মরা উইকেটে মরা ক্রিকেট— রবিবার রাজকোটের মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ঠিক সেটাই দেখা গেল। যেখানে বাংলার ব্যাটসম্যানরা সারা দিন অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করে যা করলেন, তা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়। সারা দিনে ৯০ ওভারে ১৯০-৩।
এমনিতেই নিরপেক্ষ ভেনুতে রঞ্জির সব ম্যাচ করার সিদ্ধান্ত দেশের সেরা ঘরোয়া টুর্নামেন্টের সামান্য জনপ্রিয়তাকেও উধাও করে দিয়েছে। তার উপর এ রকম গতি-বাউন্সহীন উইকেটে ছটফট করতে থাকা ব্যাটসম্যানরা যা করলেন, তাতে আর যাই হোক ভাল ক্রিকেট আশা করা যায় না।
মনোজ তিওয়ারি, যিনি ইদানীং আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের কথাই বেশি বলেন, মাঠে নেমেও সেটাই করার চেষ্টা করেন। বাংলার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যাঁর স্ট্রাইক রেটই সবচেয়ে বেশি (৫৯), সেই বাংলার অধিনায়ক এ দিন ৩৪.৭৮-এর স্ট্রাইক রেট নিয়ে ব্যাট করলেন। ১৬১ বলে ৫৬। উইকেটে সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি পড়ে থেকে।
অভিমন্যু ঈশ্বরন, যিনি মরসুমের প্রথম রঞ্জি ম্যাচেই জোড়া সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু করেছিলেন, সেই ওপেনার এ দিন ৯৮ বলে ৩১ তুলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন। সায়নশেখর মণ্ডল শুরুতেই কোনও রান না পেয়ে আউট হয়ে গেলেন। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ও এ রকমই ধীর গতিতে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু বাংলার এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ৩৪ তোলার পরই তাঁর বাঁ পায়ে হ্যামস্ট্রিং সমস্যা শুরু হয়ে যায়। খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছেড়ে বেরতে হয় তাঁকে। রাতে বাংলা শিবির থেকে অবশ্য বলা হল এমন কিছু সিরিয়াস নয়। হালকা টান ধরেছে। সোমবার ব্যাট করতে নামবেন।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিন ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা নবাগত অগ্নিভ পান বরং এঁদের মধ্যে কিছুটা গতিময়। প্রায় ৩৯-এর স্ট্রাইক রেটে ৫১ তুলে ক্রিজে আছেন শ্রীবৎসকে সঙ্গে নিয়ে।
কেন বাংলার ব্যাটিং স্লো মোশনে এগলো এ দিন? জানা গেল, একেই এমন উইকেট, তার উপর প্ল্যান অনুযায়ী বিপক্ষের বোলিং। এই দুইয়ে কাবু বাংলার ব্যাটসম্যানরা। সবচেয়ে বেশিক্ষণ ব্যাট করা বঙ্গ অধিনায়ক মনোজ রাজকোট থেকে ফোনে বলেন, ‘‘উইকেট খুব স্লো। বল ব্যাটেই আসছে না। এ রকম উইকেটে স্ট্রোক নেওয়া খুব কঠিন।’’ সেই জন্যই সারা দিনে ২.১১-এর গড়ে রান তোলে বাংলা।
বিপক্ষের বোলিং নিয়ে মনোজ বলেন, ‘‘এটা স্বীকার করতেই হবে যে, ওরা খুব ভাল বোলিং করেছে। ফিল্ডিং অনুযায়ী নিখুঁত বোলিং। যেমন প্ল্যানিং তেমন বোলিং করেছে ওরা। এই উইকেটে এ রকমই বোলিং করা উচিত। ফিল্ডিংটাও দারুণ করেছে। অন্তত দশটা চার বাঁচিয়েছে। তার মানেই তো চল্লিশ রান।’’
ব্যাটসম্যান, বোলার কোনও পক্ষের জন্যই ভাল নয়, এমন উইকেটে এ দিন পাঁচ বোলারে নামারই সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা। অশোক দিন্দার সঙ্গে সায়ন ঘোষ ও অমিত কুইলা। আর প্রজ্ঞান ওঝার সঙ্গে আমির গনি। ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে আবার একজনের চোট হয়ে গেল। ক্যাপ্টেন অবশ্য বলছেন, ‘‘সুদীপের চোট খুব একটা সিরিয়াস নয়। ওকে কাল ব্যাট করতে নামতেই হবে। বোর্ডে সাড়ে তিনশো থেকে চারশো চাইছি। তার পর আমাদের বোলারদেরও ওদের মতোই ভাল বোলিং করতে হবে।’’
ড্রেসিংরুমে অবশ্য শান্তি ফিরে এসেছে বলেই দাবি করা হচ্ছে বাংলা শিবির থেকে। গত কালের ঝগড়ার পর দিন্দা এবং ওঝাকে এ দিন নাকি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। বাংলা এখন চাইছে, ড্রেসিংরুমের যুদ্ধের চেয়ে যেন মাঠের যুদ্ধে বেশি ঝাঁঝ দেখান ক্রিকেটাররা।