চলতি বছরটা কি রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জন্য এর চেয়ে ভাল যেতে পারত? বোধহয় না।
টেস্টে প্রায় পঞ্চাশ উইকেট, সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি রান, ১৯টা টি-টোয়েন্টিতে ২৭ উইকেট, একাধিক ম্যাচের সেরার পুরস্কার, আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর— ২০১৬ সালটা ভারতীয় অফস্পিনার চিরদিন মনে রেখে দেবেন। এর পরেও বছর শেষে নতুন সম্মান অপেক্ষা করে ছিল তাঁর জন্য। একটা নয়, একজোড়া।
আইসিসি বার্ষিক পুরস্কারের দুটো সেরা সম্মানই ছিনিয়ে নিলেন অশ্বিন। বর্ষসেরা ক্রিকেটার এবং বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার। আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়ে স্যর গারফিল্ড সোবার্স ট্রফি পেলেন অশ্বিন। যে ট্রফি তাঁর আগে উঠেছে মাত্র দু’জন ভারতীয়র হাতে— রাহুল দ্রাবিড় এবং সচিন তেন্ডুলকর। ২০০৪ সালে দ্রাবিড়ের পরে অশ্বিনই একমাত্র ভারতীয় যিনি একসঙ্গে দুটো পুরস্কার পেলেন।
যার রেশে কিছুটা দার্শনিক অশ্বিন টুইট করেছেন, ‘‘এখন পর্যন্ত আমার যে যাত্রা, তাতে মোটেই গোলাপের পাপড়ি বেছানো রাস্তা পাইনি। কিন্তু আমার রাস্তায় ওই কাঁটাগুলো যদি না থাকত, তা হলে আজ আমি যেমন মানুষ হতে পেরেছি, তার অর্ধেকও হতে পারতাম না।’’
পুরস্কার গ্রহণের সরকারি প্রতিক্রিয়ায় অবশ্য অতটা আবেগ প্রকাশ করেননি অশ্বিন। ‘‘এই বিরাট সম্মান আমার কাছে ভীষণ আনন্দের। সচিন, দ্রাবিড়রা যে পুরস্কার পেয়েছে, সেই রাস্তায় হাঁটতে পেরে দারুণ লাগছে। তার উপর টেস্ট বর্ষসেরা, এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?’’ পুরস্কার পেয়ে বলেছেন অশ্বিন। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘এই দুর্দান্ত কৃতিত্বের জন্য অনেক জনকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। গত বছরদুয়েক দারুণ গিয়েছে, কিন্তু এ বছরটা আরও বেশি স্পেশ্যাল ছিল। আমি যে ভাবে বল করেছি, ব্যাট করেছি, সত্যিই মনে রাখব। আমার কাছে অবশ্য তার চেয়ে বেশি জরুরি হল এই সাফল্যের পিছনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা।’’
কারা রয়েছেন অশ্বিনের দুর্দান্ত এই বছরটার নেপথ্যে? তাঁর কথায়, ‘‘এই পুরস্কারটা আমার পরিবারকে উৎসর্গ করতে চাই। আইসিসি আর আমার সতীর্থদের ধন্যবাদ। সাপোর্ট স্টাফের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অবসরের পরে টিমের ভেতর খুব বড় একটা ভাঙাগড়া চলছে। টেস্ট অধিনায়কত্ব একজন তরুণের হাতে। আমরা সঠিক রাস্তায় যাচ্ছি। এই দলে এখন দারুণ সব নতুন ছেলে আছে।’’
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬— এই এক বছরের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে আইসিসির বর্ষসেরারা নির্বাচিত হয়েছেন। যে সময় তিরিশ বছরের অফস্পিনার ৮টা টেস্ট খেলে ৪৮ উইকেট নিয়েছেন। পাশাপাশি ৩৩৬ রানও করেছেন। এ বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং অন্যান্য ম্যাচ মিলিয়ে ১৯টা টি-টোয়েন্টি খেলেছেন অশ্বিন। পেয়েছেন ২৭টা উইকেট।
‘‘অশ্বিনের জন্য এই সময়টা দারুণ স্মরণীয়। ওর ধারাবাহিক অলরাউন্ড ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স র্যাঙ্কিংয়ে ওকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম সেরা স্পিনার বলা হচ্ছে অশ্বিনকে। সেটা ওর প্রাপ্য,’’ এ দিন বলেছেন আইসিসি চিফ এগজিকিউটিভ ডেভিড রিচার্ডসন। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার আর বর্ষসেরা ক্রিকেটার, দুটো পুরস্কারই একসঙ্গে জেতা দারুণ নজির। অশ্বিনের হয়ে ওর ক্রিকেটটাই কথা বলে। এই সম্মান ওর প্রাপ্য।’’
বাকি পুরস্কারপ্রাপকদের তালিকায় রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডে কক (বর্ষসেরা ওয়ান ডে ক্রিকেটার)। নির্ধারিত সময়সীমায় ১৬ ম্যাচে ৭৯৩ রান করেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে চারটে সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ১০ বলে ৩৪ নট আউটের ট্রফি-জেতানো ইনিংসের সৌজন্যে বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্সের পুরস্কার পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্লোস ব্রেথওয়েট। ইডেনের সেই ফাইনালে পরপর চারটে ছয় মেরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টিমকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন চব্বিশ বছরের কার্লোস। বর্ষসেরা ইমার্জিং ক্রিকেটার হয়েছেন বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
বর্ষসেরা ক্রিকেটার
রবিচন্দ্রন অশ্বিন
বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার
রবিচন্দ্রন অশ্বিন
বর্ষসেরা ওয়ান ডে ক্রিকেটার
কুইন্টন ডি’কক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সেরা টি টোয়েন্টি পারফরম্যান্স
কার্লোস ব্রেথওয়েট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
৩৪ নআ, বিশ্বকাপ ফাইনাল, কলকাতা
সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার
মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)
আইসিসি স্পিরিট অব দ্য ক্রিকেট
মিসবা উল হক (পাকিস্তান)
বর্ষসেরা আম্পায়ার
মারায়েস এরাসমাস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
ওয়ান ডে-তে মেয়েদের বর্ষসেরা
সুজি বেটস (নিউজিল্যান্ড)
মেয়েদের টি টোয়েন্টি বর্ষসেরা
সুজি বেটস