হকি-যুদ্ধ জয়ের রেশ

পাকিস্তান বধ সর্দারদের উত্তরসূরি দিয়ে গেল, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

দেশবাসীকে ভারতীয় হকি দলের দিওয়ালির উপহারের কী তাৎপর্য? চব্বিশ ঘণ্টা আগে চিরশত্রু পাকিস্তানকে হারিয়ে সর্দার সিংহদের এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হাতে তোলার দু’টো তাৎপর্য হকি বিশেষজ্ঞদের মতে। এক) রিও অলিম্পিক্সে আট নম্বরে শেষ করলেও এশীয় হকির মানচিত্রে ভারত-ই নিঃসন্দেহে সেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:২৬
Share:

ট্রফি নিয়ে মাতৃভূমিতে। সোমবার। ছবি: পিটিআই

দেশবাসীকে ভারতীয় হকি দলের দিওয়ালির উপহারের কী তাৎপর্য?

Advertisement

চব্বিশ ঘণ্টা আগে চিরশত্রু পাকিস্তানকে হারিয়ে সর্দার সিংহদের এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হাতে তোলার দু’টো তাৎপর্য হকি বিশেষজ্ঞদের মতে।

এক) রিও অলিম্পিক্সে আট নম্বরে শেষ করলেও এশীয় হকির মানচিত্রে ভারত-ই নিঃসন্দেহে সেরা। এই মুহূর্তে একইসঙ্গে এশিয়ান গেমস আর এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সোনার পদকের মালিক।

Advertisement

দুই) ২০১৮ বিশ্বকাপ হকির জন্য ভারতীয় দল ঠিক পথে এগোচ্ছে।

অনেক দিন পরে কোনও বিদেশি কোচের অধীনে এ দেশের জাতীয় হকি দলকে চাপের মুখে পারফরম্যান্স করতে, এমনকী চাপের মুখে উঠে দাঁড়িয়ে সফল হতে দেখা যাচ্ছে। গত দু’সপ্তাহ মালয়েশিয়ার কুয়ান্তান যার জ্বলন্ত সাক্ষী। গ্রুপে পাকিস্তান ও উদ্যোক্তা মালয়েশিয়া, সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফাইনালে ফের পাক-যুদ্ধ— প্রতিবার পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে ভারত ম্যাচ বার করে নিয়েছে। পেনাল্টি শ্যুট আউটের মতো স্নায়ুর লড়াইয়ে শশার মতো ঠান্ডা থেকে সফল হয়েছে। খেলার শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে বসার পুরনো রোগ থেকে শ্রীজেসরা প্রায় মুক্ত। ডাচ কোচ রোল্যান্ট অল্টমান্সের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব বোধহয় এখানেই।

কেউ কেউ আবার হকিতে ভারতের সেরা পাঁচটা পাক-বধের তালিকায় রাখতে চাইছেন সর্দারদের রবিবারের জয়কে। তুলনা চলছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছাপ্পান্ন ও চৌষট্টি অলিম্পিক্স ফাইনাল, পঁচাত্তরের বিশ্বকাপ ফাইনাল এবং ২০০৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিরাট ব্যবধানে (৭-৪) জয়ের সঙ্গে।

দ্বিতীয় বার এশীয় সেরা হয়ে অল্টমান্সের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, এই ভারতীয় দলকে আরও বড় মঞ্চে সফল হতে হবে। তবেই বোঝা যাবে টিমটা সত্যিকারের বিশ্বমানের। ভারতের চিফ কোচের টার্গেট যে ২০১৮ বিশ্বকাপ, সেটা বোধহয় এর পরে বলার আর উল্লেখ রাখে না। ভারতীয় হকির ওয়াকিবহাল মহলের অবশ্য আশঙ্কা, সর্দার, শ্রীজেস, রঘুনাথের মতো আন্তর্জাতিক সিনিয়র তারকারা কালের নিয়মে কয়েক বছরের মধ্যে মাঠকে বিদায় জানালে তাঁদের বিকল্প কে বা কারা? কিন্তু কারও কারও আবার ধারণা, এর উত্তরও এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়েছে অনেকটাই। তরুণ প্রদীপ মোর, জসজিৎ সিংহ কুলার, সুরেন্দর কুমার, আফফান ইউসুফ, নিক্কিন থিমাইয়া, আকাশ চিকটে-রা শ্রীজেস-সর্জারদের হাত থেকে ভারতীয় হকির ব্যাটন তুলে নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত। রবিবার ভারত-পাক হাই প্রোফাইল ফাইনালে শ্রীজেস হ্যামস্ট্রিংয়ের প্রচণ্ড যন্ত্রণায় নামতে পারেননি। কিন্তু চিটকে চাপের মুখে একটুও ‘প্যানিক’ না করে ভারতের গোলপোস্ট রক্ষা করেন। দু’বার পরাস্ত হলেও দু’-তিনটে ভাল সেভও করেছেন। আর থিমাইয়ার অসাধারণ ফ্লিকে করা গোলেই তো ভারতের ট্রফি জয় ফাইনালে।

গুরবক্স সিংহ থেকে ধনরাজ সিংহ— দে‌শের ভিন্ন প্রজন্মের প্রাক্তন হকি কিংবদন্তিরা ভারতের সাফল্যের পিছনে এইচআইএলের অবদান দেখছেন। তাঁদের মতে, গত কয়েক বছর হকি ইন্ডিয়া লিগে ভারতীয় প্লেয়াররা বিশ্বের নামীদের সঙ্গে এক টিমে খেলছেন। এক ড্রেসিংরুম ‘শেয়ার’ করছেন। বিশ্ব তারকাদের সঙ্গে এই গা ঘষাঘষির তো একটা ভাল প্রভাব তরুণ ভারতীয়দের নিজেদের খেলায় পড়বেই। আর একটা তাৎপর্যের ব্যাপার— সর্দারদের এই ট্রফি জয়ে ভারতের রাজনৈতিক মহলে যেন বাড়তি আলোড়ন ফেলেছে।

যার পরিষ্কার কারণ, ভারত-পাক সাম্প্রতিক প্রবল রাজনৈতিক টেনশনের মধ্যে ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এ দেশে ঢুকল। যার পরে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী, শাসক বিজেপি দলের সভাপতি থেকে শুরু করে লালু প্রসাদ যাদবের মতো বিরোধী নেতাও ভারতীয় হকি দলকে প্রশংসাসূচক টুইটারে ভরিয়ে দিয়েছেন।

কুয়ান্তানের হকি মাঠে তো নয়, যেন পাক সীমান্তে ভারতের যুদ্ধ জয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন