শ্রেয়স আইয়ার
বিশ্বের এক নম্বর ও আট নম্বরের মধ্যে লড়াইটা যেমন হওয়া উচিত, বিশাখাপত্তনমে রবিবার তেমনই হল। ভারত প্রায় উড়িয়ে দিল শ্রীলঙ্কাকে। শুরুতে ভাল ব্যাটিং আর রোহিত শর্মাকে বোকা বানিয়ে আকিলা ধনঞ্জয়ের আউট করা ছাড়া অবশ্য ওদের খেলায় ইতিবাচক কিছু পাওয়া গেল না।
শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় উইকেটে প্রায় ১৯ ওভারে ১২১ রানের পার্টনারশিপ হওয়া সত্ত্বেও রানটা ২১৫-র বেশি নিয়ে যেতে পারল না ভারতীয় বোলারদের দুর্দান্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের জন্য।
বিশেষ করে কুলদীপ যাদব। ওর একই ওভারে দুই ব্যাটসম্যান উপুল তরঙ্গা ও নিরোশন ডিকওয়েলার ফিরে যাওয়ার পরই ম্যাচটা ঘুরে গেল। ওই একটা ওভারই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। আসলে শ্রীলঙ্কার দলে কয়েকজন মাত্র আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ, তরঙ্গা, ডিকওয়েলা, সুরঙ্গা লাকমল ও আকিলা ধনঞ্জয়। বাকিরা এতই সাধারণ মানের যে, ওরা ব্যর্থ হলে আর সামলানোর কেউ থাকে না।
তাও তরঙ্গা এ দিন সেট হয়ে যাওয়ার পরেও যে ভাবে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে আউট হয়, তা বোধহয় এখানকার স্কুল ক্রিকেটেও হয় না। ধোনি অবশ্য বলের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বলটাকে নজরে রেখেছিল। কিন্তু তরঙ্গা কেন বেপরোয়া ভাবে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এল, এটাই প্রশ্ন।
অনেকের হয়তো অবাক লেগেছে রোহিত শর্মার আউট দেখেও। ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর পরেই এ ভাবে আউট! কিন্তু আমার লাগেনি। কারণ, আমি জানি, বড় রান করার পরের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাসের মাত্রা খুব বেশি থাকে। তখন সব বলই মেরে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে। রোহিতেরও এ দিন সেই প্রবণতা ছিল বলেই মনে হল।
যে বলটায় ওকে আউট করল ধনঞ্জয়, সেই বলটায় রোহিত স্রেফ বোকা বনে গিয়েছে। ধনঞ্জয় এমন এক জন স্পিনার, যে অফ ব্রেক, লেগ ব্রেক, গুগলি সবই দিতে পারে। আগের বলেই ওর গুগলিতে চার মেরেছিল রোহিত। কিন্তু পরের গুগলিটা বুঝতেই পারল না। ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক দিয়ে গলে স্টাম্প উড়িয়ে দিল।
তবে শ্রেয়স আইয়ার এ সিরিজেই বুঝিয়ে দিল, ওকে নিয়ে ভাবার সময় এসে গিয়েছে নির্বাচকদের। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের চার নম্বর জায়গাটা নিয়ে তো রীতিমতো লটারি চলছে। এখন পর্যন্ত পাকাপাকি ভাবে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই সিরিজে মুম্বইয়ের এই ছোটখাটো ছেলেটাকে দেখে মনে হল, বিরাট কোহালি দলে ফিরে এলে ওকে চার নম্বর জায়গাটার জন্য ভাবা যেতেই পারে। নিখুঁত মুম্বই ঘরানার ক্রিকেটার শ্রেয়স। সোজা ব্যাটে শট নেয়। রবিবারেও সোজা ব্যাটে অসাধারণ একটা ছয় মারল। আইপিএলে ও স্কুপ শটটায় খুব উন্নতি করেছে, যেটা ওকে প্রায়ই খেলতে দেখা যায়। রবিবার ৬৩ বলে ৬৫ করার আগে মোহালিতে ও ৮৮ করেছে। এখান থেকে ১০০-য় পৌঁছতে পারছে না ও। এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারলে ও কিন্তু চার নম্বরে খেলার জন্য তৈরি হয়ে যাবে।
সিরিজ সেরা হিসেবে শিখর ধবনের বাছাইটা যথার্থ। সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ধবন। যে কোনও ফর্ম্যাটেই ও নিজেকে ক্রমশ উপযোগী ব্যাটসম্যান করে তুলছে। টেকনিক থেকে ফুট মুভমেন্ট, সব কিছুতেই ক্রমশ উন্নতি করছে। এই উন্নতিটা দক্ষিণ আফ্রিকায় দারুণ কাজে আসবে।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে এই প্রস্তুতির সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট সিরিজের তেমন সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। এই সিরিজ থেকে আমাদের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে অনেকটাই। তবে ওখানে ওদের তরতাজা হয়ে নামতে হবে। ক্রিকেটীয় দক্ষতায় ওরা সব দিক থেকেই তৈরি। এ বার ডেল স্টেনদের দেশে ওখানকার পরিবেশ অনুযায়ী সেই দক্ষতা মেলে ধরাটাই আসল কাজ।