সাইনা কি আর চাইলেও পাবেন তাঁকে? বোধহয় না।
পুল্লেলা গোপীচন্দ নামক গ্রহ থেকে এখন অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছেন সাইনা নেহওয়াল নামক উপগ্রহ। দু’জনের গতিপথও এখন অনেকটাই আলাদা। গোপীও বুঝিয়ে দিলেন, কেন তিনি আর দেশের সেরা ব্যাডমিন্টন তারকাকে সময় দিতে পারছেন না।
দশ বছর গোপীচন্দের গুরুকুলে থাকার পর কেন তাঁকে বিদায় নিতে হচ্ছে, তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাইনা অভিমানের সুরে বলে এসেছেন, “গোপী স্যর এখন আর আমাকে বেশি সময় দিতে পারছেন না। উনি খুব ব্যস্ত।” যার পরে দেশের ব্যাডমিন্টন মহলে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল, সিন্ধু, কাশ্যপদের তুলে ধরতেই বোধহয় এখন সাইনা-সঙ্গ ত্যাগ করতে হচ্ছে গোপীকে। সেটা যদি একটা কারণ, হয়ে থাকে, তা হলে আর একটা কারণ গোপী-সাম্রাজ্য বিস্তার। যা এখন নিজাম-নগরী হায়দরাবাদের সীমা ছাড়িয়ে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তেও।
গাচ্চিবৌলি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে সপ্তাহে ছ’দিন প্রায় দশ ঘন্টা কাটালেও রবিবার তিনি আর পাঁচজন আম ভারতীয়ের মতোই ছুটিপ্রিয় হয়ে ওঠেন, এমনই শোনা গিয়েছিল। তাই রবিবার সকালে যখন গোপীকে মিনিট দশেকের আড্ডার আবদার জানিয়ে ফোন করা হল, তখন ও প্রান্ত থেকে জবাব এল, “আমি এখন শহরের বাইরে। একটু ব্যস্ত আছি।” ব্যস্ততার কারণ জানতে চাইলে বললেন, “আমার আরও দুটো অ্যাকাডেমি শুরু হচ্ছে বডোদরা আর গ্বালিয়রে। রাজস্থান সরকারও চাইছে ওদের ওখানেও একটা অ্যাকাডেমি করি। ব্যাডমিন্টনকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগটা ছাড়তে চাইছি না।”
বডোদরায় গোপীর অ্যাকাডেমির কাজ প্রায় শেষ। তাদের চলা শুরু হল বলে। পুরোটাই গুজরাত সরকারের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায়। যেখানে ন’টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোর্ট আর একটি ইন্ডোর পুল রয়েছে বলে জানালেন প্রাক্তন অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় তারকা। বললেন, “উঠতি ব্যাডমিন্টন প্রতিভারা যাতে তাদের কেরিয়ারের শুরু থেকেই অত্যাধুনিক পরিকাঠামো পায়, সে জন্যই আমার এই প্রয়াস।”
ও দিকে সাইনার বর্তমান গুরুকুলে আবার আর এক কাণ্ড! বেঙ্গালুরুর আঠারো বছরের এক ব্যাডমিন্টন প্লেয়ারকে অনুর্ধ্ব-১৫ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার ছাড়পত্র দেওয়ার অভিযোগে সাইনার কোচ বিমল কুমারকে আটক করেছে পুলিশ। বেঙ্গালুরুতে ফোন করে এ খবর জানা গেল।
ঘটনাটা শোনা যাচ্ছে গত শুক্রবারের। ড্যানিয়েল ফরিদ নামের ওই প্লেয়ারের বাবা ছেলের জন্মের জাল সার্টিফিকেট পেশ করে এ সব করেছেন বলে অভিযোগ। বিমল কুমার যে-হেতু কর্নাটক টেনিস সংস্থার প্রেসিডেন্ট তাই পুলিশ তাঁকেও রেয়াত করেনি। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগ, তিনি সবই জানতেন।
এ দিন বেঙ্গালুরুতে ফোন করে আরও জানা গেল, বিমল কুমার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু আদালতে অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে কি সাইনা-বিমল কুমার জুটি স্থায়ী হবে? এটাই এখন ভারতীয় ব্যাডমিন্টন মহলে সবচেয়ে দামি প্রশ্ন। সেই গোপীচন্দের কাছেই ফিরে আসবেন না তো অলিম্পিক পদক জয়ী ভারতীয় ব্যাডমিনিটন-কন্যা?
সাইনার প্রাক্তন কোচ বললেন, “আর পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে কী হবে? তা ছাড়া এই ঘটনার কথাও আমি শুনিনি। তাই মন্তব্য না করাই ভাল। সাইনা তো এখন ভালই উন্নতি করছে। উইশ হার অল দি বেস্ট।” সাইনা সম্প্রতি ফ্রেঞ্চ ওপেন কোয়ার্টার ফাইনালে হারার পর বলেছিলেন, “কোচ পরিবর্তন করে আমার ভালই হয়েছে। এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল খেলছি মনে হচ্ছে।”
কিন্তু ঘটনা পরম্পরা ঘুরতে শুরু করলে কী হবে, সেটাই দেখার!