দুই কিংবদন্তি।
পছন্দের গায়িকা লতা মঙ্গেশকর।
এখনও প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে শোনেন কিশোর কুমারের গান।
আসলে ক্রিকেটের বাইরে সঙ্গীতের জগতেও যে তাঁর অবাধ যাতায়াত। যদিও এত দিন সতর্ক ভাবে সেই গতিবিধি গোপন রেখেছিলেন তিনি।
তিনি— সচিন রমেশ তেন্ডুলকর।
নতুন বছরের শুরুতেই অবশ্য সর্বসমক্ষে গানের মঞ্চে হাজির হতে চলেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের লিটল মাস্টার। সব ঠিকঠাক চললে ৯ জানুয়ারি মুম্বইয়ের সনমুখনন্দ অডিটোরিয়ামে গায়কের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে সচিনকে!
তবে চমকের এখানেই শেষ নয়। তবলায় যিনি সচিনের সঙ্গে মঞ্চ কাঁপাবেন, তাঁকে সঙ্গীত জগত চেনে উস্তাদ জাকির হুসেন নামে!
মুম্বইয়ের পথ শিশুদের সাহায্যার্থে শাওনি সুর সঙ্গীত আয়োজিত এই চ্যারিটি অনুষ্ঠানের নামেও রয়েছে চমক—‘মাস্টার অ্যান্ড দ্য মায়েস্ত্রো’। অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধে একে অপরের সাক্ষাৎকার নেবেন সচিন ও জাকির। জীবনের ওঠা-পড়া, ভাঙা-গড়ার গল্প শোনাবেন দর্শকদের। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা হবে জাকিরের তবলার তালে। এবং শেষে থাকবে সেই ‘চমক’, যখন মঞ্চে অন্য ভূমিকায় হাজির হবেন সচিন। কিছুক্ষণের জন্য।
‘‘অনেক ক্রিকেটারই সঙ্গীত ভক্ত। আমিও ব্যতিক্রম নই। আর জাকিরজির মতো ব্যক্তিত্বর কথা তো সবাই জানেন। ওঁর সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করাটা বড় ব্যাপার। এই শো-এর জন্য আমিও মুখিয়ে রয়েছি,’’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনন্দবাজারকে ইমেলে জানালেন সচিন স্বয়ং।
পরিবারের সঙ্গে ছুটিতে যাওয়ার ব্যস্ততার মাঝেই জানালেন, মূলত দুঃস্থ শিশুদের সাহায্য করতেই তাঁর এই শো। ‘‘এই শো-টা আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল, কারণ এর পুরো টাকাটাই চ্যারিটির উদ্দেশে ব্যবহৃত হবে,’’ বলছেন সচিন।
নিজের গানের ব্যাপারে অবশ্য এখনই মুখ খুলতে নারাজ সচিন। শুধু বলছেন, ‘‘জাকিরজির সঙ্গে মঞ্চে ওঠার জন্য আমি ভীষণ এক্সসাইটেড।’’
এই প্রথম যে-হেতু এক সঙ্গে মঞ্চে দেখা যাবে দুই মহাতারকাকে, সেই জন্য উদ্যোক্তারাও কিছুটা সাসপেন্স রাখতে চাইছেন। ‘‘এই অনুষ্ঠানের জন্য এক পয়সাও পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না কেউই। একটি সামাজিক কারণেই এই আয়োজন,’’ মুম্বই থেকে আনন্দবাজারকে বললেন অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক সুনন্দন লেলে।
অনুষ্ঠানের ভাবনাটা উদ্যোক্তাদের মাথায় আসে গত ফেব্রুয়ারিতে, যখন হঠাৎ-ই এক সৌজন্য সাক্ষাতে সচিনের বাড়িতে হাজির হন জাকির স্বয়ং। সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি প্রকাশিত হলেও অনুষ্ঠানের ব্যাপারে মুখ খোলেননি কেউই। ‘‘সে দিনের ওই সাক্ষাতের পরেই এ রকম এক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিই ওঁদের। শুনেই দু’জনে রাজি হয়ে যান। ছুটি থেকে ফিরে অনুষ্ঠানের জন্য নিয়মিত রিহার্সাল করবেন সচিন,’’ বলছিলেন লেলে।
অতীতে এ রকম বেশ কিছু অনুষ্ঠানের প্রস্তাব এলেও তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন সচিন। তবে এ বারেরটা ব্যতিক্রম। বন্ধু লেলের অনুরোধ ফেলতে পারেননি সচিন। রাজি হয়ে যান। তবে জানিয়ে দেন, পুরোপুরি তৈরি হয়ে তবেই ‘নতুন পিচে’ নামবেন।
এবং সেই জন্য মুম্বইয়ে সচিনের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এখনও পুরোপুরি তৈরি না হওয়ার কারণেই নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে চুপ সচিন। তবে ছুটি থেকে ফিরেই জোর কদমে তৈরি হবেন অনুষ্ঠানের জন্য। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে হাজির হবেন জাকিরের বাড়িতেও।
ক্রিকেট জীবনে বহু রেকর্ডের মালিক যেন তবলা উস্তাদের সঙ্গে নতুন ম্যাচের আগে একটু টেনশনে। আসলে, ক্রিকেটের হৃদকমলে এখন যে তালবৈশাখী!