শরদকুমার যাদব
ছিপ ছিপে লম্বা গড়ন। উচ্চতা পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি। বাঁ পা পোলিও আক্রান্ত।
কিন্তু তাতে কী?
সেই স্কুলের পড়ার সময় দৌড় শুরু করত। সামনে এসে ডান পায়ের উপর জোর দিয়ে শরীরটাকে ভাসিয়ে দিত বারের উপর দিয়ে। শরীরটা মাটি ছোঁয়ার আগেই চারিদিক ফেটে পড়ত হাততালিতে। পাহাড়ের স্কুলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাঁকে ঘিরে বাড়তি উন্মাদনা দেখা যেত পড়ুয়াদের মধ্যে। পোলিও আক্রান্ত পা নিয়েই আর পাঁচ জন সাধারণ ছেলের সঙ্গেই প্রতিয়োগিতায় অংশ নিয়ে তাক লাগিয়ে দিত ছেলেটি। এ বছর প্যারা অলিম্পিকে হাইজাম্পে বিশ্বের তৃতীয় এক সময় দার্জিলিঙের সেন্ট পল স্কুলের ছাত্র শরদ। পুরো নাম শরদকুমার যাদব।
গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে রিও দে জেনেইরোতে শুরু হয়েছে প্যারা অলিম্পিক। তাতে যোগ নিয়েছে শরদ। আজ শনিবার ভোরে ওই অলিম্পিকে হাইজাম্পে অংশ নেবেন তিনি। তাঁর সাফল্য নিয়ে আশাবাদী পরিচিতেরাও। পটনার বাসিন্দা হলেও স্কুলে পড়ার সুবাদে শরদের একটা সময় কেটেছে দার্জিলিঙে। সেই সুবাদে সেন্ট পল স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী থেকে বর্তমানে শিক্ষকদের অনেকের মন পড়ে রয়েছে রিও দে জেনেইরোর প্যারা অলিম্পিকের দিকে। সেখানে হাজির থাকতে পারছেন না তাঁরা। তবে দূর থেকেই শরদের সাফল্য কামনা করছেন সকলে।
সেন্ট পল স্কুলের অধ্যক্ষ জয় হালদার বলেন, ‘‘আমি যখন স্কুলে যোগ দিয়েছিলাম, তখন ও ছিল না। তবে আমরা সকলেই শরদের কথা জানি। অনেক লড়াই করে ওকে এই জায়গায় পৌঁছতে হয়েছে। ও যেখানে পৌঁছেছে সেটাই একটা বড় ব্যাপার। ও ভাল কিছু করবে এই প্রত্যাশা তো রয়েইছে।’’
২৪ বছরের এই তরুণের উদ্যম দেখে সে সময়ই অবাক হত স্কুলের ছাত্র, শিক্ষকেরা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯২ সালে মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়ে দেয় শরদের বাঁ পায়ে ৮৫ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যদিও তা দমাতে পারেনি তাঁকে। সেন্ট পল স্কুলের প্রাক্তনী আদিত্যকুমার, নিখিল খেতনের মতো সতীর্থরা ভোলেননি পুরনো দিনের সেই স্মৃতি।
শরদের রেকর্ড রয়েছে ২০১৪ এশিয়ান গেমসে ১.৮০ মিটার লাফানোর। অলিম্পিকে অগ্নি পরীক্ষার মুখে বুক কেঁপে উঠছে তাঁরও। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন ওই তরুণ। রিও থেকেই জানাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি চাই সেরাটা উগরে দিতে। কিছুটা নার্ভাস লাগছে অনেক সময়। তবে নিজেকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করছি। শনিবার সকালে জাম্প। আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চাই। আশা করি আমি পারব। আমি সকলের জন্য এটা করে দেখাতে চাই। আমাকে পারতেই হবে।’’