Didier Deschamps

দল সামলানোয় ব্যর্থ দেশঁ, চলছে ‘ঈশ্বরের’ প্রার্থনা

দীর্ঘদিন ধরে ফরাসি ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। দলটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। ভিতরের খবরও কিছু জানা আছে। তার ভিত্তিতে কয়েকটা কথা বলতে চাই।

Advertisement

দাভিদ লাব্রুনে

প্যারিস শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২১ ০৫:২৮
Share:

কাঠগড়ায়: গ্রিজ়ম্যানদের থেকে সেরাটা বার করতে পারেননি দেশঁ। ফাইল চিত্র

ইউরো থেকে বিদায় নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও ফরাসিবাসীর মনের মধ্যে যন্ত্রণাটা এখনও তীব্র ভাবে রয়েছে। তবে তার সঙ্গে জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্নও। কেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের মতো দলের কাছে হারতে হল? কোচ দিদিয়ে দেশঁর রণকৌশলে কি কোনও ঘাটতি থেকে গিয়েছিল? নাকি দলের মহাতারকাদের অহংবোধ সামলাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন আমাদের কোচ?

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে ফরাসি ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। দলটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। ভিতরের খবরও কিছু জানা আছে। তার ভিত্তিতে কয়েকটা কথা বলতে চাই। এ বারের ফ্রান্স দল আর ২০১৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের মধ্যে একটা বড় তফাত আছে। সেটা হল, দলের মধ্যে তারকাদের অহংবোধের টক্কর। কিলিয়ান এমবাপে, পল পোগবা, অলিভিয়ে জিহু, আতোঁয়া গ্রি়‌জ়ম্যান— সবাই তারকা। আর এই তারকাদের একসূত্রে বাঁধতে পারেনি দেশঁ। ফুটবলারদের নিজেদের মধ্যে, তাদের পরিবারের মধ্যে ছোট, ছোট অশান্তির চোরাস্রোত আমরা লক্ষ্য করেছিলাম। যার প্রভাব দেখা গিয়েছে খেলায়।

গোটা কয়েক উদাহরণ দিই। এক, এই দলে আগে ফ্রি-কিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে গ্রিজ়ম্যানের কথা ভাবা হত। কিন্তু দেশঁ এ বার এমবাপেকে ফ্রি-কিক নেওয়ার দায়িত্ব দেয়। অথচ নিজের আন্তর্জাতিক ফুটবল জীবনে একটা গোলও ফ্রি-কিক থেকে করতে
পারেনি এমবাপে।

Advertisement

দুই) ফুটবলারদের পরিবার-বন্ধুদের মধ্যে অশান্তি। সুইৎজ়ারল্যান্ড ম্যাচে গ্যালারিতে হাজির ছিল আমাদের লেফ্টব্যাক আদ্রিয়ঁ হাবিয়োর মা। ম্যাচের পরে হাবিয়োর মা গালিগালাজ করেন পোগবার বন্ধুদের। এমনকি, এমবাপে সম্পর্কেও অনেক কটুকথা বলা হয়। যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে ফরাসি প্রচারমাধ্যমে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, অশান্তির চোরাস্রোত কতটা গভীর ছিল।

তিন) এমবাপের তারকা সূলভ আচরণ নিয়েও প্রচুর কথা হচ্ছে। জিহু তো এর আগে সরাসরি অভিযোগ করেছিল, এমবাপে ঠিক মতো বল বাড়ায় না ওকে। সেই অশান্তি সামলে দেওয়ার চেষ্টা হলেও বোধ হয় খুব লাভ হয়নি। ২০১৮ সালের দলটায় ওসুমানে দেম্বেলে, বেঞ্জামিন মেন্দির মতো ফুটবলার ছিল। যাদের ঠান্ডা মাথা আর ভদ্র আচরণ দলটাকে একসূত্রে বাঁধতে সাহায্য করেছিল। এ বার দেম্বেলের চোট, মেন্দিকে রাখা হয়নি। মাঠ এবং মাঠের বাইরে ওদের অভাবটা টের পাওয়া গিয়েছে।

গোটা ইউরো জুড়ে ফরাসি দলটাকে ভীষণই ছন্নছাড়া লেগেছে। এমবাপে হয়তো একটা পেনাল্টি ফস্কে কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতেছে, কিন্তু ঘটনা হল দেশঁকেও কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। কোচের অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক কৌশল, ম্যান ম্যানেজমেন্টে ব্যর্থতা, ঠিক লোককে ঠিক দায়িত্ব না দেওয়া— এ সবই ব্যর্থতার এক একটা ধাপ বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

আমি আগেও লিখেছিলাম, দেশঁর অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক মনোভাব এই দলটার ক্ষতি করছে। দেখছি অনেকেই লিখছে, সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমরা তিন ব্যাকে খেলেছি। ছকটা ওপর ওপর দেখলে সে রকম মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। তিন মিডফিল্ডারের সঙ্গে দু’জন সাইড ব্যাক ওই লাইন আপে রেখেছিল দেশঁ। ডান-দিকে বেঞ্জামিন পাভা, বাঁ-দিকে আদ্রিয়োঁ হাবিয়ো। এই দুই সাইড ব্যাক কিন্তু রক্ষণেরই অঙ্গ। এই ৩-৫-২ ছকে সাধারণত সুইৎজ়ারল্যান্ড খেলে অভস্ত। হঠাৎ এই ছকে কেন গেল দেশঁ, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমাদের এখানে বলা হচ্ছে, ফ্রান্স কেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের রাস্তায় হাঁটবে? কেন বিশ্বকাপজয়ীরা আরও আক্রমণাত্মক খেলবে না?

এই পরিস্থিতিতে দিদিয়ে দেশঁর ভাগ্যে কী হবে? আপনি যদি ফরাসি ফুটবলপ্রেমীদের মনের কথা জানতে চান, তা হলে বলব, কেউ আর দেশঁকে কোচ হিসেবে চাইছে না। সবাই তাকিয়ে ‘ঈশ্বর’-এর দিকে। অর্থাৎ, জ়িনেদিন জ়িদান। ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা ফুটবলার। আপনাদের ভারতে সচিন তেন্ডুলকর যে রকম ক্রিকেটের ঈশ্বর, আমাদের কাছে জ়িদানও তাই। ফ্রান্সের মানুষ চায়, জ়িদান যেন কোচ হিসেবে দলটার দায়িত্ব নেয়।

কিন্তু সেটা খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব না-ও হতে পারে। কারণ, ফরাসি ফুটবল সংস্থার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশঁর সম্পর্ক খুবই ভাল। যে কারণে দল পরিচালনের ব্যাপারে কোচকে পুরো স্বাধীনতা দিয়ে রাখা হয়েছে। তাই দেশঁকে এখনই সরানো হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন