স্ত্রী সুপ্রিয়ার হাতে ট্রফি তুলে দিয়ে সদ্য চ্যাম্পিয়নের ছবি টুইট।
স্টুটগার্ট থেকে হ্যাল— শ’পাঁচেক কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া তখন সবে শেষ করেছেন। কিন্তু রোহন বোপান্না-র চূড়ান্ত স্টেশন তার চেয়ে অনেক দূর! উইম্বলডন। তবে এ বছর ঘাসের কোর্ট মরসুমের প্রথম ট্রফিটাই জেতায় ভারতের এক নম্বর ডাবলস তারকার বিশ্বাস, দু’মরসুম আগের মতো টেনিসের সবচেয়ে মযার্দামণ্ডিত গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনালে হোঁচট খাবেন না আর। আরও দু’টো ম্যাচ জিতেই তবে থামবেন। যে শপথ মোবাইলে শুনল আনন্দবাজার।
প্রশ্ন: আপনার চৌত্রিশ বছর বয়সি রোমানিয়ান পার্টনার ফ্লোরিন মার্জিয়া তো রবিবারই কেরিয়ারের প্রথম গ্রাস কোর্ট খেতাব জিতলেন। তাঁর পাশে খেলে উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এতটা আশা করছেন কী করে?
বোপান্না: গ্রাস কোর্ট সিজন পেশাদার সার্কিটের সবচেয়ে ছোট মরসুম। সবাই-ই তাই একটুআধটু নড়বড়ে থাকে। সেখানে আমরা প্রথম ট্রফিটাই জিতে আত্মবিশ্বাসী। হ্যাল ওপেনও জিততে পারলে তো কথাই নেই। ফ্লোরিন গতকালই প্রথম ঘাসের কোর্টে খেতাব জিতলেও ওর ভলি আর ব্যাকহ্যান্ড এ ধরনের ফাস্ট সারফেসে বেশি খোলে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমদের জুটি একে অন্যের খেলার পরিপূরক। সে জন্যই ফ্রোরিন যেমন আমার পাশে খেলে জীবনের প্রথম গ্রাস কোর্ট ট্রফি পেল, আমিও তেমনই ওর সঙ্গে খেলে কেরিয়ারের প্রথম মাস্টার্স জিতেছি গত মাসেই। তবে একটা কারেকশন আছে। ফ্লোরিন জীবনে এই প্রথম ঘাসের কোর্টে টানা চারটে ম্যাচ জিতল গত সপ্তাহেই (হাসি)।
প্র: বছরের গোড়ায় সিডনি আর দুবাইয়ে ড্যানিয়েল নেস্টরকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েও অত অভিজ্ঞ ডাবলস স্পেশ্যালিস্টের সঙ্গে পার্টনারশিপ ভেঙে দিলেন কেন?
বোপান্না: কিছু কমার্শিয়াল বাধা ছিল। জুটি হিসেবে আমাদের মধ্যেও কিন্তু কোর্টে যথেষ্ট বোঝাপড়া ছিল। দু’টো ট্রফি জেতাই তো সেটার প্রমাণ।
প্র: স্ত্রী সুপ্রিয়া ছিলেন স্টুটগার্ট জয়ের সময়। পুরো গ্রাস কোর্ট মরসুমই থাকবেন উৎসাহ দিতে?
বোপান্না: উইম্বলডনে তো থাকবেই। তবে ও থাকলে আমার গুলাবজামুন খাওয়াটা বিপজ্জনক ভাবে বেড়ে যায় (হাসি)।
প্র: ঠিক বোঝা গেল না!
বোপান্না: আসলে আমি খাওয়াদাওয়া আর ফিটনেসের ব্যাপারে ভীষণই খুঁতখুঁতে। এক আউন্সও ওজন বাড়াতে চাই না। ট্রেডমিলে যাই প্রায় রোজ। লাঞ্চে পাস্তা আমার বাধাধরা মেনু। একমাত্র বেঙ্গালুরুর বাড়িতে বছরে সামান্য যে ক’টা দিন থাকার সুযোগ ঘটে টাইট পেশাদার ট্যুরের মধ্যে, তখন কমার্শিয়াল স্ট্রিটে একটা নির্দিষ্ট মিষ্টির দোকানের গুলাবজামুন খাওয়া আমার চাই-ই। সুপ্রিয়া সার্কিটে আমার সঙ্গে থাকলেই করে কী, বেঙ্গালুরুর ওই মিষ্টির একগাদা টিনড্ বক্স নিয়ে আসে। ভাবে না যে, এটা বাড়ি নয়, পেশাদার সার্কিট!
প্র: কিন্তু এত ডায়েটিং কেন?
বোপান্না: পঁয়ত্রিশ তো হল! এখনও উইম্বলডন জিতিনি। অলিম্পিক মেডেল পাইনি। আসল স্বপ্নগুলো পূরণের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করতে তো হবেই। তা ছাড়া আমি অনেক দেরিতে ডাবলসে এসেছি। আমাদের দেশের টেনিসের সিস্টেম এ রকম! ভারতে আমেরিকার মতো ষোলো-আঠারোয় দেখেই ঠিক করে ফেলা হয় না যে, এ সিঙ্গলসে নাকি ডাবলসে সফল হবে! আমাকে তার জন্য পঁচিশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
প্র: তা সত্ত্বেও দু’টোই হবে বলছেন?
বোপান্না: হ্যাঁ, হবে। এখন আমরা যে ফর্মে খেলছি তাতে এ বারই উইম্বল়ডন চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। মাদ্রিদ আর স্টুটগার্টে দু’বার মাটওয়াস্কি-জিমোনজিচ আর একবার সোয়ারেস-পেয়ার মতো সেরা জুটিদের সেমিফাইনাল-ফাইনালে হারালাম। মানে বড় ম্যাচ জেতার ধারাবাহিকতা রাখতে শিখেছি। আর পরের বছর রিও অলিম্পিকে আমি লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে আগ্রহী। অতীতকে আঁকড়ে থাকার মানুষ আমি নই। তিন বছর আগে লন্ডন অলিম্পিকে ওর সঙ্গে সেই পার্টনারশিপ-ঝামেলা এখন অতীত। লি-র কাছেও নিশ্চয়ই তাই-ই। আমাদের জুটি রিওতে নামলে কিন্তু অলিম্পিক পদক আসতে পারে।