Richa Ghosh

Richa Ghosh: শিলিগুড়ি থেকে ডনের দেশে বিগব্যাশের উড়ান বঙ্গকন্যার

কিন্তু রিচা ঘোষের জীবনে ১৬ বছর বয়সে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা তাঁর ভবিষ্যৎ পাল্টে দেয়।

Advertisement

 ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৩০
Share:

নজরে: বিগ ব্যাশে খেলার স্বপ্নপূরণের পথে রিচা। ফাইল চিত্র

মাত্র ১৬ বছর বয়সে আপনার স্বপ্ন কী ছিল? দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা দেওয়ার পরে হয়তো চিন্তা করেছেন কী নিয়ে পড়বেন! বিজ্ঞান, কলা অথবা বাণিজ্য শাখার মধ্যে যে কোনও একটি বিভাগ বেছে নেওয়াই জীবনের অন্যতম বড় সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হত। বোর্ড পরীক্ষার নাম শুনলেই অনেকের চোখে-মুখে ধরা পড়ে একাধিক চিন্তা, আতঙ্ক। পরিবারে দাদা-দিদিরা ভাল ফল করেছে, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতেই হবে।

Advertisement

কিন্তু রিচা ঘোষের জীবনে ১৬ বছর বয়সে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা তাঁর ভবিষ্যৎ পাল্টে দেয়। বোর্ড পরীক্ষার সময়ই ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পান রিচা। বোর্ড পরীক্ষার কথা দ্বিতীয় বার না ভেবে হরমনপ্রীত কৌরদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানে বসে পড়েন তিনি।

রিচার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মাটির একটা অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় মেলবোর্নে ২০২০ সালে। একদিনের ম্যাচেও অভিষেক অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাকেতে। এ বার সপ্তম ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে মেয়েদের বিগ ব্যাশ লিগে খেলতে চলেছেন তিনি। ২৮ সেপ্টেম্বরই ১৮তম জন্মদিন পালন করেছেন রিচা। ঠিক তিন দিনের মধ্যেই সবচেয়ে বড় উপহার এল তাঁর জন্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে ফিরে এসেই বাবা মানবেন্দ্র ঘোষকে বলেছিলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা বেশ উন্নত, ওই দেশে বিগ ব্যাশ লিগকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়।’’ তখন থেকেই বিগ ব্যাশে খেলার স্বপ্ন দেখা শুরু। অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে তাঁর ৪৪ রানের ইনিংস দেখেই হোবার্ট হারিকেন্স থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয় সই করার জন্য। রিচা সেই প্রস্তাব ফেরাতে পারেননি। শুক্রবার ভারত-অস্ট্রেলিয়া দিন-রাতের টেস্ট চলাকালীনই টুইটারে হোবার্ট হারিকেন্সের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় এই খবর।

Advertisement

রিচার বাবা ও ছোটবেলার প্রথম কোচ মানবেন্দ্র ঘোষ আপ্লুত। আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে, এই আনন্দ প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এ বার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগেও বলছিল, বিগ ব্যাশ অনেক বড় মাপের প্রতিযোগিতা। একটা একটা করে ওর স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। বাবা হিসেবে ভাল তো লাগারই কথা।’’

বাবার হাত ধরেই ছোটবেলায় মাঠে যাওয়া শুরু রিচার। মাত্র চার বছর বয়সে ক্রিকেটে হাতেখড়ি। শিলিগুড়ির বাঘাযতীন ক্যাম্পে ছেলেদের সঙ্গেই প্রস্তুতি শুরু করতে হয়েছিল ছোট্ট রিচাকে। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদে মেয়েদের ক্রিকেট কোচিং শুরু হওয়ার পরে সেখানেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন রিচা। রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা সিএবি থেকেও কোচ পাঠানো হত এই শিবিরে। তাঁদের কাছেই ক্রিকেটের প্রথম পাঠ। সেই সঙ্গেই বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও গোপাল সাহার কাছে তালিম নিতেন। ছোটবেলা থেকে মানবেন্দ্রবাবু প্রশিক্ষণ দিলেও বরুণবাবুদেরই কোচ হিসেবে স্বীকৃতি দেন রিচার বাবা।

মাত্র ১১ বছর বয়সে বাংলার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিভাগে সুযোগ পান রিচা। ১২ বছর বয়সে খেলেন অনূর্ধ্ব-২৩ বিভাগে। বাংলার সিনিয়র টি-টোয়েন্টি দলে কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে ১৩ বছর বয়সে যোগ দেন তিনি। তখন বাংলার অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামী। যাঁকে দেখে ক্রিকেটার হওয়ার সাহস পেয়েছিলেন রিচা, তিনিই তরুণীর প্রথম অধিনায়ক। মানবেন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘ঝুলনদির নেতৃত্বে যখন ও খেলার সুযোগ পেল, আমি ধরে নিয়েছিলাম, আর ফিরে তাকাতে হবে না। এমনিতে ছোটবেলায় সচিনের (তেন্ডুলকর) ভক্ত ছিল। একটু বড় হওয়ার পরে (মহেন্দ্র সিংহ) ধোনিই ওর অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। কিন্তু মেয়েদের ক্রিকেট বলতে বাংলার মানুষ একজনকেই চেনেন। তিনি ঝুলন গোস্বামী।’’ কিংবদন্তি পেসারের সঙ্গে খেলতে শুরু করার পর থেকে আরও উন্নতি হয় রিচার। বড় শট নেওয়ার ইচ্ছে তৈরি হয় ধোনির খেলা দেখে। রিচার বর্তমান কোচ শিবশঙ্কর পালের কথায়, ‘‘রিচার সব চেয়ে বড় গুণ, ও ম্যাচ শেষ করে আসতে পারে। মেয়েদের ক্রিকেটে ফিনিশার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখত ও। ভারতের হয়ে সেই ভঙ্গিতেই খেলছে। বিগ ব্যাশ ওর কাছে নতুন মঞ্চ। আশা করব, ভাল কিছু করে দেখাবে।’’ বিগ ব্যাশে বঙ্গকন্যার সফল উড়ান দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট ভক্তরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন