নজরে: ছোটবেলার শিক্ষা কাজে লাগাচ্ছেন ঋদ্ধিমান। ফাইল চিত্র
ঋদ্ধিমান সাহার অভিষেক টেস্ট?
উইকেটকিপার হিসেবে খেলেনইনি। ২০১০ ফেব্রুয়ারি। নাগপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেই টেস্টে কিপিং করেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তখনও তিনিই অধিনায়ক। ঋদ্ধি খেলেছিলেন শেষ মুহূর্তে চোট পাওয়া রোহিত শর্মার জায়গায় বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে।
কে জানত, তিনিই টেস্টে ধোনির উত্তরসূরিই শুধুই হয়ে উঠবেন না, বাংলা থেকে এসে বিশ্বের সেরা উইকেটকিপারের মুকুটও ছিনিয়ে নেবেন। কোনও অতিরঞ্জন নয়, স্বয়ং বিরাট কোহালি কলম্বোয় ম্যাচ জেতার পরে পুরস্কার বিতরণীতে এসে বলে গিয়েছেন, ‘‘ঋদ্ধিই এখন এই ফর্ম্যাটে সেরা কিপার।’’ রবি শাস্ত্রী আনন্দবাজার-কে বলেছেন, এ রকম পিচে এত ভাল কিপিং তিনি কখনও দেখেননি। বলেছেন, ঋদ্ধিকে দেখে বব টেলরকে মনে পড়ে তাঁর।
তাঁকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করায় বাংলা তথা ভারতের উইকেটকিপার বলে গেলেন, ‘‘আমি কখনও সে রকম ভাবে ভাবিনি যে, আমাকে বিশ্বের সেরা উইকেটকিপার হতে হবে। ছেলেবেলা থেকে যেটা শিখে এসেছি, সেটাকেই সঠিক ভাবে করে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’’
কলম্বো টেস্টে তাঁকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ দেওয়া হবে কি না, এমন কথাও উঠেছিল বলে শোনা গেল। ম্যাচের সেরা বাছেন ধারাভাষ্যকারেরা। কেউ কেউ বলেছিলেন, এমন উইকেটে ঋদ্ধি যে রকম কিপিং করেছেন, তাঁরই সেরার পুরস্কার প্রাপ্য। ব্যাটেও তিনি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্র জাডেজাকে ম্যাচের সেরা বেছে নেওয়া হয়। কেউ কেউ তখন জানতে চান, কিপিংয়ে বিশেষ দক্ষতা দেখানোর জন্য ঋদ্ধিকে আলাদা ভাবে কোনও পুরস্কার দেওয়া যায় কি না।
আরও পড়ুন:শেষ টেস্টে জাডেজার বদলি হওয়ার দৌড়ে অক্ষর
শুধু দস্তানা হাতে পরিণত হওয়াই নয়, মিডিয়ার সঙ্গে সোমবার কথা বলতে আসা ঋদ্ধিকে দেখে মনে হচ্ছিল, মাইক হাতেও তিনি অনেক পাকাপোক্ত হয়ে উঠেছেন। না হলে পরিষ্কার বলে দেবেন কী ভাবে যে, ‘‘রঞ্জি ট্রফি বা ঘরোয়া ক্রিকেটেও অনেক ভাল ক্যাচ নিয়েছি। কিন্তু সেই সব ম্যাচ সম্প্রচারিত হয় না। তাই কেউ সেগুলো দেখতে পায়নি।’’
অভিষেক টেস্টে ফেরা যাক। যেখানে ঋদ্ধি ছিলেন শুধুই ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসে ধোনির পরে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় বলে ডেল স্টেইনের শিকার হন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর সংগ্রামী ৩৬ রানের ইনিংস দেখে অনেকের মনে হয়েছিল, খেলার সুযোগ পান বা না পান, এ ছেলের মধ্যে প্রত্যয় আছে।
সেটা ছিল ২০১০। এখন ২০১৭। সাত বছর লেগে গেলেও ঋদ্ধি কিন্তু ঠিক লেগেপড়ে থেকেছেন। মধ্যবর্তী সময়ে হুগলির পার দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। ধোনি অবসর নেওয়ার পরে তাঁকেই যোগ্য বিকল্প হিসেবে বাছা হয়েছে টেস্টে। ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে তিনি মাত্র দু’টি টেস্ট খেলেছিলেন। ধোনি অবসর নেওয়ার পরেই নিয়মিত ভাবে টেস্টের দরজা খুলে যায়।
অথচ, ধোনি কখনও প্রাক্তন হননি ঋদ্ধির কাছে, বরং ধোনি তাঁর কাছে উদাহরণ। এ দিনও টিম হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাঁর সাফ বক্তব্য, ‘‘স্লেজিং করতেই হবে এমন কোনও ব্যাপার নেই। ধোনি কখনও স্লেজিং করেনি।’’ যদিও এর পরেই যোগ করলেন যে, একটু-আধটু কথাবার্তা চলতেই থাকে। যেমন? পিচটা ভাল নেই ভাই। বা তুমি তো খুব খারাপ শট খেলছ। এই ধরনের কথাবার্তা তিনিও বলেন।
কুশল মেন্ডিসের ক্যাচকে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট বলে ব্যাখ্যা করেছেন তাঁদের দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। কঠিন সেই ক্যাচ কী ভাবে নিলেন, তা জিজ্ঞেস করায় ঋদ্ধি বলে চলেন, ‘‘প্রথম যখন ব্যাটের ভিতরের দিকের কাণায় বলটা লাগে, আমি ভেবেছিলাম বোল্ড হয়ে যাবে। কিন্তু ওর প্যাডে লেগে বলটা উঁচু হয়ে উইকেটের পিছনে এল। আমি ঝাঁপানোর সময়টা পেয়েছিলাম কারণ প্যাডে লাগার পরে মন্থর হয়ে গিয়েছিল বলটা। এ রকম ক্যাচ নিতে পারলে নিজের তো বটেই, দলের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।’’
ভারতীয় দল এখন পরিসংখ্যানের দিক থেকে প্রতি দিনই শিরোনাম পাচ্ছে। কখনও বিরাট কোহালির সেঞ্চুরি সংখ্যা। কখনও অশ্বিনের শিকার সংখ্যার মাইলস্টোন। কখনও শিখর ধবনের স্ট্রাইক রেট। কিন্তু কলম্বোর টেস্টে একটি পরিসংখ্যান নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে ক্রিকেট দুনিয়ায়। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে এমন খারাপ হতে থাকা উইকেটে একটিও রান বাই দেননি ঋদ্ধি। প্রথম ইনিংসে দিয়েছিলেন ৪ বাই রান। যা অবিশ্বাস্য বলে মনে করছেন পণ্ডিতরা। সুপারম্যান ঋদ্ধিমান— নামটা সাধে কি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে?