সেমিফাইনাল অনিশ্চিত। এখনও! দলের প্র্যাকটিসে চিন্তিত এটিকে কোচ মলিনা। কিন্তু বাবার মনের মেঘের খোঁজ কী করে জানবে ছেলেরা! মলিনার দুই ছেলে মাতাই এবং হোসে তাই খোশমেজাজে। সল্টলেকের মিউনিসিপ্যালিটি মাঠে। শনিবার। ছবি: উৎপল সরকার।
প্র্যাকটিস সেরে হোটেলে ফিরেই টিভির সামনে বসে পড়েছিলেন পস্টিগা-অর্ণব-প্রীতমরা। পরের দু’ঘণ্টা টিভি ছেড়ে ওঠেননি কেউ-ই। শেষ পর্যন্ত কলকাতাকে স্বস্তি এনে দিলেন বাংলার শৌভিক ঘোষ। মোহনবাগান ডিফেন্ডার ইনজুরি টাইমে গোল করায় নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড-চেন্নাইয়ান ম্যাচ ৩-৩ ড্র হয়ে যায়।
শনিবারের ম্যাচ ড্র হওয়ায় গত বারের চ্যাম্পিয়ন মার্কো মাতেরাজ্জির চেন্নাইয়ান আইএসএল-থ্রি থেকে ছিটকে গেল। ১৩ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৫। বরং ১২ ম্যাচে ১৫ পয়েন্টে পৌঁছে সেমিফাইনালে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রাখল নর্থ ইস্ট। তবে লিগ তালিকার যা পরিস্থিতি এখন, তাতে শেষ চারে যাওয়ার অঙ্কটা জটিলই থেকে গেল। যদিও আটলেটিকো দে কলকাতার খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ দিনের ম্যাচ ড্র হওয়ার ফলে বলা যায়, জোসে মলিনার কলকাতা কার্যত সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছে।
স্বভাবতই চেন্নাই-নর্থইস্ট ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি হোক, চেয়েছিলেন কলকাতার কোচ থেকে বেশির ভাগ ফুটবলার। ম্যাচ শুরুর আগে মলিনার সহকারী বাস্তব রায় বলছিলেন, ‘‘আজকের ম্যাচটা ড্র হলে সবচেয়ে ভাল হয়। তা হলে আমাদের উপর থেকে চাপ অনেক কমে যাবে।’’ লালরিন্দিকা রালতের গলাতেও একই সুর। তিনি ম্যাচের হাফটাইমে ফোনে বললেন, ‘‘ম্যাচটা ড্র থাকলে আমাদের লাভ। সেটাই চাই।’’ তবে প্রীতম কোটাল আবার অন্য টিমের রেজাল্টের উপর নির্ভর করতে রাজি নন। এটিকে ডিফেন্ডার মঙ্গলবার কেরল ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যেতে চান। তাঁর দাবি, ‘‘কলকাতাকে কেন অন্য টিমের উপর নির্ভর করতে হবে? চেন্নাই-নর্থ ইস্ট টিভিতে দেখেছি ঠিকই, তবে ম্যাচের রেজাল্ট নিয়ে আমার একটুও মাথাব্যথা ছিল না। কে ড্র করল, তাতে কার কতটা সুবিধে হল, এ সব না ভেবে কেরল ম্যাচ নিয়েই ভাবছি। ওই ম্যাচে আমরা তিন পয়েন্ট পেলেই তো সেমিফাইনালে চলে যাব।’’
এ বারের আইএসএলে যতগুলো ম্যাচ হল, তার মধ্যে শনিবারই বোধহয় সবচেয়ে উত্তেজনার লড়াই হল চেন্নাইয়ে। দু’টিমই জেতার জন্য মরিয়া ছিল। চেন্নাই শুরুতেই আক্রমণের ঝড় তোলে। নর্থ-ইস্টও বারবার কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে চাপে ফেলে দিচ্ছিল মেহরাজদের। তিন বার পিছিয়ে পড়ে গোল শোধ করেছেন ভেলেজরা। যে কারণে চেন্নাইয়ের ডুডুর হ্যাটট্রিকও দিনের শেষে কাজে লাগল না চেন্নাইয়ের।
তিরিশ মিনিটে ডুডুর প্রথম গোল। চার মিনিটের মধ্যে ভেলেজ তা শোধ করেন। বিরতির ঠিক আগে ডুডুর সৌজন্যে ২-১ করে চেন্নাই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ভেলেজ দ্বিতীয় বার সমতায় ফেরান নর্থ ইস্টকে। ম্যাচের শেষের দিকে হ্যাটট্রিক করেন ইস্ট-মোহন বাতিল নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার ডুডু। ইনজুরি টাইমের শেষের দিকে যখন সবাই ধরে নিয়েছেন, তিন পয়েন্ট পাচ্ছে চেন্নাই, সেই সময় হেডে অসাধারণ গোল করে ৩-৩ করে দেন শৌভিক।
চেন্নাই-নর্থ ইস্ট ম্যাচের ফল জানার আগেই অবশ্য এ দিন বিকেলের প্র্যাকটিসে এটিকে ফুটবলাররা ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। মলিনার পরিবারও এখন কলকাতায়। দুই ছেলে হোসে এবং মাতাইকে নিয়েই এ দিন প্র্যাকটিসে আসেন কলকাতার স্প্যানিশ কোচ। পস্টিগাদের অনুশীলন দেখে একটা সময় নিজেরাও বল নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছিল মলিনা-পুত্রেরা। বাবার টিমকে নিয়ে দুই ভাই-ই দারুণ আশাবাদী। হোসে-মাতাই দু’জনই বলে দিচ্ছে, ‘‘এটিকে এ বার ফাইনালে উঠবে। চ্যাম্পিয়নও হবে।’’