ইনদওরে চার নম্বরে ব্যাট করতে এসে কামাল হার্দিক পাণ্ড্যর। ৭২ বলে ৭৮ করলেন। ছবি: পিটিআই
যোগিন্দর শর্মার সেই ঐতিহাসিক শেষ ওভার দেখার সময় নাকি ভাই টেনশনে টিভির সামনে থেকে উঠে গিয়েছিল। ভারত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পরে টানা আধ ঘণ্টা নেচেছিল ১৩ বছরের হার্দিক। এক সাক্ষাৎকারে এমনই জানিয়েছিলেন তাঁর দাদা ক্রুনাল।
সেই সময় যে ছেলেটি পড়ত স্কুলে, তার উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য বহু বার তাঁকে স্কুলের ক্রিকেট টিম থেকে বা ক্লাব টিম থেকে বার করে দেওয়া হত, সেই হার্দিকই এখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের ভরসা। রবিবার দলের দুই ওপেনার আউট হয়ে যাওয়ার পরে চার নম্বরে হার্দিককে নামতে দেখে অনেকে অবাক হন ঠিকই। কিন্তু এই মাস্টারস্ট্রোকটা আসলে ছিল ড্রেসিংরুমে থাকা কোচ রবি শাস্ত্রীর। বিরাট কোহালি নিজেই তা জানান ম্যাচের পরে। বলেন, ‘‘রবি ভাই হার্দিককে আগে নামতে বলেন। ও স্পিনারদের তুলে তুলে মারতে পারে ভাল, সেই জন্যই। ওই সময় ও ররকমই একজন ব্যাটসম্যান দরকার ছিল।’’ আর হার্দিক নিজে ওই সময়ের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমার ওই সময় বিশেষ কিছু মনে হয়নি। আমি কোনও কাজই বেশি ভেবে করি না। আমাকে যখন বলা হল চার নম্বরে নামতে, তখন খুশিই হই। কারণ, এটা আমার কাছে একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। আর এই প্রথম এতগুলো বল খেলার সুযোগ পাব।’’
ম্যাচের নায়ক যখন সাংবাদিকদের এই কথাগুলো বলছিলেন, তখন হোলকার স্টেডিয়ামের মিডিয়া কনফারেন্স রুমের বাইরে অপেক্ষা করে আছেন একঝাঁক হার্দিক ভক্ত। বেশিরভাগই মহিলা। হার্দিক সেখান থেকে বেরোতেই প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন সকলে মিলে। আর হার্দিকক নিজেও অকাতরে বিলিয়ে গেলেন সই আর সেলফি। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে এই ভক্তদের সমুদ্রের মধ্যে থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। রবিবারের ইনিংসের পরে তাঁর জনপ্রিয়তার পারদ এখন এ রকমই উচ্চতায়।
বিরাট কোহালি ও কেদার যাদব প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ার পরে যখন তাঁর সঙ্গে মণীশ পাণ্ডে যোগ দেন, তখন কি চাপে পড়ে গিয়েছিলেন? মণীশের সময়টা যে ভাল যাচ্ছে না। তবে হার্দিক জানিয়ে দিলেন, কোনও চাপ নেননি। বলেন, ‘‘না, চাপ থাকবে কেন? বল ও রানের মধ্যে এমন কিছু বিশাল পার্থক্যও ছিল না আর আমাদের পরের মাহিভাইয়ের মতো ব্যাটসম্যানও ছিল। তাই চাপ নেওয়ার কোনও কারণ ছিল না। আমার লক্ষ্য ছিল স্পিনারদের মারব। সেটাই করেছি।’’
এইরকম একটা ইনিংসের পর যে তাঁর উপর প্রত্যাশার চাপ আরও বাড়বে, তা খুব ভাল করেই জানেন সুরতের এই তরুণ। সাংবাদিক বৈঠকে কথাগুলো বলার সময় বিন্দুমাত্র উত্তেজনা নেই, কোনও উচ্ছ্বাসও নেই তাঁর মধ্যে। প্রত্যাশার কথা শুনতেই বললেন, ‘‘সে বাড়তেই পারে। কিন্তু আমি ও সব নিয়ে ভাবি না। এটা তো আর আমার হাতে নেই। যেখানে ফোকাস করতে পারি, সেখানেই করতে হবে আমাকে। সেটা হল আমার ক্রিকেট। দলের সবার সাহায্য পাই। সঙ্গে আমার আত্মবিশ্বাস। এগুলো নিয়েই এগোতে হবে আমাকে।’’
তবে পরের বার থেকে কাজ শেষ করেই ফিরতে চান তিনি। ম্যাচসেরার পুরস্কার নেওয়ার সময় বললেন, ‘‘এবার থেকে কাজ শেষ করে আসতে হবে আমাকে।’’ ঐতিহাসিক জয়ের পরে এ তাঁর নতুন সংকল্প।