বর্ষায় ইডেনের মাঠ এখন এমনই। নিজস্ব চিত্র।
বাড়তি বৃষ্টি! আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুসারে অন্যবারের তুলনায় কলকাতায় এ বার হয়েছে অতিরিক্ত বৃষ্টি। ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’র সহজ পাঠ ইডেন গার্ডেন্সে ‘বৃষ্টি পড়ে, ঘাস বাড়ে’ হয়ে উঠছে। নন্দনকাননে এই বাড়তি বৃষ্টিই খলনায়ক হয়ে উঠে কাড়তে চলেছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন!
মাস খানেকও বাকি নেই। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতায় অনূর্ধ্ব-১৯ এই প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা। সূচি অনুসারে, প্রতিদিন ইডেন গার্ডেন্স ও সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দৈনিক দুটো ম্যাচ হওয়ার কথা। কিন্তু, বরুণদেবের কৃপায় এই প্রতিযোগিতাই হয়ে উঠছে অনিশ্চিত। বর্ষণসিক্ত ইডেনকে এখন যে খাটালের মতোই লাগছে!
গত ১৬ মে সিএবি সচিব অভিষেক ডালমিয়ার কাছে বোর্ডের ইমেলে ভারত, নেপাল ও আফগানিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নিয়ে এই প্রতিযোগিতা কলকাতায় হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। চতুর্থ দল হিসেবে খেলবে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাদেমি। ফরম্যাট অনুসারে প্রত্যেক দল একে অন্যের বিরুদ্ধে দুটো করে ম্যাচ খেলবে। ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে প্রতিযোগিতা চলার কথা ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ওদিনই ইডেনে সেরা দুই দল মুখোমুখি হবে ফাইনালে। আর যাদবপুর ক্যাম্পাসে চলবে তৃতীয় স্থানের ম্যাচ।
থকথকে কাদা ইডেনে। নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু, মধ্য-অগস্ট চলে এলেও ইডেন-যাদবপুরে উইকেট ও মাঠ তৈরির কাজে হাতই দেওয়া যায়নি!
শুধু বৃষ্টির ভ্রুকুটিই সঙ্গী নয়, ক্লাব ক্রিকেট দেরিতে শেষ হওয়াও সমস্যা বাড়িয়েছে। ইডেনে যেমন স্থানীয় ক্রিকেটের শেষ ম্যাচ হয়েছে ১৯ জুলাই। সল্টলেকের মাঠে হয়েছে ১৫জুলাই। সাধারণত জুনের মধ্যেই শেষ হয় ক্লাব ক্রিকেট। এ বার তা জুলাইয়ের প্রায় তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলেছে। পাল্লা দিয়ে অক্লান্ত বর্ষাও। মাঠ প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িতরা মনে করছেন, টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হয়ে রোদ উঠলে সুবিধা হত। কিন্তু, এখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল-বিকেলে বার তিনেক মিনিট পনেরোর বৃষ্টিও মুশকিলে ফেলছে। মাঠ শুকনো হচ্ছে না।
ম্যাচের সময় ইডেনে গোটা মাঠ মুড়ে ফেলা হয় সাদা কভারে। কিন্তু, অফসিজনে খোলাই থাকে উইকেট সহ মাঠ। কারণ, কভার দেওয়া থাকলে ঘাস জল-হাওয়া পাবে না। ঠিক ছিল, জুলাইয়ের শেষের দিকে ঘাস ছাঁটার কাজ শুরু হবে। তারপর, পর্যায়ক্রমে মাঠ তৈরি হবে। কিন্তু, বর্ষার ধারাবাহিকতায় ঘাস ক্রমবর্ধমান। মেশিনই চালানো যাচ্ছে না কোথাও কোথাও। প্রাথমিক ভাবে কয়েকদিন কড়া রোদ দরকার। তবেই একমাত্র সময়ের মধ্যে মাঠের হাল ফেরানোর প্রচেষ্টা চালানো সম্ভব।
ইডেনের বিখ্যাত আউটফিল্ডের দশা বর্ষায় এমনই। নিজস্ব চিত্র।
বাস্তবে এই মুহূর্তে সল্টলেকের মাঠের মতো ইডেনের অবস্থাও খুব খারাপ। ঘাস ছেঁটে তবে পিচের প্রস্তুতিতে হাত দিতে হবে। বাইশ গজকে খেলার উপযোগী করতে লাগবে অন্তত তিন সপ্তাহ।
এই পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা বেশ চাপের। বেঙ্গালুরুতে কিউরেটরদের দিন পনেরোর সেমিনার থেকে ফিরে ইডেনের কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “বুঝতে পারছি না কী ভাবে মাঠ তৈরি হবে। ক্লাব ক্রিকেট শেষ হওয়ার পর দুটো মাঠেই কাজ আরম্ভ হয়নি। সময়ের মধ্যে মাঠ খেলার অবস্থায় আনব কীভাবে, ভাবতেই পারছি না!” অসহায়ের মতোই শোনাল তাঁর গলা।
যা খবর, আর কয়েকদিন দেখা হবে। অপেক্ষা চলবে বৃষ্টি থামার, রোদ ওঠার। কিন্তু, যদি অপেক্ষাই সার হয়, যদি আবহাওয়া অনুকূল না হয়, তখন নিতেই হবে চরম সিদ্ধান্ত। বোর্ডকে জানিয়ে দিতেই হবে যে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন সম্ভব নয়, মাঠ তৈরি নয়। ইডেনের মাঠকর্মীদের কাছে বরুণদেবই হয়ে উঠছেন লর্ডসের জেমস অ্যান্ডারসন!
আরও পড়ুন: লর্ডসে কালো আকাশের নীচে বিধ্বস্ত ভারতীয় ব্যাটিং
আরও পড়ুন: সানির সঙ্কল্পকে উদাহরণ করতে বলছেন জাহির