ধোনিদের বাসে সিন্ধু-বরণ

ছাদখোলা ডাবলডেকার বাসটায় চড়ে দু’হাজার এগারোর বিশ্বকাপ জেতার সেলিব্রেশন করেছিলেন ধোনি অ্যান্ড কোং। সোমবার সাতসকালে হায়দরাবাদের রাজীব গাঁধী বিমানবন্দরের ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যারাইভাল’ গেটে সেটাই সটান এনে ফেলা হল!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৯
Share:

হায়দরাবাদে কোচ গোপীচন্দের সঙ্গে সিন্ধু। সোমবার। ছবি: পিটিআই

ছাদখোলা ডাবলডেকার বাসটায় চড়ে দু’হাজার এগারোর বিশ্বকাপ জেতার সেলিব্রেশন করেছিলেন ধোনি অ্যান্ড কোং। সোমবার সাতসকালে হায়দরাবাদের রাজীব গাঁধী বিমানবন্দরের ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যারাইভাল’ গেটে সেটাই সটান এনে ফেলা হল! ততক্ষণে সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই, অন্ধ্রপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী আরও জনকয়েক মন্ত্রীটন্ত্রী সমেত। রিও থেকে সিন্ধু আর গোপীচন্দ নিজেদের শহরে পা রাখতেই যে গর্জনটা উঠল ভারতের বড় ক্রিকেট ম্যাচে বিরাট কোহালির নিখুঁত কভার ড্রাইভের পরে সেটা শুনতে এ দেশের ক্রীড়মহল অভ্যস্ত। বিমানবন্দরে মেয়েকে রিসিভ করতে আসা সিন্ধুর বাবা-মা রামান্না আর বিজয়ার চোখে তখন জল! অলিম্পিক্সে সিন্ধু-সভ্যতার প্রতিষ্ঠার আনন্দাশ্রু।

Advertisement

কাট টু গাচিবোলি স্টেডিয়াম। সকাল সকাল ঠাসা গ্যালারি দেখে মনে হবে কোনও গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচে নামছে জাতীয় দল। বদলে তেলেগু ঘরানার চিরাচরিত ‘দাপ্পু’ নাচ চলল মাঠের ভেতর। শয়ে-শয়ে স্থানীয় পোশাকে সুসজ্জিত লোকের গলায় ঝোলানো বিশাল ঢাকের বাদ্যি। আর গ্যালারিতে নাগাড়ে উঠছে ড্রাম-বিউগলের তীব্র শব্দব্রহ্ম। ঝাঁকে ঝাঁকে আসা স্কুলের বাচ্চাদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ড উড়ছে। যাতে লেখা— ‘পিভি সিন্ধু প্রাইড অব ইন্ডিয়া’। সঙ্গে উড়ছে অসংখ্য তেরঙ্গা।

ততক্ষণে গুরু-শিষ্যাকে ছাদখোলা ডাবলডেকারে দাঁড় করিয়ে গাচিবোলি স্টেডিয়ামমুখী কয়েক হাজার মানুষের শোভাযাত্রা হায়দরাবাদের প্রতিটা মোড়ে আটকে পড়ছে। সবাই যে রুপোলি কন্যাকে একবার স্বচক্ষে দেখতে চায়। শেষ পর্যন্ত অলিম্পিক্সের ইতিহাসে প্রথম রুপোজয়ী ভারতীয় মেয়ে যখন তাঁর কোচ সমেত স্টেডিয়ামে গণসংবর্ধনা নিতে পৌঁছলেন, একে একে পুরস্কারের ঘোষণার বন্যা বয়ে গেল।

Advertisement

সিন্ধুর রাজ্যের সরকার পাঁচ কোটি টাকা আর্থিক পুরস্কারের পাশাপাশি একুশ বছরের তরুণীকে দিচ্ছে এক হাজার স্কোয়্যার গজের জমি। তিনি যেখানে রোজ প্র্যাকটিস করেন, সেই গাচিবোলির গোপীচন্দ ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমির পাশে। যাতে ভবিষ্যতে নিজের বিলাসবহুল বাড়ি থেকে চট করে অনুশীলনে পৌঁছে যেতে পারেন। সিন্ধু রাজি থাকলে তাঁর জন্য তেলঙ্গানা সরকার বড় মাইনের সরকারি চাকরির বন্দোবস্তও রাখছে। বিজয়ওয়াড়ার মেয়ে বলে সিন্ধুকে এক কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা জানিয়ে দিল অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারও। তেলঙ্গানা সরকার আবার সিন্ধুর কারিগর গোপীকেও দিচ্ছে এক কোটি টাকা।

দেশের সর্বকালের অন্যতম ক্রীড়া আইকনের হাত থেকেও পুরস্কার পাচ্ছেন সিন্ধু। সচিন তেন্ডুলকর তুলে দেবেন বিএমডব্লিউয়ের চাবি। যে দামি বিদেশি গাড়িটি স্পনসর করেছেন সচিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথা হায়দরাবাদ ব্যাডমিন্টন সংস্থার প্রধান চামুণ্ডেশ্বরনাথ।

স্মরণীয় অভ্যর্থনা আর পুরস্কারে মুড়ে যাওয়া সিন্ধুর আবেগের গলা এ দিন প্রথম শোনা যায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে— ‘‘দেশে ফিরলে সব বয়সের এত অসংখ্য মানুষ আমাকে স্বাগত জানাবেন, ভাবতেই পারিনি। এঁরাই আজকের দিনটাকে আমার বানিয়ে তুললেন।’’ সঙ্গে তাঁর সরল স্বীকারোক্তি, ‘‘আমার বাবা-মার ত্যাগ, আমার নিজের কঠিন পরিশ্রম, সৌভাগ্যক্রমে গোপীস্যারের মতো অসাধারণ কোচ পাওয়া আর ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমার এই সাফল্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন