মোহনবাগান ক্লাবের এজিএম-এ মঞ্চে শীর্ষকর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।
ক্লাবের অন্দরের পরিবেশ দীর্ঘ দিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল মোহনবাগান ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায়। চিৎকার চেঁচামেচি থেকে গালিগালাজ, ধাক্কাধাক্কি থেকে হাতাহাতি— এমন ধুন্ধুমার কাণ্ড ক্লাবের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি।
শনিবার দুপুরে ক্লাব তাঁবুতে বসেছিল বার্ষিক সাধারণ সভা। প্রায় ১১ শো সদস্য উপস্থিত ছিলেন সেখানে। বার্ষিক সভায় এত সদস্য এর আগে কোনও দিন হাজির হননি বলেই ক্লাব সূত্রে খবর। ছিলেন ক্লাব সভাপতি টুটু বসু, সচিব অঞ্জন মিত্র, ফুটবল সচিব বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সৃঞ্জয় বসু, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশির ঘোষেরাও। নিয়ম অনুযায়ী, ক্লাবের কোনও সভা পরিচালনার জন্য এক জন সভাপতি থাকেন। সভা শুরুর সময়ে তাঁর নাম কেউ এক জন প্রস্তাব করেন। সেই প্রস্তাব সমর্থনের পরই সভার কাজ শুরু হয়।
কিন্তু এ দিন মোহনবাগান ক্লাবের সভাপতি টুটু বসু মঞ্চে থাকা সত্ত্বেও তাঁর নাম সভার সভাপতি হিসাবে ঘোষণা করেননি সচিব অঞ্জন মিত্র। এই নিয়ে অনেক ক্ষণ ধরেই উত্তেজিত কথাবার্তা চলছিল। হঠাৎ করেই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শুরু হয়ে যায় প্রবল চিৎকার চেঁচামেচি। ভেসে আসে নানান অঙ্গভঙ্গি এবং গালিগালাজ। সেই অশান্তি একটা সময়ে রীতিমতো হাতাহাতিতে পৌঁছয়।
মঞ্চের উপর থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয় অঞ্জন মিত্রের জামাই তথা প্রাক্তন জাতীয় গোলকিপার কল্যাণ চৌবেকে। তিনি মাটিতে পড়ে যান। মাইক্রোফোন হাতে মঞ্চের নীচে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে দেখা যায় ক্লাবের পদত্যাগী সহ-সভাপতি সৃঞ্জয় বসুকে। মঞ্চের উপরেও ফের অশান্তির আঁচ পৌঁছয়। মাইক্রোফোন হাতে সদস্যদের শান্ত হওয়ার কথা বলতে দেখা যায় বাবুনকে। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় তখন অন্য মাইক্রোফোনে চিৎকার করে কিছু বলছেন। কারও কথাই স্পষ্ট ভাবে শোনা যাচ্ছিল না। কেউ কাউকে মানছিলেনও না।
এর মধ্যেই মঞ্চের উপর চেয়ারে বসে থাকা অঞ্জন মিত্র অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু তাতে চিৎকার চেঁচামেচি থামেনি। মঞ্চ থেকে একই সঙ্গে মাইক্রোফোন নিয়ে যে যার মতো করে কথা বলতে শুরু করেন। কখনও মাইক্রোফোন অ়ঞ্জনের পাশের চেয়ারে বসে থাকা টুটু বসুর হাতে। কখনও বাবুন, কখনও সৃঞ্জয় বা প্রসূনের হাতে। এর মধ্যেই প্রসূনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘টুটু বসু, অঞ্জন মিত্র দু’জনেই থাকবেন।’’ তিনি যখন এ কথা বলছেন, তখন মাইক্রোফোনেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন সৃঞ্জয়। একটা সময় বাবুনকে দেখা যায় হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। কী করবেন, যেন বুঝতে পারছেন না।
আরও পড়ুন
শেষ কোয়ার্টারে ৩ গোল, পাকিস্তানকে ৪-০ গোলে হারাল ভারত
এর পরেই জোর করে মাইক্রোফোন ধরিয়ে দেওয়া হয় অঞ্জন মিত্রের হাতে। তিনি বলেন, ‘‘ক্লাব ভাগ হয়ে গিয়েছে। লজ্জাজনক পরিস্থিতি। সাধারণ বার্ষিক সভা সুস্থ ভাবে হবে কি না জানা নেই।’’ সেই সময় মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে একে অপরের সঙ্গে প্রবল বাকবিতণ্ডা করতে দেখা যায় অঞ্জন-কন্যা সোহিনী এবং টুটু বসুর ছেলে সৃঞ্জয়কে। প্রবল চিৎকারে অঞ্জন থেমে যেতে বাধ্য হন। প্রায় আধ ঘণ্টা এমন পরিস্থিতি চলার পর টুটু বসুর নাম সভাপতি হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। তার পরেই শুরু হয় বার্ষিক সাধারণ সভা। পরে অঞ্জন মিত্র বলেন, ‘‘এত দিন ধরে দু’জনে ক্লাব করি, এমন ঘটনা ঘটবে কল্পনাও করিনি। বিষয়টা ঠিক হয়নি।’’
টুটু বসু যদিও পরে আর অঞ্জন সম্পর্কে কোনও ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ক্লাবে খুব দ্রুত নির্বাচন করানোর চেষ্টা করব। দিল্লির সংসদেও এ রকম অনেক ঝামেলা হয় দেখবেন। পরে ফের এক হতে দেখা যায় সাংসদদের। আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছে। সারা ক্ষণ আমি মঞ্চে অঞ্জনদার হাত ধরে বসেছিলাম। আমরা শেষ জীবন পর্যন্ত একসঙ্গেই ক্লাব চালিয়ে যাব।’’
এ দিনের ঘটনায় আহত হয়েছেন কল্যাণ চৌবে। তিনি এ দিন রাতে বলেন, ‘‘ঘটনার আকস্মিকতায় আমি স্তম্ভিত। আমার হাতে এবং কানের পিছনে চোট লেগেছে। যে দিকে ঘটনা মোড় নিয়েছে, সেটা কাম্য ছিল না। এ রকম পরিস্থিতি মোহনবাগান ক্লাবে আগে কখনও দেখিনি।’’ কল্যাণ চৌবে এই বিষয়ে ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।