সৌরভ ভরসা না করলে হয়তো আমার টেস্ট খেলাই হতো না

মার্ক টোয়েনের কথা ঘুরিয়ে বলি, সোমবার আমার অবসরের খবরটা নিয়ে একটু বাড়াবাড়িই হয়েছে। আমি সব সময় সেটাই করেছি যা ঠিক মনে হয়েছে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, যা করতে চেয়েছিলাম সেটা করতে পেরেছি। মাঠে, জীবনেও। আজ, মঙ্গলবার ঠিক করলাম সাঁইত্রিশতম জন্মদিনে ক্রিকেট ছেড়ে দেব। এখন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। সেখান থেকে ঘোষণা করছি যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফর্ম্যাট আর আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ালাম।

Advertisement

বীরেন্দ্র সহবাগ

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৫ ০২:০০
Share:

মার্ক টোয়েনের কথা ঘুরিয়ে বলি, সোমবার আমার অবসরের খবরটা নিয়ে একটু বাড়াবাড়িই হয়েছে। আমি সব সময় সেটাই করেছি যা ঠিক মনে হয়েছে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, যা করতে চেয়েছিলাম সেটা করতে পেরেছি। মাঠে, জীবনেও। আজ, মঙ্গলবার ঠিক করলাম সাঁইত্রিশতম জন্মদিনে ক্রিকেট ছেড়ে দেব। এখন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। সেখান থেকে ঘোষণা করছি যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফর্ম্যাট আর আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ালাম।

Advertisement

তবে ক্রিকেট আমার জীবন হয়ে থাকবে। যেমন এত দিন ছিল। এর পর আমি কমেন্ট্রি করতে পারি, বা থাকতে পারি কোনও টিমের কোচিং স্টাফ হিসেবে। আসলে ক্রিকেট ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আজ বাবাকে খুব মনে পড়ছে। যে দিন আমি ক্রিকেট শুরু করেছিলাম, উনি ছিলেন। আজও থাকলে ভাল হত। আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারতেন। আমার মা, স্ত্রী আরতি আর দুই সন্তান আর্যবীর আর বেদান্ত এখন আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।

ক্রিকেটের কাছে আমার আর কিছু চাওয়ার ছিল না। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় যে, মিডিয়া ফ্যাব ফাইভের মধ্যে আমাকে রেখেছে। মনে হয় না আমি তার যোগ্য। আমার সৌভাগ্য, সচিন, দ্রাবিড়, সৌরভ, ভিভিএসের মতো প্লেয়ারের সঙ্গে খেলেছি। ওদের থেকে শিখেছি। সৌরভের কাছে আমি অসম্ভব ঋণী। ওর জন্যই আমার টেস্ট খেলা। টেস্ট টিমে ডাক পাওয়াটা আমার কেরিয়ারের সেরা মুহূর্ত। তার আগে লোকে বলত আমি ওয়ান ডে প্লেয়ার। সৌরভ নিশ্চয়ই আমার মধ্যে কিছু দেখেছিল। ওর মনে হয়েছিল যে, আমি টেস্টেও পারব। যত দিন খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকব, তত দিন সৌরভকে মনে রাখব। ও ভরসা না রাখলে আমার হয়তো টেস্ট খেলাই হতো না।

Advertisement

আরও একটা ব্যাপারে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। আমি স্বাধীন ভাবে খেলার সুযোগটা পেয়েছিলাম। আজকের দিনে খেলতে হলে হয়তো ও ভাবে ব্যাট করতে পারতাম না। তখন পেরেছি কারণ জানতাম, পরে যারা আসছে তারা সামলে দেবে। সৌরভের কথা বারবার মনে পড়ছে। আসলে ও যে টিমটা করেছিল তারা বিদেশে টেস্ট জিতেছে, ড্র করেছে। ও প্লেয়ারকে পারফর্ম করার সময়টা দিত। যা খুব দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, ওয়ান ডে-তে ও নিজের জায়গাটাই আমাকে ছেড়ে দিল। আমি ওপেন করতে লাগলাম সচিনের সঙ্গে। এতেই বোঝা যায় সৌরভ কত ভালবাসত আমাকে। থ্যাঙ্কস দাদা!

বেশ কয়েকটা ঘটনা মনে পড়ছে। মুলতানের ট্রিপল সেঞ্চুরিটা নিয়ে এত কথা হয়। অথচ সে দিন সাংবাদিক সম্মেলনের আগে জানতামই না যে আমিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করলাম। মনে আছে, সে দিন ভিভিএসের সঙ্গে কেক কেটেছিলাম। ওর ২৮১-র রেকর্ড পেরিয়ে যাওয়ার পর ভিভিএস সে দিন প্রচুর হাততালি দিয়েছিল।

সচিন পাজিকে নিয়েও সে দিন একটা ঘটনা ঘটেছিল। আমি যখন ছয় মেরে সেঞ্চুরি করছি, উনি বললেন ছয় মেরো না। আমাদের পার্টনারশিপ দরকার। আমি যখন ২৯৪, পাজিকে বললাম সাকলিন আসছে। ওকে ছয় মারি? পার্টনারশিপ তো হয়ে গিয়েছে। ভাগ্য ভাল ছয় মেরেই ট্রিপল সেঞ্চুরিটা করেছিলাম! আসলে আমি যখন খেলা শুরু করেছিলাম তখন প্রচুর পাঁচ-দশ ওভারের ম্যাচ খেলতাম। কে জানে, তাই হয়তো আমার ব্যাটিং স্টাইলটা ও রকম হয়ে গিয়েছিল। আমি সব সময় নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলেছি। আমার চিন্তা-ভাবনাও খুব পরিষ্কার ছিল— অলওয়েজ থিঙ্ক পজিটিভ।

(অবসর ঘোষণার দিন বীরেন্দ্র সহবাগের বিবৃতি ও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লিখিত।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন