স্টিভ স্মিথ মানেই নিয়মিত বড় রান। অথচ ব্যাট করার সময় ক্রিজে ওর ছটফটানিটা দেখার মতো! এই থাই প্যাড ঠিক করছে তো এই ব্যাটটাকে কখনও আড়াআড়ি বাড়িয়ে ধরছে আবার পরক্ষণেই কাঁধের উপর খাড়া করে তুলছে। নিজের স্টান্স নিয়ে গুছিয়ে দাঁড়িয়েও ও স্বস্তিতে থাকে না। ক্রিজে নানা আঁকিবুকি কাটবে, হাত তুলে হেলমেট ঠিক করবে বা শার্ট টানাটানি চলবে। এর সঙ্গে রয়েছে মার্কামারা শাফল, যেটা যে কোনও কোচের দুঃস্বপ্ন। সব মিলিয়ে ক্রিজে স্মিথের নড়াচড়ার মধ্যে যেন ডেরেক র্যান্ডল বা শিবনারায়ণ চন্দ্রপলের স্পষ্ট ছায়া। দেখে মনে হয়, ছেলেটা ব্যাটিং নিয়ে নিজের অতিউৎসাহটা নিয়ন্ত্রণ করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।
শুক্রবারের দুরন্ত সেঞ্চুরির পর চলতি আইপিএল স্মিথের আলোয় ঝলমল করছে। গুজরাত লায়ন্সদের কালঘাম ছুটিয়ে দেওয়া স্মিথ অবশ্য ব্যাট হাতে শুধু অপ্রতিরোধ্যই ছিল না। নিজের ব্যাটিংয়ে আনকোরা নতুন ক্রিকেট শটও উপহার দিয়েছে: নিজের দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে ফ্লিক। পা তাক করে মাটির দিকে নেমে আসা ইয়র্কার সামলাতে দেখলাম পা দু’টো আরও একটু বেশি ফাঁক করে নিল। তার পর বলকে দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে ফ্লিক করে পাঠাল কিপার আর লেগ-স্লিপের মাঝখান দিয়ে। চার আর ছয়ের বন্যা বইয়ে একদম ফুঁসে উঠে ব্যাটিং করল স্মিথ। আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে ওই ছোট্ট পার্টনারশিপটা অতুলনীয়!
এমন দৃশ্য আইপিএল ছাড়া আর কোথায়ই বা দেখা সম্ভব? ক্রিজের দুই প্রান্তে ব্যাট হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুই দৈত্য, বিশ্বসেরা দু’টো টিমের দুই ক্যাপ্টেন। তারা পাল্লা দিয়ে পরপর দুর্ধর্ষ সব শট খেলছে আর গ্লাভসে গ্লাভস ঠুকে একে অপরকে চাগিয়ে যাচ্ছে। অথচ সেই বিধ্বংসী ব্যাটিংয়েও শেষ রক্ষা হল না। কারণ প্রতিপক্ষ শিবিরে ওদের চেয়েও বেশি বিধ্বংসী দু’জন ব্যাটসম্যান ছিল। যাদের বিরুদ্ধে পাওয়ার প্লে-তে বল করা যে কোনও বোলারের কাছে আতঙ্ক। অমন অপার্থিব ব্যাটিং আর শেষ বল পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা টিকিয়ে রেখে ম্যাচের ফয়সালা। এই স্ক্রিপ্ট কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান স্ক্রিপ্ট রাইটারের মাথা থেকেও বেরোনো অসম্ভব!
তবে চ্যাম্পিয়নরা বরাবর হারতে ঘৃণা করে। স্মিথের ওই রুদ্রমূর্তি ব্যাটিংয়ের আসল লক্ষ্য ছিল পুণে টিমটাকে মাঝারিয়ানার পাঁক থেকে টেনে তোলা। এ বারের আইপিএলে পুণের আশা প্রায় শেষ। তবে ভরাডুবির আগে ধোনি-স্মিথের মতো চ্যাম্পিয়নদের রাগটা আরও কয়েকটা দল ভালরকম টের পাবে। ছিটকে গেলেও ওরা কিন্তু কুঁকড়ে থেকে নয়, গর্জন করতে করতেই মাঠ ছাড়বে।
(টিসিএম)