দৌড়বাজ। —নিজস্ব চিত্র।
কোনওদিন পান্তা, কোনওদিন ফ্যান ভাত খেয়ে স্কুলে গিয়েছে ছেলেটা। স্কুল থেকে ফিরে খালি পায়েই মাঠে দৌড়াদৌড়ি করত সে। ছোটাটা নেশার মতো পেয়ে বসেছিল ছেলেটিকে। পুরুলিয়া মফস্সল থানার সোনাইজুড়ি গ্রামের সেই কিশোর শশধর মাহাতো সল্টলেকের সাইয়ের মাঠে সদ্য সমাপ্ত রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে ২০০০ মিটারে সোনা জিতে সবাইকে চমকে দিয়েছে। বেলগুমা বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির এই ছাত্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মাঠ আমাকে টানে। সেই টান থেকেই একদিন হাজির হয়েছিলাম মানভূম ক্রীড়া সংস্থার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। সেখান থেকেই নিজেকে প্রমাণ করার যাবতীয় সুযোগ পেয়েছি।’’ সংস্থার অ্যাথলেটিক্স সচিব স্বরূপ ঘোষ জানান, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেই তাঁদের নজরে আসে শশধর। তার এই সাফল্য তাই প্রত্যাশিত।’’
শশধরের পরিবারে দারিদ্রের ছোবল রয়েছে। তার বাবা পরেশ মাহাতো খেতমজুর। কখনও সখনও রাজমিস্ত্রির কাজও করেন। শশধরের কথায়, ‘‘সাইয়ের প্রতিযোগিতায় নামার আগে আমার জুতোও ছিল না। এক বন্ধুর কাছে জুতো ধার করে কলকাতায় দৌড়োতে গিয়েছিলাম।’’ শশধরকে কিছুদিন ধরে দেখিয়ে দিচ্ছেন পুরুলিয়ার অ্যাথলেটিক্স বিভাগের প্রশিক্ষক গৌতম চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় শশধর নিজের ইভেন্টে ৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড সময় করে ২০০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছে। আমরা এ বার ওর নিজের জন্য একজোড়া জুতোর ব্যবস্থা করে দেব।’’ শশধরের অবশ্য জুতো নিয়ে ততটা মাথাব্যথা নেই। সে আরও দৌড়োতে চায়, নিজের জেলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তার ইচ্ছে, ‘‘আমি গ্রামের ছেলে। প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই। আমি শুধু ভাল দৌড়ের জন্য প্রশিক্ষণ চাই।’’
মানভূম ক্রীড়া সংস্থার অ্যাথলেটিক্স সচিব জানিয়েছেন, রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে শশধর ছাড়াও জেলার আরও চারজন প্রতিযোগী সফল হয়েছে। পুরুষ বিভাগে ডিসকাসে অরবিন্দ সিংহ রূপো, শশাঙ্ক মাহাতো ১৫০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ, অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে লং জাম্পে চন্দনা কর্মকার রূপো এবং অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগে লক্ষণ মাঝি ১৫০০ মিটার দৌড়ে রূপো পেয়েছে।