যুক্তরাষ্ট্র ওপেন খেতাব উৎসর্গ দেশকে

অলিম্পিক্সে নিজেই পার্টনার বাছার ইঙ্গিত সানিয়ার

দেশের কিছু মানুষের থেকে তিনি যতই ‘আঘাত’ পান, যতই কোনও কোনও অংশ থেকে ‘বিনা ইস্যুতে’ সমালোচিত হোন— সানিয়া মির্জা তাঁর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন খেতাব উৎসর্গ করলেন আপামর ভারতবাসীকে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার তাঁকে ঘিরে কোর্টের বাইরের বিষয়ে বিতর্কের মধ্যেই সানিয়া গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জিতলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:৪৪
Share:

চ্যাম্পিয়নের দেশে ফেরা। কয়েক দিনের মধ্যেই বোনের বিয়ে (বাঁ দিকে)। উৎসবে যোগ দিতে হায়দরাবাদে সানিয়া। ছবি টুইটার, পিটিআই

দেশের কিছু মানুষের থেকে তিনি যতই ‘আঘাত’ পান, যতই কোনও কোনও অংশ থেকে ‘বিনা ইস্যুতে’ সমালোচিত হোন— সানিয়া মির্জা তাঁর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন খেতাব উৎসর্গ করলেন আপামর ভারতবাসীকে।
এই নিয়ে দ্বিতীয় বার তাঁকে ঘিরে কোর্টের বাইরের বিষয়ে বিতর্কের মধ্যেই সানিয়া গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জিতলেন। এবং দ্বিতীয় বার সেই জয় দেশবাসীকে উৎসর্গ করলেন। প্রথমবার উৎসর্গ করেছিলেন ২০১৪ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন মিক্সড ডাবলস জিতে।
‘‘মাত্র কয়েক জন কী বলল তাকে আমি পাত্তা দিই না। যেহেতু আমার গোটা দেশ আমাকে ভালবাসে,’’ নিউইয়র্ক থেকে দিল্লি হয়ে নিজের শহর হায়দরাবাদে আজ সকালে ফিরে বলেছেন সানিয়া।
নিজের আস্তিনে অসাধারণ সাফল্য আর চারপাশে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক যেন সানিয়া মির্জা নামটার সঙ্গে সমার্থক হয়ে গিয়েছে! যে জন্য যেন আরওই তিনি সমালোচনাকে পাত্তা দেন না। যা জবাব, নিজের র‌্যাকেটেই দেন।
দু’দিন আগে ডাবলস-মিক্সড ডাবলস মিলিয়ে তাঁর পাঁচ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জেতার প্রায় গায়ে-গায়ে সানিয়ার দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান রাজীব খেলরত্ন পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে অন্য এক ভারতীয় খেলোয়াড়ই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ঠিক এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনেই সানিয়া মিক্সড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিন কয়েক আগেও এ দেশের এক রাজনীতিবিদ তীর্যক প্রশ্ন তুলেছিলেন হায়দরাবাদি মেগা কন্যার তেলঙ্গনা রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর মনোনীত হওয়া নিয়ে।
‘‘সত্যি বলতে, আমি এগুলোকে পাত্তাই দিই না,’’ দেশে ফিরে সমালোচকদের পাল্টা দিয়ে সানিয়া আরও যোগ করেছেন, ‘‘আমি খুব একটা নিয়মিত খবরের কাগজ পড়ি না। শুধু টেনিসটা খেলতে চেষ্টা করি। নিজের কাজে সব সময় সেরাটা দিতে চাই। সেটাই আমাকে আনন্দ দেয়। আমি শুধু এটাই জানি যে, কী ভাবে নিজের সেরাটা দিতে হয়। আমি ভাগ্যবান যে, যেটা করি সেটায় বেশ ভালই করি। সে কারণে আমি দিনের শেষে বিজয়ী। এর বাইরে আমাকে নিয়ে সামান্য কিছু লোক কী বলল, সে দিকে আমি নজর দিই না। আমি জানি, ওই ক’টা লোক বাদে গোটা ভারত আমাকে ভালবাসে।’’
এবং দেশের ভালবাসার প্রত্যুত্তরে পাল্টা দেশকেও সম্মান দিলেন সানিয়া। আমেরিকা থেকে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেই বলেছেন, ‘‘আমি সব সময় নিজের সাফল্য আমার দেশকে উৎসর্গ করি। আমার দেশের মানুষকে উৎসর্গ করি। আগেও অনেক বার আমি এ কথা বলেছি। দেশবাসীর ভালবাসা আর সমর্থন আমার ইউএস ওপেন জয়ের পিছনে অবশ্যই রয়েছে। আমি তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’
সানিয়ার ছোট বোন আনমের দিন কয়েকের মধ্যে বিয়ে। নিজেই সে কথা জানিয়ে এ বছরের উইম্বলডন আর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ডাবলস চ্যাম্পিয়ন সানিয়ার মন্তব্য, ‘‘এই মুহূর্তে তাই আমার ফোকাস অন্য জায়গায়। অনেক দিন পরে বাড়ি ফিরে মনে হচ্ছে, আমিও যেন বিয়েবাড়িতে এক জন নিমন্ত্রিত। সব মিলিয়ে দারুণ উত্তেজিত লাগছে। সামনের ক’টা দিন খুব আনন্দে কাটবে। অনেক মজা হবে।’’ বলার সময় সানিয়া যেন সাধারণ আর পাঁচটা তরুণী, যার বাড়িতে বিয়ের উৎসব চলছে!

Advertisement

তবে তার ফাঁকেই মিডিয়াকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ডাবলসে পার্টনার বদলানোর কোনও প্রশ্ন না থাকলেও মিক্সড ডাবলসে পরের বছর নতুন কাউকে পাশে নিয়ে খেলতে পারেন। ‘‘পরের বছরও গ্রেট মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে ডাবলস খেলব। তবে ব্রুনো সোয়ারেসকে নিয়ে মিক্সড ডাবলস খেলব কি না সেটা এই মুহূর্তে আমি নিশ্চিত নই। গত বছর আমাদের জুটি ইউএস ওপেনে মিক্স়ড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হলেও এ বছরটা আমাদের ভাল যায়নি। পরের বছর চুক্তির আগে আমাদের দু’জনকে কয়েকটা বিষয়ে চিন্তা করতে হবে,’’ বলেছেন সানিয়া।’’

সানিয়া-হিঙ্গিস জুটিকে আগুন আর বরফের মিশ্রণ বলা হচ্ছে বিদেশি মিডিয়ায়। সানিয়ার বেসলাইন থেকে বোমার মতো ফোরহ্যান্ড আর নেটের সামনে হিঙ্গিসের ঠান্ডা মাথার রির্টানের জন্য। এ বছর মার্চে জুটি বাঁধার পরে মেয়েদের ডাবলসে ইন্দো-সুইস মহাজুটি ছয় মাসে বারোটা টুর্নামেন্টে নেমে ছ’টা জিতেছেন। যার মধ্যে দু’টো গ্র্যান্ড স্ল্যাম। তা সত্ত্বেও লিয়েন্ডারের মতোই নিজেকে টেনিস প্লেয়ার হিসেবে প্রতি দিন আগের দিনের চেয়ে উন্নততর দেখতে চান সানিয়া। বলছেন, ‘‘আমাদের পার্টনারশিপে এখনও উন্নতির কিছু জায়গা রয়েছে। যেমন আমাকে নেট প্লে-র আরও উন্নতি করতে হবে। মার্টিনাও ব্যাক কোর্ট থেকে খেলার উন্নতি করতে পারে। আমাদের জুটি যতই বিশ্বের এক নম্বর হোক কিংবা আমি যতই ডাবলসে এক নম্বর হই না কেন, প্রত্যেকের খেলায় সব সময় উন্নতির অবকাশ থাকেই।’’

Advertisement

পরের বছর রিও অলিম্পিক্স। তখন তাঁর বয়স হবে ২৯। তবে সানিয়া এখনই মনে করেন, অলিম্পিক্স টেনিসে এ বার ভারতের পদক জেতার বাস্তব সুযোগ আছে। ‘‘সবচেয়ে বাস্তবোচিত সুযোগ মিক্সড ডাবলস পদকের। কিন্তু তার আগে আমাদের অনেক অপেক্ষা করতে হবে, অনেক কিছু দেখার আছে। জুটি নির্বাচনে প্রচুর ভাবনা দরকার যে, কী ভাবে সেরা টিম হতে পারে। যদিও এক বছর দেরি। অলিম্পিক্স কাছাকাছি এসে পড়লে নিশ্চয়ই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে,’’ যদিও তাঁর এই মন্তব্যে এখনই স্পষ্ট— এ বার অলিম্পিক্স মিক্সড ডাবলসে নিজের জুটি বাছাইয়ে তিনি সানিয়া মির্জা-ই শেষ কথা বলবেন! কোনও এআইটিএ, লিয়েন্ডার পেজ, রোহন বোপান্না নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন