ডেথ ওভারে সেরা ভু-বু জুটিই

ফিটনেস আর দায়িত্বে আরও ধারালো রোহিত শর্মা

এ দিনই যেমন শুরুর দিকে প্রথম ১৪টা বলে ও রান করেনি। তার পরে ১৫ নম্বর বলে প্যাট কামিন্স-কে নিখুঁত স্ট্রেট ড্রাইভে বাউন্ডারি পার করিয়ে দিল। ঠিক তার পরের বলেই ‘লফটেড ড্রাইভ’-এ ফের চার।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১৯
Share:

দুরন্ত: নাগপুরে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করে ওয়ান ডে-তে ছ’হাজার রানে পৌঁছে গেলেন রোহিত শর্মা। ছবি: এএফপি।

নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের সাত উইকেটে জয় দেখে আফসোস হচ্ছিল, কেন ৫-০ হল না! অষ্টমীর দিন চিন্নাস্বামীতে বিরাট কোহালির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হওয়ায় রান আউট হয়ে গিয়েছিল রোহিত শর্মা। সে দিন তা না হলে ভারত সিরিজটা ৫-০ জিতেই ফিরত বলেই আমার ধারণা।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোহালিরা অভিভূত হার্দিকের দাপটে

গত চার দশকে ভারতের মাটিতে অনেক অস্ট্রেলিয়া দলকেই খেলতে দেখেছি। কিন্তু এ বার একদিনের সিরিজে খেলতে আসা স্টিভ স্মিথের এই দলটার গভীরতা খুব কম। না হলে কেদার যাদবের মতো একজন অনিয়মিত বোলার ওদের সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে! এ দিন স্টিভ স্মিথের উইকেট পেল কেদার। অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের পর কেদারকে টিভিতে বলতে শুনলাম, ‘‘কী করে উইকেট পাই, তা নিজেই জানি না।’’ যে বোলার নিজেই উইকেট পেয়ে অবাক হয়ে যায়, তাকে দিয়ে অধিনায়ক করিয়ে নিচ্ছে দশ ওভার! এতেই বোঝা যায় অস্ট্রেলিয়া দলের সমস্যা কতটা।

Advertisement

ভারত জয়ী ৭ উইকেটে

সেরা রোহিত শর্মা ১০৯ বলে ১২৫

চিন্নাস্বামীতে যেমন বল পড়ে উইকেটে আসছিল, রবিবার নাগপুরে কিন্তু তা হয়নি। বল ব্যাটে আসছিল থমকে থমকে। সেই পিচে অস্ট্রেলিয়ার ২৪২-৯ খুব একটা খারাপ রান নয়। এ দিন ওয়ার্নার ও ফিঞ্চ শুরুটাও দারুণ করেছিল। কিন্তু সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া যে জিতে ফিরতে পারেনি তার অন্যতম কারণ হল বেঙ্গালুরুর মতো আজ আর রোহিত শর্মা রান আউট হয়ে ফিরে যায়নি। ওর ঝকঝকে শতরানই অস্ট্রেলিয়াকে ছিটকে দেয় ম্যাচ থেকে।

ভারতের ওপেনিং স্লটে অজিঙ্ক রাহানে এবং রোহিত শর্মা যখন ব্যাট করছিল তখন সেই মুম্বই ঘরানার ঝলক মনে করাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, মুম্বইয়ের হয়ে যেন দু’জন কোনও দুর্বল দলের বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচ খেলছে। রাহানে এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চারটি ইনিংসে পঞ্চাশের বেশি রান করে ফেলল। এটা কিন্তু শিখর ধবনের দলে ফেরার রাস্তা কঠিন করে দিচ্ছে। সঙ্গে নির্বাচকদের কাজটাও কঠিন হল বলা যায়। ধবন সম্প্রতি উপমহাদেশের উইকেটে রান পেয়েছে। কিন্তু আমার মতে রাহানের ব্যাটিংয়ের মান শিখরের ব্যাটিংয়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

অনেকেই বলছেন, সহ-অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়ার পরে নাকি রোহিতের খেলার ধার বেড়েছে। এখন অনেক দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস গড়ছে ও। আসলে রোহিতের ক্লাসটাই আলাদা। রোহিত যে দিন নিজের ছন্দে ব্যাট করে, সে দিন মুগ্ধ হয়ে দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। আর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ক্যাপ্টেন্সি এবং ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব ওর পারফরম্যান্সের ধার আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিণতও হয়েছে অনেক।

অপ্রতিরোধ্য: অস্ট্রেলিয়াকে ওয়ান ডে সিরিজে ৪-১ হারিয়ে কোহালি, ধোনিরা। রবিবার নাগপুরে। ছবি: পিটিআই

এ দিনই যেমন শুরুর দিকে প্রথম ১৪টা বলে ও রান করেনি। তার পরে ১৫ নম্বর বলে প্যাট কামিন্স-কে নিখুঁত স্ট্রেট ড্রাইভে বাউন্ডারি পার করিয়ে দিল। ঠিক তার পরের বলেই ‘লফটেড ড্রাইভ’-এ ফের চার। ম্যাচ শেষ করল ১০৯ বলে ১২৫ রানের একটা ঝকঝকে ইনিংস খেলে। এতেই স্পষ্ট, রোহিতের ব্যাটিংয়ের মান কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে।

বিরাট কোহালির এই ভারতীয় দলে রোহিত শর্মা হল এমন একজন ব্যাটসম্যান, যে সব রকমের শট খেলতে পারে। এখন আবার ওর অস্ত্র ভাণ্ডারে ঢুকে পড়েছে নিখুঁত শর্ট আর্ম পুল শটও। এই শটেই নাগপুরে ছয় মেরে সেঞ্চুরিটা করল ও। একদিনের ক্রিকেটে রোহিতের ১৪টি সেঞ্চুরি এবং ছয় হাজার রান হয়ে গেল। এর আগে ফিটনেসটা ভোগাচ্ছিল ওকে। তাই ব্যাটিংয়ের সময়ও সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর সেই ফিটনেস ফিরে পেয়েছে রোহিত। ফলে ফের চেনা ছন্দে দেখা যাচ্ছে ওকে।

আরও পড়ুন: রোহিতের সেঞ্চুরি, নাগপুরে তেরঙ্গা ওড়াল বিরাট বাহিনী

এই সিরিজ থেকে ভারতের আর এক প্রাপ্তি ডেথ ওভারে ভু-বু জুটি— ভুবনেশ্বর কুমার ও যশপ্রীত বুমরার বোলিং। দিন কয়েক আগেই স্টিভ স্মিথ বলেছিল, ডেথ ওভারে ভুবনেশ্বর-বুমরার জুটি এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা। ভুল বলেনি। সেটা আবারও বুঝিয়ে দিল ওরা। বুমরা এ দিন প্রথম ওভারে মেডেন দিলেও তিন ওভারে তিরিশের বেশি রান দিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে যখন বল করতে এল, তখন শেষ পাঁচ ওভারে ওর বলে কোনও চার-ছয় হয়নি। ওই সময় স্টাম্প টু স্টাম্প স্লোয়ার, স্লোয়ার বাউন্সার এবং ইয়র্কার দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বড় রান করতে দেয়নি ও। ডেথ ওভারে বুমরা তিন ওভারে ১২ রান দিয়ে নিল দুই উইকেট। অন্য দিকে, ভুবনেশ্বর শেষ তিন ওভারে ২০ রানে নিয়েছে দুই উইকেট। ভুবি এমনিতেই এই টিমে বল সবচেয়ে ভাল ‘মুভ’ করায়। এখন গতিটা বাড়িয়েছে । সঙ্গে গতির হেরফের ঘটিয়ে স্টাম্প টু স্টাম্প লোয়ার ফুলটস এবং ইয়র্কারটাও ভাল করছে। ডেথ ওভারে নিজেদের সেরা জায়গায় নিয়ে গিয়েছে ভু-বু জুটি।

ওদের কাছ থেকে নিশ্চয়ই এই রকম বোলিংই পাওয়া যাবে ২০১৯ বিশ্বকাপেও। তবে এর মধ্যে ওদের আরও কিছু নতুন অস্ত্র তৈরি রাখতে হবে বিপক্ষকে চমকে দিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন