রোহিতের ডাবলে চাপে ডু্প্লেসিরা

ছয় মেরে টেস্টে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, বীরুর জন্মদিনে নতুন সহবাগ হয়তো পেয়ে গেল ভারত

রোহিত ছয় মেরে ডাবল সেঞ্চুরি করার পরে টিভি-তে ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে সুনীল গাওস্কর বলছিলেন, ‘‘জন্মদিনে এটা নিশ্চয়ই সহবাগের কাছে দারুণ একটা উপহার হয়ে থাকবে। ও নিজেও ছয় মেরে সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি করত। আর এখন রোহিতও ঠিক তাই করছে।’’ 

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:১১
Share:

কীর্তিমান: ধোনির শহরে নতুন রেকর্ড। রবিবার ডাবল সেঞ্চুরির পরে ব্যাট তুলে অভিবাদন রোহিতের। পিটিআই

এমন একটা দিনে রোহিত শর্মা টেস্টে নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা করল, যে দিনটা অন্য একটা কারণে স্মরণীয় ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে। ২০ অক্টোবর যে বীরেন্দ্র সহবাগের জন্মদিন। যে সহবাগের সঙ্গে এখন তুলনা করা হচ্ছে রোহিতের।

Advertisement

রোহিত ছয় মেরে ডাবল সেঞ্চুরি করার পরে টিভি-তে ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে সুনীল গাওস্কর বলছিলেন, ‘‘জন্মদিনে এটা নিশ্চয়ই সহবাগের কাছে দারুণ একটা উপহার হয়ে থাকবে। ও নিজেও ছয় মেরে সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি করত। আর এখন রোহিতও ঠিক তাই করছে।’’

রোহিতের নামের পাশে একটা অদ্ভুত পরিসংখ্যান দেখলাম। ও ওয়ান ডে সেঞ্চুরি আর ডাবল সেঞ্চুরি করেছে ছয় মেরে। টেস্টে সেঞ্চুরি আর ডাবল সেঞ্চুরি করেছে ছয় মেরে। এমনকি টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিও পেয়েছে ছয় মেরে। এই রেকর্ড স্বয়ং সহবাগেরও নেই।

Advertisement

সহবাগ আর রোহিত— দুই ওপেনারের ব্যাটিং স্টাইলটা একই রকমের। সামান্য তফাত হল, সহবাগ প্রথম বল থেকেই বাউন্ডারি মারত, রোহিত এখন প্রথম দিকে কিছুটা সময় দেখে খেলছে। কিন্তু তার পরে দুরন্ত গতিতে রান তুলছে। এই টেস্টে ঠিক সেই স্ট্র্যাটেজিই নিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটের ‘হিটম্যান’।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২৫৫ বলে এসেছে রোহিতের ২১২ রান। মেরেছে ২৮টি চার, ছ’টি ছয়। সহবাগ, রোহিতের মতো ব্যাটসম্যানরা যখন নিজেদের মেজাজে খেলে, তখন স্কোরবোর্ডে অত্যন্ত দ্রুত রান ওঠে। মানে এক দিনে ৩০০-৩৫০ রান ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এর ফলে বোলাররা হাতে অনেক বেশি সময় পায় উইকেট পাওয়ার।

শুধু বিধ্বংসী ব্যাটিংই নয়, রোহিত কিন্তু টেকনিক্যালিও খুব ভাল ব্যাটসম্যান। আমার কাছে যে যত দেরিতে বল খেলে, সে তত ভাল ব্যাটসম্যান। কারণ, সে সব ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যান সেকেন্ডের ভগ্নাংশ বেশি সময় পায় বলটা দেখে স্ট্রোক খেলার। রোহিতের ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। ওকে দেখে মনে হয় ব্যাটিংটা কত সোজা। রোহিতের একটা শটের কথা আলাদা করে বলতে চাই। ফ্রন্টফুটে পুল শট। বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, প্রায় ভিভ রিচার্ডসের মতো আধিপত্য নিয়ে এই শটটা খেলে রোহিত। বলের লেংথ সেকেন্ডের ভগ্নাংশ আগে বুঝে যায় ও। টেস্টের দ্বিতীয় দিনে রাঁচীতে রোহিতের ডাবল সেঞ্চুরিটা এল এ রকমই একটা ফ্রন্টফুট পুলে মারা ছয় থেকে।

আগের দিন দেখছিলাম, ভারতের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌর বলছিল, মানসিকতা বদলেই রোহিত টেস্টে সফল। মানসিকতার কথা বলতে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে রোহিতকে ঘিরে। এক প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচকের মুখে শুনেছিলাম ঘটনাটা। সেই প্রথম মুম্বই রঞ্জি দলে সুযোগ পেয়েছে রোহিত। কিন্তু ম্যাচের আগের দিন মুম্বই কোচ জানিয়ে দেয়, রোহিতের প্রথম এগারোয় জায়গা হচ্ছে না। পরের দিন রোহিত ক্রিকেট কিট ছাড়াই নাকি মাঠে চলে এসেছিল। মনোভাবটা ছিল, দলে যখন সুযোগ পাইনি, তখন ব্যাট-প্যাড এনে কী লাভ। ওই দিন ভীষণ ভাবে তিরস্কৃত হয়েছিল ও।

সেই রোহিত আর এই রোহিতের আকাশ-পাতাল তফাত। সত্যি, মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বাইরে থেকে দেখার পরে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রোহিতের একটা প্রিয় শট হল স্টিয়ার। সাধারণত যে জায়গায় দ্বিতীয় স্লিপ দাঁড়ায়, সেখান থেকে বলটা স্টিয়ার করে ও বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করে। কিন্তু টেস্টে এটা বিপজ্জনক একটা শট। যে কোনও সময় ক্যাচ চলে যেতে পারে স্লিপের হাতে। চলতি টেস্ট সিরিজে দেখছি রোহিত এই শটটা পুরোপুরি ছেঁটে ফেলেছে। পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, ক্রিকেটে দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে খেলার জন্য মানসিক ভাবে নিজেকে তৈরি করেছে রোহিত।

এই টেস্টে আরও কয়েক জনের কথা বলতে হবে। যেমন অজিঙ্ক রাহানে। ভারত ৩৯ রানে তিন উইকেট হারানোর পরে রোহিত-রাহানে জুটি চাপমুক্ত করে দলকে। রাহানের সেঞ্চুরিটা আরও এক বার বুঝিয়ে দিল, মিডল অর্ডারে ওর বিকল্প এখন কেউ নেই। একই ভাবে উইকেটের পিছনে ঋদ্ধিমান সাহাও বুঝিয়ে চলেছে, টেস্টে ওকে দলে রাখতেই হবে। এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর উইকেটকিপার বাংলার ঋদ্ধিই। ওর হ্যান্ড প্লেসিংটা একেবারে নিখুঁত। বিশেষ করে লেগসাইডে। ব্যাটিংটা একটু ভাল করলেই কিন্তু ঋদ্ধির জায়গা নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন উঠবে না।

আরও এক জনের কথা বলতে চাই। রবীন্দ্র জাডেজা। গত দেড় বছরে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে ও সব চেয়ে বেশি উন্নতি করেছে। আদর্শ অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে সাত-আট নম্বরে এসে সেঞ্চুরি করার ক্ষমতা রাখে। বাঁ হাতি স্পিনে যে কোনও সময় উইকেট নিতে পারে। আর ফিল্ডিংয়ে তো বোধ হয় বিশ্বের এক নম্বর। তবে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে রোহিতই। বীরুর ৪১তম জন্মদিনে বোধ হয় নতুন সহবাগ পেয়েই গেল ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন