ‘ইনক্রেডিবলি ড্রাই’। আর ভারত অধিনায়ক বলছেন, ‘‘এই সময় পুণের উইকেট তো লো অ্যান্ড স্লো হবেই। সবে গরমটা পড়তে শুরু করেছে। এই চড়া রোদে উইকেটের বাঁধন ধরে রাখা বেশ কঠিন। যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন থেকেই বল ঘুরতে শুরু করে, তা হলে অবাক হবেন না।’’
আরও পড়ুন:
ওয়ার্নের সেই অস্ট্রেলিয়া কোথায়, লায়নকে ৩০ উইকেট নিতে হবে
শুধু পিচ নয়, কোহালি নিজের অধিনায়কত্ব নিয়েও কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘১৮-২০ মাসে কি আর বোঝা যায় আমি কেমন করলাম? এটা বুঝতে আরও পাঁচ-সাত বছর সময় লাগবে। তখন আমি ভাবতে বসব, কী ভুল করেছি, তার থেকে কী কী শিক্ষা নিয়েছি বা নিতে পারতাম। সঙ্গে নিজের সাফল্যগুলো নিয়েও ভাবব।’’
দু’দিন আগে স্থানীয় কিউেরেটর সালগাওকর বলেছিলেন, ‘‘উইকেট বেশ শক্ত। বাউন্সও আছে। ব্যাটসম্যান, পেসার, স্পিনার সবার জন্যই কিছু না কিছু থাকবে।’’ অথচ তিনি এই কথা বলার দু’দিনের মধ্যেই দুই ক্যাপ্টেনের মুখে সম্পুর্ণ উল্টো কথা। এর পর যখন দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন থেকে বনবন করে বল ঘোরাতে শুরু করবেন স্পিনাররা, তখন সালগাওকর সাহেব অবসরের সিদ্ধান্ত নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না!
এই অবস্থায় তিন স্পিনারে যাওয়ার কথা ভাবাটাই স্বাভাবিক কোহালির পক্ষে। এই উইকেট দেখে অজি শিবিরেই যখন তিন স্পিনারের ভাবনা চলছে, তখন ভারতীয় শিবিরে সেই ভাবনায় বোধহয় এতক্ষণে সিলমোহরও পড়ে গিয়েছে।
কোহালি বনাম স্টার্ক
• কেরিয়ারে পাঁচটা টেস্টে মুখোমুখি। কোহালিকে এক বারের বেশি আউট করতে পারেননি স্টার্ক।
• পাঁচ টেস্টে কোহালির গড় ৬৭.৫০, রান ৫৪০, সেঞ্চুরি ২।
• পুণেতে বিরাটের চ্যালেঞ্জ স্টার্কের গতি ও রিভার্স সুইং। ঘণ্টায় ১৪৫ কিমি বেগে বল সুইং করাতে পারেন স্টার্ক।
ওয়ার্নার বনাম অশ্বিন
• দশ টেস্টে মুখোমুখি। ওয়ার্নারকে ছ’বার আউট করেছেন অশ্বিন।
• অশ্বিনের বিরুদ্ধে সাফল্য সে রকম নেই ওয়ার্নারের। দশ টেস্টে গড় ২৪.২৬।
• প্রথম দিন থেকেই বল ঘোরার সম্ভাবনা। বল পুরনো হওয়ার আগেই অশ্বিনের মুখে পড়তে পারেন ওয়ার্নার।
বুধবার প্র্যাকটিসে যে ভাবে জয়ন্ত যাদব ও কুলদীপ যাদবকে নেটে টানা বল করানো হল, তাতে অশ্বিন-জাডেজার সঙ্গে এই দু’জনের একজনকে খেলতে দেখা যেতেই পারে। সে ক্ষেত্রে উমেশ, ভুবনেশ্বর ও ইশান্তের মধ্যে একজনকে বসতে হবে হয়তো।
অস্ট্রেলীয় শিবিরে অবশ্য চলছে এক অন্য গবেষণা। এই উইকেটে রিভার্স সুইংকে কী ভাবে তাদের প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র বানানো যায়। গত বছর শ্রীলঙ্কা সফরে সেটা করেওছিলেন স্টার্ক। তিন টেস্টে ২৪টা উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তাতেও অবশ্য তাঁর দল সিরিজ জিততে পারেনি। কিন্তু স্টার্ক তাঁর নিজের কাজটা ঠিকমতোই করেছিলেন।
এ বারও স্টার্ক, হ্যাজলউডদের সেই রিভার্স সুইং অস্ত্রেই ভারতকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চান স্মিথ। বলছেন, ‘‘ভাল স্পিনের মতো ভাল রিভার্স সুইংটাও এই সিরিজে আমাদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হবে।’’ কোহালি অবশ্য নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। বলছেন, ‘‘ওদের ওপর বেশি ফোকাস করার সময় কোথায়? ওদের ভাল-মন্দগুলো জানা আছে, এটাই যথেষ্ট। এর বেশি আর কিছু দরকার নেই।’’
দেশের ২৫তম টেস্ট ভেনুতে একটা স্মরণীয় টেস্ট যুদ্ধ দেখা যাবে কি না, এটা যেমন একটা বড় প্রশ্ন, তেমন এই পাণ্ডববর্জিত প্রান্তে এই টেস্ট দেখার জন্য ক’জন ক্রিকেটপ্রেমী আসবেন, সেই প্রশ্নটা আরও বড়। আইপিএল-ওয়ান ডে মিলিটে ছোট ফর্ম্যাটের ২৯টা টানটান ম্যাচ দেখেছে এই স্টেডিয়াম। এ বার ৩০তমটা ম্যাড়মেড়ে হয়ে গেলে, সেটা নিশ্চয়ই টেস্ট ক্রিকেটের পক্ষে মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন হবে না। ‘ট্রেলার’ হিসেবে তো আরওই না।
আজ টিভিতে
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া
প্রথম টেস্ট, পুণে, সকাল ৯-৩০
স্টার স্পোর্টস ওয়ান