সেরার গ্রহে শিখর-রোহিত

এশিয়া কাপে দু’টো ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ দেখার পরে একটা ব্যাপারে আমি একমত। তা হল—এই পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের ক্রিকেটীয় দক্ষতা, ভাবনা ও প্রতিভার চেয়ে এক আলোকবর্ষ এগিয়ে ভারতীয়রা।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০০
Share:

পরামর্শ: ম্যাচের মাঝে আলোচনায় বুমরা ও ধোনি। এপি

এশিয়া কাপে দু’টো ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ দেখার পরে একটা ব্যাপারে আমি একমত। তা হল—এই পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের ক্রিকেটীয় দক্ষতা, ভাবনা ও প্রতিভার চেয়ে এক আলোকবর্ষ এগিয়ে ভারতীয়রা।

Advertisement

ঠিক এই কারণেই, এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ভারত-পাক ম্যাচেও একতরফা জিতল ভারত। নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান করেছিল ২৩৭। সেই রান তাড়া করতে নেমে ভারতের ওপেনিং জুটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রান (২১০) তুলে ধ্বংস করলেন সরফরাজ আহমেদের দলকে। জোড়া শতরান রোহিত শর্মা (১১১) ও শিখর ধওয়নের (১১৪)। ৬৩ বল বাকি থাকতেই নয় উইকেটে ম্যাচ জিতল ভারত।

এ দিন ভারত রান তাড়া করতে নেমে দশ ওভারে বিনা উইকেটে ৫০ রান করার পরেই কাঁধ ঝুলে গিয়েছিল পাক অধিনায়কের। ভারতের রান আটকানোর জন্য সরফরাজকে কোনও চেষ্টাই করতে দেখলাম না। রোহিত-শিখরদের আক্রমণই করল না পাকিস্তান। স্লিপ ছাড়াই বল করে গেলেন পাক বোলাররা। সঙ্গে কুৎসিত ফিল্ডিং, ক্যাচ ফেলার প্রদর্শনী। এর পরে ভারতের বিরুদ্ধে জেতার চিন্তা না করাই ভাল। তাই এই লজ্জাজনক হার পাকিস্তানের।এ দিনের ম্যাচে পাকিস্তানের হয়ে নজর কাড়লেন দু’জন। ব্যাট হাতে শোয়েব মালিক (৭৮ রান)। আর বল হাতে শাহিন আফ্রিদি। হাই আর্ম বোলিং অ্যাকশনে ছেলেটি লাইন ও লেংথে অভ্রান্ত। সঙ্গে গতির হেরফের করে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলতে পারেন। বাকিদের নিয়ে যত কম বলা যায় তত ভাল।

Advertisement

যে দু’টো শতরান হল এই ম্যাচে, তার মধ্যে আমি শিখরের শতরানকেই এগিয়ে রাখব। কয়েক সপ্তাহ আগেও ইংল্যান্ডে লাল বলের ক্রিকেটে যাঁকে বিপর্যস্ত লাগছিল, সেই শিখর সাদা বলে ফিরতেই ফিরে যেন ফুটবল দেখছেন। এ দিন শিখর ধ্রুপদি মেজাজে ব্যাট করে গেলেন। মহম্মদ আমিরকে এক ওভারে দু’টো নিখুঁত স্ট্রেট ড্রাইভে চার মারলেন। যা ডেভিড গাওয়ারকে মনে করাচ্ছিল। এ দিন রান করার জন্য শিখর মিড উইকেট ও মিড অনের মাঝামাঝি জায়গাটা বেছে নিয়েছিলেন। সেখান দিয়েই বেশির ভাগ রান করে গেলেন এই ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান।

স্কোরকার্ড

পাকিস্তান ২৩৭-৭ (৫০)
ভারত ২৩৮-১ (৩৯.৩)

পাকিস্তান রান বল
ইমাম উল এলবিডব্লিউ বো চহাল ১০(২০)
ফখর এলবিডব্লিউ বো কুলদীপ ৩১ (৪৪)
বাবর আজম রান আউট চহাল ৯ (২৫)
সরফরাজ ক রোহিত বো কুলদীপ ৪৪ (৬৬)
শোয়েব মালিক ক ধোনি বো বুমরা ৭৮( ৯০)
আসিফ আলি বো চহাল ৩০(২১)
শাদাব খান বো বুমরা ১০ (১৬)
মহম্মদ নওয়াজ় ন.আ. ১৫(১৬)
হাসান আলি ন.আ ২(২)
অতিরিক্ত ৮
মোট ২৩৭-৭ (৫০)
পতন: ১-২৪ (ইমাম উল, ৭.৬), ২-৫৫ (ফখর, ১৪.৩), ৩-৫৮ (বাবর, ১৫.৫), ৪-১৬৫ (সরফরাজ, ৩৮.৫), ৫-২০৩ (শোয়েব, ৪৩.৪), ৬-২১১ (আসিফ, ৪৪.৫), ৭-২৩৪ (শাদাব, ৪৯.৩)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ৯-০-৪৬-০, যশপ্রীত বুমরা ১০-১-২৯-২, যুজবেন্দ্র চহাল ৯-০-৪৬-২, কুলদীপ যাদব ১০-০-৪১-২, রবীন্দ্র জাডেজা ৯-০-৫০-০, কেদার যাদব ৩-০-২০-০।

ভারত রান বল
রোহিত শর্মা ন. আ. ১১১ ( ১১৯)
ধওয়ন রান আউট শোয়েব ১১৪ (১০০)
অম্বাতি রায়ডু ন. আ. ১২ (১৮)
অতিরিক্ত ১
মোট ২৩৮-১ (৩৯.৩)
পতন: ১-২১০ (ধওয়ন, ৩৩.৩)।
বোলিং: মহম্মদ আমির ৫-০-৪১-০ শাহিন আফ্রিদি ৬-০-৪২-০, হাসান আলি ৯-০-৫২-০, মহম্মদ নওয়াজ় ৭-০-৩৫-০, শাদাব খান ৮-০-৫৪-০, শোয়েব মালিক ৪.৩-০-১৪-০।

অন্য দিকে, রোহিত শর্মা যে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কতটা ভয়ঙ্কর তা সবাই জানেন। রবিবার একদিনের ক্রিকেটে সাত হাজার রান পূর্ণ করে ফেললেন তিনি। নতুন বলে মহম্মদ আমিরকে খেলার সময় দেখছিলাম রোহিত বাঁ দিকের কাঁধটা মিড অনের দিকে রেকে স্টান্স নিচ্ছিলেন। আর লেগ স্টাম্পটা ছেড়ে দাঁড়াচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য,অতীতের মতো মহম্মদ আমিরের বলে যেন এলবিডব্লিউ না হন।

শুরুতেই দুই দলের ক্রিকেট ভাবনা ও প্রতিভার তুলনা করেছিলাম। তার একটা উদাহরণ দিই। পাক অধিনায়ক এ দিন শাদাব খানকে অনেক পরামর্শ দিচ্ছিলেন। কিন্তু রোহিত মিড উইকেটের উপর দিয়ে শাদাবকে ছক্কা মারার পরে সরফরাজকে বলতে শুনলাম, ‘‘বলটা একটু উপরে রাখ।’’ পরের বলে শাদাব বল উফরে রাখতেই কভার ড্রাইভ করে চার মারলেন রোহিত। তখন টিভি ক্যামেরায় পাক অধিনায়কের মুখটা ধরল। দেখলাম চাপগ্রস্ত চোখমুখ। কোনও ‘প্ল্যান বি’ না থাকায় কিংকর্তব্যবিমূঢ়!

অন্য দিকে, ভারত অধিনায়ক পাওয়ার প্লে চলার সময় বল করতে ডেকেছিলেন যুজবেন্দ্র চহালকে। পাঁচ বল পরেই চহালের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে প্যাভিলয়নে ফিরলেন পাকিস্তান ওপেনার ইমাম উল হক (১০)। এক্ষেত্রে প্রথমে আম্পায়ার আউট দেননি। টিভিতে দেখলাম চহাল সঙ্গে সঙ্গেই উইকেটকিপার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দিকে তাকালেন। ধোনি ঘাড় নাড়তেই রিভিউয়ের জন্য আবেদন। আর তাতেই ড্রেসিংরুমে ফেরার রাস্তা তৈরি হয়ে যায় ইনজামাম উল হকের ভাইপোর। এটা ঠিক যে রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত উইকেটকিপারই ভাল নিতে পারেন। কিন্তু ধোনির একটা বড় গুণ হল, রিভিউয়ের ক্ষেত্রে ওঁর নিখুঁত অনুমান। মজা করে তাই বলা যায়, ডি আর এস-এর নাম বদলে ধোনি রিভিউ সিস্টেম বলা যেতেই পারে। আমার মতে তাই ইমামের উইকেটটা চহালের (২-৪৬) নয়। ওই উইকেটটা নিয়েছেন ধোনি।

পাকিস্তানের অপর ওপেনার ফখর জ়ামান বুঝতে পারছিলেন না যশপ্রীত বুমরা, চহাল, কুলদীপ যাদবদের কী ভাবে সামাল দেবেন। এটা হওয়ারই কথা। রান না পেলে আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকে। তখন বেশি বল খেলার প্রবণতা বাড়ে। ফখরের (৩১) ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আত্মবিশ্বাস এতটাই তাঁর কমেছে যে কুলদীপ যাদবের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার সময় রিভিউ নিতেই পারতেন। তা হলে বেঁচে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকতে পারত। কিন্তু ফখর কোনও রিভিউ নেননি। পিচে ঘাসের চিহ্নমাত্র ছিল না। বল না ঘুরছিল বা জোরে আসছিল। ব্যাটিংয়ের জন্য একদম আদর্শ উইকেট। টেম্পারামেন্ট ও মনোঃসংযোগ থাকলে এই পিচ থেকে রান আসবেই। কিন্তু পাক ব্যাটসম্যানরা উইকেট ছুড়ে দিচ্ছিলেন। যেমন বাবর আজমের (৯) রান আউট হওয়া। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা পাক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ (৪৪) রান নিতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও বাবর রান নিতে গেলেন। পয়েন্ট থেকে চহালের ‘ওয়ান ড্রপ থ্রো’ সরাসরি চলে গিয়েছিল বোলার রবীন্দ্র জাডেজার কাছে। তিনি রান আউট করতে কোনও ভুল করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement