Sports News

ছেলের কাছে হার বাবার, রঘুকে জড়িয়ে কাঁদলেন রাজদীপ নন্দী

বুধবারের সকালটা একটু অন্য রকমই ছিল ওঁদের। বাবা-ছেলের গন্তব্য এক হলেও দু’জনে কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আলাদা আলাদা।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

বারাসত শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ২১:০২
Share:

ম্যাচ শেষে এ ভাবেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন রাজদীপ।

ম্যাচ শেষ হতে জয়ী কোচ হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন পরাজিত কোচকে ধরে! এমন দৃশ্য ফুটবল বিশ্বে আগে কখনও দেখা যায়নি।

Advertisement

অভূতপূর্ব এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বুধবারের বারাসত স্টেডিয়াম। আসলে আজ ছেলের কাছে বাবার পরাজয়ের দিন ছিল। রঘু নন্দীকে হারিয়ে তাই আবেগে ভাসলেন তাঁরই ছেলে রাজদীপ নন্দী। কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল। তা-ও কোনও রকমে রাজদীপ বললেন, ‘‘বাবা আমার আইডল, এই জয় বাবাকেই উৎসর্গ করলাম।’’

বুধবারের সকালটা একটু অন্য রকমই ছিল ওঁদের। বাবা-ছেলের গন্তব্য এক হলেও দু’জনে কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আলাদা আলাদা। বাবার থেকে কোচিংটা যে তিনি ভালই রপ্ত করেছেন, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বার বার। র্দীঘ দিন কোচিং করেছেন বাবার সহকারি হিসাবেই। বাবা ময়দানের পোড় খাওয়া কোচ হিসাবে খ্যাত। তাঁর হাত ধরে উঠে এসেছে ময়দানের কত শত প্লেয়ার। সেখানে ছেলের তেমন ভাবে ফুটবলটাই খেলা হয়নি। শুধু বাবা নন, মা রত্না নন্দীও ছিলেন ফুটবলার। কিন্তু, ছেলে এই অল্প বয়সেই বেছে নিয়েছেন কোচিংকে। রঘু-রত্নারই ছেলে রাজদীপ নন্দী কলকাতা লিগের কনিষ্ঠতম কোচ।

Advertisement

দেখুন ভিডিয়ো...

বুধবারের বারাসতে লেখা হল কলকাতা লিগের এক অন্য কাহিনি। বাবা-ছেলে লড়লেন ফুটবলের মাঠে। মা রত্না নন্দীর আজ সব থেকে কঠিন দিন ছিল, বলছিলেন রাজদীপ। তাঁর কথায়, ‘‘মা দু’জনকেই আলাদা আলাদা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। কিন্তু কাকে সমর্থন করবে বুঝে উঠতে পারেনি। মায়ের আজ সব থেকে কঠিন দিন ছিল।’’

রঘু নন্দীকে হারিয়ে আবেগে ভাসলেন তাঁরই ছেলে রাজদীপ নন্দী।

প্রতি দিন বাবার থেকে শেখেন। বাবা বলেন, তিনি ছেলেকে দেখে অনুপ্রাণিত হন। তা হলে আজকের দিনটি কোথায় আলাদা? রাজদীপের স্পষ্ট জবাব, ‘‘আলাদা নয় তো। ৯০ মিনিট মাঠে আমরা কেউ কারও নই। এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না আগেই বলেছিলাম। সেটাই চেষ্টা করেছি।’’ কিন্তু বাবার বিরুদ্ধে নেমে যে ছেলের দাপট এ ভাবে দেখা যাবে তা কে জানত! হল তেমনটাই। বুধবার বারাসত স্টেডিয়ামে শুরু থেকে দাপট দেখাচ্ছিল মহামেডানই, মানে রঘু নন্দীর দল। এরিয়ান গোলের সামনে সারা ক্ষণই ছটফট করছিল সাদা-কালো স্ট্রাইকাররা। যেটা স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছিল। একে তো দলটা মহামেডান, তার উপর কোচ রঘু নন্দী। কিন্তু সব হিসেব বদলে দিলেন রাজদীপ। আসলে বদলে দিলেন না, ধরে রাখলেন বাবার তৈরি করে যাওয়া এরিয়ান্সের জায়ান্ট কিলারের তকমা। রঘু নন্দী হেরেও আজ গর্বিত। মাঠ ছাড়তে ছাড়তে বলে গেলেন, ‘‘যে ভাবে অন্য কোচদের সম্মান করি, প্রতিপক্ষের কোচ রাজদীপকেও আমি সে ভাবেই সম্মান করি ।’’ তাঁর গলা দিয়ে ঝরে পড়ল একটু গর্বও!

আরও পড়ুন: বাবা বনাম ছেলের লড়াই

আরও পড়ুন: মেহতাব নামায় জ্বলে উঠল মোহনবাগান

আর রাজদীপ বলছিলেন, ‘‘বাবা সব সময় বলে, যখন যে দলের সঙ্গে থাকবে সেই জার্সিটাকে মা বলে ভাববে। আমিও তাই ভেবেছি। কাল তো বলেছিলাম দু’গোল দেব। বাবা নয়, বড় দলকে হারাতে চেয়েছিলাম। সেটায় সফল হলাম।’’

একমাত্র গোলদাতা ইমানুয়েলের সঙ্গে রাজদীপ নন্দী।

৩৯ মিনিটে বাজিমাত করে গেলেন রাজদীপ নন্দী। মানে তাঁর দল গোল করে এগিয়ে গেল। তা-ও এই কলকাতা ফুটবলে যা প্রায় বিরল দৃশ্য। তিন-চারটি পাস খেলে বক্সের কোণা থেকে ইমানুয়েলের ডান পায়ের একটা দুরন্ত শটে এগিয়ে গেল এরিয়ান। না, রাজদীপকে কিন্তু উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তে দেখা যায়নি। রঘু নন্দীকেও তেমন ভাবে কখনও উচ্ছ্বাস দেখাতে দেখা যেত না। আরও একট মিল রয়েছে বাবা ছেলের মধ্যে দু’জনের লাইসেন্স না থাকায় রিজার্ভ বেঞ্চে বসতে হয়েছে অফিসিয়াল হয়েই। টিম লিস্টে কোচের জায়গায় অন্য নাম।

বাবার একটা জিনিস নেননি রাজদীপ। খেলার সময় রঘু নন্দী সব সময় শুটেড-বুটেড হয়েই রিজার্ভ বেঞ্চে বসতেন। আজও তাই ছিলেন। রাজদীপ কিন্তু সেই হাফ প্যান্টে। একগাল হেসে ফিরে গেলেন মাঠে। মাঠকে প্রণাম করে ফিরলেন ড্রেসিংরুমে।

রঘু নন্দী অনেক আগেই ফিরে গিয়েছেন, ফিরতে ফিরতে দেখেছেন ছেলেকে নিয়ে দলের, সংবাদ মাধ্যমের মাতামাতি।

ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন