সোমদেবের পর যুদ্ধ বাঁচিয়ে রাখল বৃষ্টি

দর্শকদের সঙ্গে এতটা একাত্ম হতে বোধহয় ভারতীয় টেনিস দলই পারে! জাতীয় দল মাঠে খেলছে আর সেই টিমের রিজার্ভ বেঞ্চ তেরঙা উড়িয়ে দর্শকদের আরও সমর্থনের আর্জি জানাচ্ছে। সাউন্ড সিস্টেমে বাজা ‘জয় হো’ থেকে শুরু করে ‘বদ্তমিজ দিল মানে না’ পর্যন্ত যে কোনও গানে জাতীয় দলের প্লেয়ার গ্যালারির তালে তাল দিয়ে কোর্টের পাশেই নাচছেএ রকম সব অভিনব ফ্রেম শুধু ডেভিস কাপের ভারতীয় দলের থেকেই পাওয়া যায়!

Advertisement

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
Share:

নায়ক-বরণ। বেঙ্গালুরুতে লিয়েন্ডারদের কাঁধে সোমদেব। ছবি: পিটিআই

দর্শকদের সঙ্গে এতটা একাত্ম হতে বোধহয় ভারতীয় টেনিস দলই পারে! জাতীয় দল মাঠে খেলছে আর সেই টিমের রিজার্ভ বেঞ্চ তেরঙা উড়িয়ে দর্শকদের আরও সমর্থনের আর্জি জানাচ্ছে। সাউন্ড সিস্টেমে বাজা ‘জয় হো’ থেকে শুরু করে ‘বদ্তমিজ দিল মানে না’ পর্যন্ত যে কোনও গানে জাতীয় দলের প্লেয়ার গ্যালারির তালে তাল দিয়ে কোর্টের পাশেই নাচছেএ রকম সব অভিনব ফ্রেম শুধু ডেভিস কাপের ভারতীয় দলের থেকেই পাওয়া যায়!

Advertisement

দর্শক-প্লেয়ারের মধ্যে সেই অনন্যসাধারণ একাত্মতার শক্তি আজ আরও বেশি করে পাওয়া গেল টিম ইন্ডিয়ার ডেভিস কাপের কুলীন সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার জন্য। মানে ওয়ার্ল্ড গ্রুপে ওঠার জন্য। পরিস্থিতিটা ভারতের জন্য বোধহয় তার ডেভিস কাপ ইতিহাসের কঠিনতম ছিল। কারণ বিশ্বের এক নম্বর জকোভিচ না থাকুন, তাঁর দেশ সার্বিয়াও টেনিসের দলগত বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে দুই। চার বছর আগের চ্যাম্পিয়ন, গত বারের ফাইনালিস্ট।

কিন্তু প্রথম দিনের ০-২-কে আজ শেষ দিনের প্রথম রিভার্স সিঙ্গলসে ভারত ২-২ করে ফেলায় এই টাইয়ে স্বদেশের পিছনে আধ পয়সাও বাজি না-লাগানো ভারতীয়ও বোধহয় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন জাতীয় টেনিস দলের অসাধ্যসাধনের স্বপ্ন। এমনই তার আকুলতা যে, কমেন্ট্রি বক্সে পর্যন্ত জল্পনা শুরু হয়ে গেল, সোমদেব দেববর্মনের তিন ঘণ্টা সাঁইত্রিশ মিনিটে বিপক্ষ দলের এক নম্বর প্লেয়ার দুসান লায়োভিচের বিরুদ্ধে অনবদ্য ফাইভ সেট (১-৬, ৬-৪, ৪-৬, ৬-৩, ৬-২) জয়ের পর নির্ণায়ক রাবারে অনভিজ্ঞ য়ুকি ভামব্রিকে না নামিয়ে পোড়খাওয়া রোহন বোপান্নাকে খেলানো উচিত ছিল কি না!

Advertisement

কিন্তু ডেভিস কাপের নয়া নিয়মে টাই এখন রিভার্স সিঙ্গলস পর্যন্ত জীবন্ত থাকলে, কোনও ‘লাইভ’ ম্যাচে প্রথম দিনের সিঙ্গলস প্লেয়ারকে পাল্টানো যায় না। একমাত্র যদি সেই প্লেয়ারকে মেডিক্যালি আনফিট প্রমাণ করা যায়, তা হলেই নির্দিষ্ট ম্যাচের এক ঘণ্টা আগে পর্যন্ত খেলোয়াড় বদল সম্ভব। কিন্তু সেই মেডিক্যালি আনফিট সার্টিফিকেট একমাত্র দেবেন ওই টাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন (আইটিএফ) কর্তৃক নিযুক্ত চিকিৎসক। অতএব...।

অতএব ভারতীয় টেনিসপ্রেমীদের জল্পনাই সার! সোমদেবও অত দুর্দান্ত একটা জয় পাওয়ার পরেও কতকটা মিনমিনে গলায় বলে যান, “এখনও আমরা টাই জিতিনি। আশা করব য়ুকি শেষ ম্যাচে জীবনের সেরা খেলাটা খেলবে। আর দর্শকরাও ঠিক আমার ম্যাচের মতোই য়ুকির জন্যও গলা ফাটাবেন। নিজের দেশে চূড়ান্ত লড়াইয়ে দর্শকও কিন্তু একটা বিরাট শক্তি হোম টিমের।” কিন্তু সোমদেবের বলাই সার। নিজের দেশকে ০-২ থেকে ২-২ করতে দেখার পরেও যে চূড়ান্ত ফলের আশায় না থেকে গ্যালারি ফাঁকা হয়ে যেতে পারে, সেই অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখাল কর্নাটক টেনিস স্টেডিয়াম। এতটাই য়ুকির উপর ‘আস্থা’ এখানে!

য়ুকি কিন্তু একেবারে পলায়ন করেননি। ফিলিপ ক্রাজিনোভিচের বিরুদ্ধে প্রথম সেটের শুরুতেই ০-৩ পিছিয়ে পড়লেও সার্বিয়ানকে পাল্টা একটা ব্রেক করে শেষমেশ ৩-৬ হারেন। তার পর তো দ্বিতীয় সেট যখন সম্মানজনক ৪-৪ অবস্থায়, প্রবল বৃষ্টি নেমে শুধু য়ুকির ভাগ্য নির্ণয়ই পিছিয়ে দিল তাই নয়, মহানাটকীয় এই টাইকেই কাল দুপুর বারোটা পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেল!

রাত সাড়ে এগারোটায় বৃষ্টি থামলেও আচমকা পরিস্থিতিটা একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে তখন ভারত টাই উত্তেজক জিতবে কি না-র বদলে প্রবল জল্পনা টাই সোমবারে গড়াবে কি না! বেকায়দায় পড়া সংগঠকেরা জার্মান ম্যাচ রেফারি সোয়েরেন ফ্রিমেল-কে প্রবল ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, কাল সকালে যদি ম্যাচের বাকিটুকু করা যায়। ম্যাচ রেফারি প্রথমে জানালেন, ডেভিস কাপের নিয়মমতো রাত বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। তার পর বিকল্প নিয়মের সন্ধান করবেন আইটিএফের গাইডলাইন বুকে। কিন্তু জকোভিচের দেশের ডেভিস কাপ দল ততক্ষণে বায়না ধরেছে, কাল সকালে তাদের ফেরার বিমানের টিকিট কনফার্মড। যে ভাবেই হোক আজই ম্যাচ শেষ হওয়া চাই।

কিন্তু কোর্টের বাইরের এই চাপের ম্যাচটায় ভারতের কাছে স্ট্রেট সেটে হারল সার্বিয়া! রাত সাড়ে এগারোটাতেই ম্যাচ রেফারি সরকারি ভাবে জানিয়ে দিলেন, সোমবার দুপুর বারোটায় নির্ণায়ক সিঙ্গলসের বাকিটুকু খেলা হবে। তাঁর বলার সময়ও কেএসএলটিএ-র হার্ডকোর্টে জমা জল সাফাই করার কাজ চলছে।

কী দাঁড়াল তা হলে? প্রথম দিন ০-২ পিছিয়ে যে টাই দ্বিতীয় দিনই হারার জোগাড় করেছিল ভারত, সেই টাইয়ের অন্তিম লগ্নেও তারা বেঁচে! এখনও!

ফাইনালে তুললেন ফেডেরার
সংবাদ সংস্থা • জেনিভা


জেনিভায় রজার ফেডেরার। ছবি: গেটি ইমেজেস

প্রায় দু’দশকের কেরিয়ারে শুধু ডেভিস কাপটাই যা হাতে তুলতে পারেননি রজার ফেডেরার। রবিবার সুইৎজারল্যান্ডকে ডেভিস কাপের ফাইনালে তুলে সেই লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগোলেন ১৭ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। ইতালির বিরুদ্ধে প্রথম দু’টি সিঙ্গলসে জেতেন ফেডেরার আর ওয়ারিঙ্কা। কিন্তু ডাবলসে বোলেলি-ফজনিনি জুটির কাছে ওয়ারিঙ্কা-মার্কো চিউডিনেল্লির হারায় বিপদে পড়ে সুইৎজারল্যান্ড। ফাইনালে যেতে হলে ফেডেরারকে জিততেই হত। ফাবিও ফজনিনির বিরুদ্ধে সেই কাজটাই করে দেখান সুইস মহাতারকা। ৬-২, ৬-৩, ৭-৬ (৪) জিতে সুইৎজারল্যান্ডকে ৩-১ এগিয়ে দেন। নভেম্বরে ফাইনালে লড়াই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন