শাস্ত্রীয় স্মৃতিচারণ

‘জানতাম ‘টাইগার লাল’ আছে, হার মানবে না’

ভারতীয় দলের প্রধান কোচ ক্রিকেট জীবনে অরুণ লালের প্রতিপক্ষ হিসেবে মুম্বইয়ের হয়ে অনেক ম্যাচ খেলেছেন। হাড্ডাহাড্ডি অনেক লড়াই দেখেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪১
Share:

প্রশংসা: প্রাক্তন সতীর্থ অরুণ লালকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি শাস্ত্রীর।

বাংলার ক্রিকেটে তাঁর অসামান্য অবদান কারও অজানা নয়। এ বার অরুণ লালের জন্য সর্বোচ্চ স্বীকৃতি এবং প্রশংসা নিয়ে হাজির হচ্ছেন তাঁর এক প্রাক্তন সতীর্থ এবং কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর নাম রবি শাস্ত্রী। ক্রিকেট মাঠে বহু ম্যাচ জেতানো এবং ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলা ছাড়াও জীবনের লড়াইয়েও জয়ী হয়েছেন অরুণ লাল। ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মাঠে এবং মাঠের বাইরে অরুণের ইস্পাতকঠিন মানসিকতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শাস্ত্রী বলছেন, ‘‘অরুণ লাল সম্পর্কে বলতে গেলে আমার একটাই সম্বোধন মাথায় আসে— ‘টাইগার লাল’!

Advertisement

ভারতীয় দলের প্রধান কোচ ক্রিকেট জীবনে অরুণ লালের প্রতিপক্ষ হিসেবে মুম্বইয়ের হয়ে অনেক ম্যাচ খেলেছেন। হাড্ডাহাড্ডি অনেক লড়াই দেখেছেন। পাশাপাশি, অবসরের পরে দীর্ঘ দিন ধারাভাষ্যকার হিসেবে অরুণের সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করেছেন।

শাস্ত্রী বলে দিচ্ছেন, ‘‘আশির দশকে বাংলা বনাম মুম্বই মানে আমরা জানতাম, ওই লোকটার উইকেটটা তুলতে হবে। না হলে একা ম্যাচ বের করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।’’ বাংলার ক্রিকেটে মেরুদণ্ড যোগ করেছিলেন অরুণ বলে মনে করেন শাস্ত্রী। বলে দিচ্ছেন, ‘‘বাংলা এবং পূর্বাঞ্চলকে ঘরোয়া ক্রিকেটে শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল অরুণ লাল। ওর আমলেই দল হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলতে শুরু করে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখাতে শুরু করে বাংলা।’’

Advertisement

সেই সময়ে বাংলার ক্রিকেটে দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল ভিন রাজ্যের ক্রিকেটারদের খেলার জন্য। সেই দরজা দিয়ে অনেক ক্রিকেটারই বাংলায় এসেছিলেন। কিন্তু অরুণ লাল এবং অশোক মলহোত্রের মতো কেউ পাকাপাকি ভাবে এখানকার বাসিন্দা হয়ে যাননি। তাঁদের দু’জনের বাইরে আর কেউ বাংলার ক্রিকেট প্রেমীদের মনও এ ভাবে জয় করে নিতে পারেননি। শাস্ত্রী বলছেন, ‘‘অরুণ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিত বাংলাকে। আর সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া মানে আক্ষরিক অর্থেই তাই। ওপেন করতে আসত নিজে। অধিনায়ক হিসেবে যেটা করতে বলত, সবার আগে নিজেকে করে দেখাতে হতো। এবং, বরাবর নিজে ব্যাট হাতে নতুন বলের সামনে নেমে উদাহরণ তৈরি করে গিয়েছে। আমরা ধরে নিতাম, অরুণ আছে মানে বাংলা সহজে হার মানবে না।’’

আশির দশকে শাস্ত্রীর মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে বারবারই টক্কর হয়েছে বাংলার। কখনও রঞ্জি ট্রফিতে, কখনও আঞ্চলিক ম্যাচে। শাস্ত্রীর যেমন মনে পড়ছে ১৯৮৬-র অক্টোবরে সেই দলীপ ট্রফির সেমিফাইনাল। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর সর্বোচ্চ রান ২৮৭ করেছিলেন অরুণ। মূলত অধিনায়কের একক প্রচেষ্টাতেই পূর্বাঞ্চল তুলেছিল ৫৬১। তার পরেও পূর্বাঞ্চল ম্যাচ হেরে যায়। পশ্চিমাঞ্চলকে জিতিয়ে দেয় সুনীল গাওস্কর এবং রবি শাস্ত্রীর জুটি। গাওস্কর সেই ম্যাচে মিডল-অর্ডারে নেমে ৯২ করেন। সাত নম্বরে নামা শাস্ত্রী ১৭৬ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম ইনিংসের ফলাফলে পশ্চিমাঞ্চলকে জিতিয়ে দেন। ‘‘অরুণ যে কত বার একা এ ভাবে লড়াই করে গিয়েছে, বলে শেষ করা যাবে না,’’ সশ্রদ্ধ ভাবে বলে ফেলছেন শাস্ত্রী। যিনি বিশ্বাস করেন, আশির দশকে সেই সময়টায় ঘরোয়া ক্রিকেট ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মতোই কঠিন মঞ্চ। ‘‘তখন জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাও সবাই খেলত। রঞ্জি ট্রফিতে রাজ্য বনাম রাজ্য বা আঞ্চলিক ম্যাচেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকত তুঙ্গে,’’ মনে পড়ছে তাঁর।

আশির দশকে বাংলার ক্রিকেট নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে শাস্ত্রী বলে ফেলছেন, ‘‘আমাদের সময়ে চারটে স্তম্ভ ছিল বাংলার ক্রিকেটে। অরুণ লাল, অশোক মলহোত্র, দিলীপ দোশী এবং সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যাটিংয়ে ছিল অরুণ আর অশোক। বোলার হিসেবে সব চেয়ে চিন্তায় রাখত দিলীপ দোশী। এমন এক জন স্পিনার, যাকে সুনীল গাওস্কর পর্যন্ত অধিনায়ক হিসেবে ভারতীয় দলের জন্য বেছেছিল।’’ যোগ করছেন, ‘‘সম্বরণ সারাক্ষণ কথা বলে যেত উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে। ব্যাট করার সময় আমরাও অনেকে ভাবতাম, এ ব্যাটা থামবে কখন? খুবই লড়াকু ক্রিকেটার ছিল সম্বরণ। নেতৃত্বও দিয়েছে সাহসিকতার সঙ্গে। কিন্তু সবার উপরে ছিল এক জন— টাইগার লাল! যেমন ক্রিকেট মাঠে অদম্য মানসিকতা দেখিয়েছে, তেমনই হার মানেনি জীবনের লড়াইয়েও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন