বাউন্সারের বিষ-দাঁত উপড়ে সৌম্যর হুঙ্কার

বাঁচতে নয়, মারতে নেমেছিলেন! ভাবেননি, টিমের দ্রুত উইকেট চলে গিয়েছে রান তাড়া করতে নেমে। ভাবেননি, আফ্রিকা পেসারদের নিধন-যজ্ঞে নামলে তিনিও ‘আহত’ হতে পারেন। কোথাও একটা শুনেছিলেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকা নাকি তাঁকে বাউন্সার দিয়ে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ১৭:৫৬
Share:

সৌম্যই ‘সরকার’। ছবি: এএফপি।

বাঁচতে নয়, মারতে নেমেছিলেন!

Advertisement

ভাবেননি, টিমের দ্রুত উইকেট চলে গিয়েছে রান তাড়া করতে নেমে। ভাবেননি, আফ্রিকা পেসারদের নিধন-যজ্ঞে নামলে তিনিও ‘আহত’ হতে পারেন। কোথাও একটা শুনেছিলেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকা নাকি তাঁকে বাউন্সার দিয়ে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে।

সৌম্য সরকার উল্টে রাবাদাদেরই সাড়ে বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দিলেন!

Advertisement

‘‘শুনেছিলাম যে ওরা নাকি আমাকে বাউন্সার দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করবে। আমি চেয়েছিলাম ওদের চোখে চোখ রেখে লড়তে। আউট হলে আউট হতাম। কিন্তু আমি ওদের মনের উপর চড়ে বসতে চেয়েছিলাম। আমি ঠিক করে রেখেছিলাম, ওরা যত জোরে পারে বল করুক। যত খশি বাউন্সার দিক। আমি পালাব না। বরং ওদেরই উড়িয়ে তবে যাব,’’ মীরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দেশকে জিতিয়ে বলছিলেন বঙ্গ যোদ্ধা সৌম্য।

একটা-দু’টো নয়, গুণে দেখা গিয়েছে সর্বমোট এগারোটা ডেলিভারি সৌম্যকে শর্ট করেছে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসাররা। কয়েকটা লাফিয়ে উঠে এসেছে মুখের কাছে। প্রথম দিকে দু’একটা বলে কিছুটা অসুবিধে হলেও পরের দিকে আফ্রিকান পেসারদের পাল্টা যুদ্ধের মুখে ফেলে দেন সৌম্য। রাবাদাকে পুল করে যে সপাট বাউন্ডারিটা মারেন, সেটা তো ম্যাচ শেষের চব্বিশ ঘণ্টা পরেও তুমুল আলোচিত হচ্ছে।

‘‘দক্ষিণ আফ্রিকা আপনাকে খারাপ ডেলিভারি উপহার দেবে না। আপনাকে বানিয়ে নিতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে খেলার সময় ওভারে অন্তত একটা বপাজে ডেলিভারি পাচ্ছিলাম। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধটা তাই অনেক কঠিন ছিল,’’ বলে দিচ্ছেন সৌম্য। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের অনেক বড় স্কোর তাড়া করতে হয়েছিল। সেটার প্ল্যান এক রকম হয়। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা মীরপুরে যেটা দিয়েছিল, সেই ছোট স্কোরগুলো তাড়া করা কঠিন।’’

বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান প্রজন্মের সেরা প্রতিভা ধরা হয় তাঁকে। কিন্তু গত ২২ এপ্রিল তাঁর প্রথম সেঞ্চুরির পর থেকে এটাও বলা হচ্ছিল যে, ক্রিজে সৌম্যর ‘জীবন’ সত্তর মিনিট বা সাতচল্লিশ বল। শুরু থেকে আক্রমণ করে তিরিশ, চল্লিশ বা হাফসেঞ্চুরি করে দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু বড় ইনিংস আসছে না। যেটা তাঁর প্রতিভা ধরলে, প্রাপ্য। ‘‘সবাই এই কথাটাই বলে। যারা আমার থেকে ছোট এমনকী তারাও বলে যে, ভাই ইনিংসটা শেষ করে ফেরো। শুনে শুনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি,’’ বলতে থাকেন সৌম্য। ‘‘আসলে ইনিংস টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলাদা কিছু আমি করি না। যেমন এই ম্যাচটায় আমার টার্গেট হাফসেঞ্চুরি বা সেঞ্চুরি করা ছিল না। ছিল, রানটা তুলে ফেরা। চেয়েছিলাম, শেষ পর্যন্ত থাকতে।’’

সৌম্য সরকার থেকেছেন। টিমকে সাময়িক বিপদ থেকে টেনে তুলে জয়ের উপকূলে পৌঁছে দিয়েছেন। এবং প্রোটিয়া পেসারদের বাউন্সারের বিষ-দাঁত উপড়ে একটা ব্যাপার প্রমাণ করে দিয়ে গিয়েছেন।

বাঙালি আজও মাঝেমধ্যে গর্জে ওঠে। আর তখন সেটা ঠিক ব্যাঘ্রগর্জনের মতোই শোনায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন