বিলবাওয়ের মাঠে রাউল।-নিজস্ব চিত্র
দিয়েগো সিমিওনের বিশ্বস্ত কর্নেল ছিলেন এক সময়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ছাড়া সব ট্রফিই জিতেছেন স্প্যানিশ ফুটবলে। বছর দু’য়েক আগে তো আটলেটিকো মাদ্রিদকে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে বড় ভূমিকা ছিল স্প্যানিশ ফুটবলের অন্যতম এই সুপারস্টারের।
এ হেন রাউল গার্সিয়ার অল্পের জন্য বিয়ে খেতে আসা হয়নি কলকাতায়!
চারদিকে পাহাড় ঘেরা অনিন্দ্যসুন্দর একটা জায়গা। বিলবাও অ্যাকাডেমি এবং সিনিয়র-জুনিয়র টিমের ট্রেনিংগ্রাউন্ড শহর থেকে আধ ঘণ্টা দূরত্বে একটা ফাঁকা জায়গায়। অ্যাকাডেমির কম্পাউন্ডে দাঁড়িয়ে রুটিনমাফিক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে হঠাৎ করে নিজে থেকেই খবরটা দিলেন।
দোভাষী মারফত পরিচয়পর্বটা চলছিল। কলকাতার সাংবাদিক শোনার পর একমুখ হাসি নিয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘‘জানেন আপনাদের ওখানে আমার একবার যাওয়ার কথা ছিল।’’ আমাদের ওখানে মানে? আপনি কি ভারতের কথা বলছেন?
এর পরই এল চমকের পালা। দোভাষীর দরকার হল না। রাউলের কথাতেই পরিষ্কার হয়ে গেল শহরটার নাম— কালকুতা।
চেহারা ছ’ফুটিয়া। মিডফিল্ডার হিসেবে টাফ ফুটবল খেলার জন্য নামডাক আছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো-লিওনেল মেসির চ্যালেঞ্জ সামলেছেন ভাল ভাবেই। এবং তাঁদের অনেক সময়ই হার মানিয়েছেন। কিন্তু কেন কলকাতা যাওয়ার কথা ছিল বলতে গিয়ে বার বার হেসেই খুন হচ্ছিলেন। টাফ ফুটবলারের আড়ালে যে সারল্যটা লুকিয়ে ছিল, তা সরিয়ে অতিকষ্টে যে গল্পটা বার করা গেল, তা এ রকম—
রাউলের শ্যালক এক ভারতীয় মহিলার প্রেমে পড়েন। এবং স্বাভাবিক ভাবেই প্রেমপর্ব বিয়ের দিকে এগোয়। এবং সেই পাত্রী হল কলকাতারই মেয়ে। গত অগস্টে বিয়ে ছিল কলকাতায়। স্বপরিবার সেখানে যাওয়ার কথা ছিল বর্তমান অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মিডফিল্ডারের। কিন্তু যাওয়া হয়নি। স্ত্রী ইনেস স্যাঞ্চেজ অবশ্য গিয়েছিলেন। রাউলের না যাওয়ার কারণটা জানা গেল। এও জানা গেল সেই শ্যালক এবং তাঁর স্ত্রী এখন চলে গিয়েছেন শিকাগোয়। কিন্তু দু’টো তথ্য কিছুতেই স্মৃতি ঘাঁটাঘাঁটি করে মনে করতে পারলেন না রাউল। কলকাতায় কোথায় বিয়েটা ছিল আর পাত্রী বাঙালি কি না?
‘‘যাওয়ার অবশ্য খুব ইচ্ছা ছিল আমার, জানেন,’’ স্প্যানিশে বলে যাচ্ছিলেন রাউল। দোভাষী মারফত তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম যা জানা গেল— ‘‘অগস্টে আমাদের প্রি-সিজন প্র্যাকটিস শুরু হয়ে যায়। আমার খুব ইচ্ছা ছিল কলকাতায় বিয়েটা দেখতে যাব। কিন্তু প্র্যাকটিস সিজনটা মিস করতে চাইনি। তবে আমার স্ত্রী গিয়েছিল আর অনেক ছবি এবং ভিডিও সিডি নিয়ে এসেছে।’’
গত কাল ওসাসুনার বিরুদ্ধে পিছিয়ে থাকার পর রাউলের গোলেই ঘরের মাঠে ১-১ করে পয়েন্ট তুলে নিয়েছে বিলবাও। তাই হয়তো মেজাজটা খুশ ছিল। খবরটা দেওয়ার পর আরও বলে গেলেন, ‘‘কলকাতার ছবি দেখলাম আর বিয়ের ভিডিও। আমার স্ত্রীর কাছে অনেক গল্পও শুনেছি কলকাতার। সব দেখে শুনে কিন্তু আপনাদের শহরটা খুব ভাল লেগেছে আমার। কোনও দিন যদি সুযোগ আসে, একবার ঘুরে আসব কলকাতা থেকে।’’ আইএসএলের নাম শুনেছেন? কখনও কি কলকাতা টিমের হয়ে খেলার ইচ্ছা আছে? তা হলে তো দুটো কাজ একসঙ্গে হয়ে যেত? রাউল হেসে এড়িয়ে গেলেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
স্প্যানিশ ফুটবলে অনেকে তাঁকে ‘সাইলেন্ট অ্যাসাসিন’ বলেও ডাকে। প্রচার বিমুখ। অনেক বারই রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে এসে ম্যাচ বার করে নিয়ে গিয়েছেন। জাভি, ফাব্রেগাস, সিলভাদের জন্য স্পেনের জাতীয় দলে বিশেষ সুযোগ পাননি। কিন্তু নিজেকে সব সময় ক্লাবের নির্ভরযোগ্য অস্ত্র করে তুলেছেন। তবে পাশাপাশি সত্যি কথাটা বলতে আদৌ ইতস্তত করেন না। যেমন, লা লিগায় কি এখন শুধু বিগ থ্রি-র দাপট? বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ আর আপনার পুরনো ক্লাব আটলেটিকো মাদ্রিদ ছাড়়া সত্যিই কি আর কারও জেতার সম্ভাবনা আছে? রাউল পরিষ্কার বলে দিলেন, ‘‘সে রকম নেই। ওরা অনেক এগিয়ে। তবে আমরা আমাদের এই টিমটা নিয়ে যে রকম পারফর্ম করছি, তাতে সত্যিই গর্বিত।’’
সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে কিন্তু আরও একটা কথা বলছেন রাউল।
ভবিষ্যতে কোনও দিন হয়তো সত্যিই তাঁকে কলকাতার রাস্তায় হাঁটতে দেখা যেতে পারে। তা, সে কোনও ক্লাবের জার্সি গায়ে থাকুক বা না থাকুক।