গভীর রাতে শহরের হোটেলে সস্ত্রীক শাহরিয়র। সঙ্গে সিএবি কোষাধ্যক্ষ্য বিশ্বরূপ দে। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতায় নেমেও প্রায় ছ’ঘন্টা বিমানবন্দরে আটকে থাকার পর শহরে ঢুকতে পারলেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড চেয়ারম্যান শাহরিয়র খান। ভিসা বিভ্রাটে এবং ভুল বোঝাবুঝি— দুই মিলে এতক্ষণ আটকে থাকতে হল আশি বছর বয়স্ক পাক বোর্ড প্রধানকে। বিকাল সাড়ে পাঁচটায় কলকাতায় নামার পর রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত আটকে থাকতে হয় বিমানবন্দরে। শেষ পর্যন্ত এই নাটকের যবনিকা নামে গভীর রাতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার তৎপরতায়। সার্ক ভিসা থাকায় অবশেষে শহরে ঢুকতে পারলেন শাহরিয়র। ফলে সন্ধ্যায় রবিবারের দুই বোর্ডের শীর্ষবৈঠকের আকাশে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ দেখা দিলেও রাতে সেই মেঘ সরে যায়।
কিন্তু কেন আটকানো হল তাঁকে?
এ দিন বিকেলে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ জেট এয়ারওয়েজের উড়ানে ঢাকা থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন শাহরিয়র খান। পাকিস্তানের চলতি বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। কলকাতায় এসে বিমান থেকে নেমে অভিবাসন দফতরের দিকে যেতেই তাঁকে আটকান বিমানবন্দরের অভিবাসন দফতরের অফিসাররা।
তাঁদের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী, পাকিস্তানের কোনও নাগরিককে এ দেশের কোন শহরে পৌঁছতে হলে তাঁকে দিল্লি বা ওয়াঘা সীমান্ত হয়ে ঢুকতে হয়। সরাসরি অন্য কোনও শহরের বিমানবন্দরে নামার অনুমতি নেই পাকিস্তানিদের। কিন্তু কোনও পাকিস্তানি নাগরিক সার্ক ভিসা নিয়ে এলে তাঁর ক্ষেত্রে অন্য নিয়ম। তিনি যে কোনও শহর দিয়েই ভারতে ঢুকতে পারেন। অভিবাসন দফতরের কর্তারা নাকি বুঝতেই পারেননি যে শাহরিয়রের কাছে সাধারণ ভিসা নয়, সার্ক ভিসা রয়েছে। এই ভুল বোঝাবুঝিতেই বিপত্তি।
পুরো ঘটনাটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে জানান বোর্ড প্রেসিডেন্ট ডালমিয়া। তার আগে ডালমিয়ার সঙ্গে শাহরিয়রের কথা হয়। তখনই পাক বোর্ড প্রধান সার্ক ভিসার বিষয়টি তাঁকে বলেন। রাতে বোর্ড প্রেসিডেন্ট সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-কেও বিমানবন্দরে পাঠান অভিবাসন দফতরের কর্তাদের বিষয়টি (সাধারণ ভিসা ও সার্ক ভিসার নিয়মের তফাত) বোঝানোর জন্য। বিমানবন্দর থেকে শাহরিয়রকে নিয়ে বেরিয়ে আসার পর রাতে বিশ্বরূপ বলেন, ‘‘ব্যাপারটা বোঝানোর পরই নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন অভিবাসন কর্তারা। তার পর আর তাঁকে আটকে রাখেননি ওঁরা।’’ শাহরিয়র বিমানবন্দরে বলে যান, ‘‘আমার কোনও সমস্যা হয়নি। আসলে নিয়মের ভুল বোঝাবুঝির জন্য যত সমস্যা।’’
শাহরিয়র বোর্ড প্রেসিডেন্টের শহরে ঢুকতে পারছেন না শুনে সন্ধ্যায় বিদেশ মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন বোর্ডের শীর্ষকর্তারা। রাজীব শুক্ল, অনুরাগ ঠাকুর, ডালমিয়ারা তাঁদের সঙ্গে কথা বললেও বরফ গলেনি। শেষ পর্যন্ত ডালমিয়ার আবেদনে অরুণ জেটলি আসরে নামায় সমস্যা মিটল।
শনিবার রাত পর্যন্ত যা অবস্থা ছিল, তাতে হয়তো শাহরিয়রকে হয় ভারতের বাইরে গিয়ে ফের দিল্লি হয়ে তাঁকে কলকাতায় ফিরতে হত। নয়, কোনও আন্তর্জাতিক বিমানে দিল্লি গিয়ে তার পর কলকাতায় আসতে হত। তাতে যা সময় লাগত, তার পর রবিবার দুপুরে তাঁর পক্ষে ডালমিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসা সম্ভব হত না।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সব কিছু মিটে যাওয়ায় ভারত-পাক ক্রিকেট সম্পর্ক নিয়ে দু’দেশের বোর্ডের বৈঠক হচ্ছে আজ, রবিবার বিকেলে।