Sports News

ভারতীয় ফুটবলের মূলস্রোতে আবার পঞ্জাব

সে বারের সঙ্গে এ বছরের একাধিক মিল। জেসিটি-র সঙ্গে মিল পেলাম মিনার্ভারও। কী রকম? এক, দু’টি দলই পঞ্জাবের। দুই, দুই দলেরই অ্যাকাডেমি খুব শক্তিশালী। তিন, দুই দলই জাতীয় লিগ বা আই লিগ জিতল চার্চিলকে হারিয়ে।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ২১:৫২
Share:

আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর উচ্ছ্বাস। ছবি: এআইএফএফ।

আজকের মিনার্ভাকে দেখে বারে বারেই মনে পড়ে যাচ্ছিল জেসিটি-র কথা। উস্কে উঠছিল বছর কুড়ি আগের সেই সব স্মৃতি।

Advertisement

সেটা ১৯৯৬-৯৭-এর মরসুম। সেই যখন জাতীয় লিগ শুরু হয়েছিল। তখন ভারতীয় ফুটবলে রাজ করছে জেসিটি। পঞ্জাবের দল। ভাইচুং, বিজয়ন, চ্যাপম্যান, আনচেরিদের মতো তারকাদের নিয়ে তৈরি সেই দল সে বার শুরুতেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিল। শুরুটা ফাটাফাটি রকমের ভাল করলেও, ভারতীয় ফুটবলে তার পর দীর্ঘ দিন টিকে থাকলেও, আর কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি জেসিটি।

সে বারের সঙ্গে এ বছরের একাধিক মিল। জেসিটি-র সঙ্গে মিল পেলাম মিনার্ভারও। কী রকম? এক, দু’টি দলই পঞ্জাবের। দুই, দুই দলেরই অ্যাকাডেমি খুব শক্তিশালী। তিন, দুই দলই জাতীয় লিগ বা আই লিগ জিতল চার্চিলকে হারিয়ে। চার, সে বারও শেষ ম্যাচে নির্ধারিত হয়েছিল চ্যাম্পিয়নশিপ। ছয়, সে বারও চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে ছিল একাধিক দল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করেছিল জেসিটি। ঠিক যে ভাবে এ বার জিতল মিনার্ভা।

Advertisement

আরও পড়ুন
হতশ্রী রেফারিং, ভুল স্ট্র্যাটেজি, চারেই শেষ করল ইস্টবেঙ্গল

হেরেও শেষ আটে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি

লুধিয়ানায় তৈরি হয়েছিল ছোট্ট একটা অ্যাকাডেমি। সেটা ২০০৫। একটু একটু করে ব়ড় হয়ে ওঠা সেই অ্যাকাডেমিই ১৩ বছরের মাথায় আজ আই লিগ চ্যাম্পিয়ন। অ্যাকাডেমি থেকে ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ লিগে খেলা, সেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া— রাস্তাটা কিন্তু সহজ ছিল না মিনার্ভার জন্য।

বার বার উঠেছে ম্যাচ গড়াপেটার প্রসঙ্গ। সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ ক্লাবের মালিক, রঞ্জিত বজাজ। অভিযোগ গিয়েছে ফেডারেশনেও। কিন্তু, সব কিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাজিমাত পঞ্জাবের এই দলের। জেসিটি-র পর ভারতীয় ফুটবলের মূলস্রোতে ফের পঞ্জাবকে তুলে আনল মিনার্ভা। ২০১৭তে আইজলের পর এ বছর আবার নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল ভারতীয় ফুটবল। মিনার্ভা পঞ্জাব এফসি।

অন্য দিকে, ১৪ বছরের বনবাস কাটল না ইস্টবেঙ্গলেরও। চার নম্বরেই থামতে হল খালিদ জামিলের ছেলেদের। ঘরের মাঠে নেরোকা এফসিকে পেয়েও শেষ ম্যাচে সান্ত্বনা হিসেবে জয়টুকুও তুলে নিতে পারল না। জয় পেলে অন্তত দুই বা তিনের মধ্যে শেষ করতে পারত। কিন্তু, ১-১ গোলে ম্যাচ শেষ হওয়ায় সেই সুযোগ আর পেল না ইস্টবেঙ্গল।

আবার, কেরলের গরমে সমানে সমানে লড়াই দিয়েও জয় তুলে আনতে পারল না মোহনবাগান। যদিও প্রথমে গোল করে তারা এগিয়েই গিয়েছিল। পরে অবশ্য সমতায় ফেরে গোকুলাম। সেই ম্যাচও শেষ হয় ১-১ গোলে।

কত নম্বরে দল ম্যাচ জয় ড্র হার পক্ষে গোল বিপক্ষে গোল গোল পার্থক্য পয়েন্ট

১ মিনার্ভা ১৮ ১১ ২ ৫ ২৪ ১৬ ৮ ৩৫

২ নেরোকা ১৮ ৯ ৫ ৪ ২০ ১৩ ৭ ৩২

৩ মোহনবাগান ১৮ ৮ ৭ ৩ ২৮ ১৪ ১৪ ৩১

৪ ইস্টবেঙ্গল ১৮ ৮ ৭ ৩ ৩২ ১৯ ১৩ ৩১

৫ আইজল ১৮ ৬ ৬ ৬ ২১ ১৮ ৩ ২৪

৬ লাজং ১৮ ৬ ৪ ৮ ১৭ ২৫ -৮ ২২

৭ গোকুলাম ১৮ ৬ ৩ ৯ ১৭ ২৩ -৬ ২১

৮ চেন্নাই সিটি ১৮ ৪ ৭ ৭ ১৫ ২৪ -৯ ১৯

৯ চার্চিল ১৮ ৫ ২ ১১ ১৭ ২৮ -১১ ১৭

১০ অ্যারোজ ১৮ ৪ ৩ ১১ ১৩ ২৪ -১১ ১৫

কিন্তু সেই যে ১৫ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল মিনার্ভা, আই লিগ শেষে সেটাই থেকে গেল ইতিহাসে। উইলিয়াম ওপোকুর গোলটাই মিনার্ভার ইতিহাসে লেখা থাকবে বড় বড় হরফে। এই গোলেই তো লেখা ছিল আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ছাড়পত্র। বক্সের ডান দিক থেকে শট নিয়েছিলেন চেঞ্চো। কার্দোজো সেই বলের দখল নিতে পারেননি। ফিরতি বল বক্সের মধ্যে পেয়েও দখলে রাখতে পারেননি সাঙ্গওয়ান। সেই বল পেয়ে যান ওপোকু। সেই চলতি বলেই ওপোকুর শট চলে যায় গোলে। প্রতিপক্ষ অফ সাইডের দাবি করেছিল। কিন্তু, রেফারি তত ক্ষণে গোল দিয়ে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার মিনার্ভার ১ গোল ছাড়াও আরও দুই মাঠে হল মোট চারটি গোল। যেখানে একটি করে গোল এল নেরোকা (চিডি), গোকুলাম (কিসেকা), ইস্টবেঙ্গল (ডুডু), মোহনবাগানের (ডিকা) তরফে। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে পেরতে হত অনেক সমীকরণ। সব থেকে বড় জায়গা ছিল মিনার্ভার না জেতা। বাকি দলদের চ্যাম্পিয়ন হতে হলে নিজেদের জয় ছাড়াও মিনার্ভাকে পয়েন্ট নষ্ট করতে হত। যেটা হয়নি। প্রত্যাশা মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েই ভারতীয় ফুটবলে পঞ্জাবের ঝান্ডা উড়িয়ে গেল মিনার্ভা।

ভারতীয় ফুটবলে এক সময়ে দাপিয়ে বেড়ানো পঞ্জাব হারিয়ে গিয়েছিল। বাংলা চিরকালই ছিল ভারতীয় ফুটবলের শীর্ষে। এর পর গোয়া এসে দখল করে নেয় জায়গা। বিজয়নদের দক্ষিণ ভারতও হারিয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। তারাও ফিরছে ক্রমশ। বাংলা, গোয়ার ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে গোটা ভারতে আবারও ছড়িয়ে পড়ছে ফুটবল।

গত বছর আই লিগ জিতে সেই বার্তা দিয়ে দিয়েছিল আইজল এফসি। এ বার সেই পথেই হাঁটার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রা শুরু করল মিনার্ভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন