একাত্মতা বাড়াতে কোহালিরা ছোঁয়াছুঁয়ির খেলায়

ট্রেনার শঙ্কর বাসু এ দিন নতুন এই খেলার আয়োজন করে যেন শৈশব ফিরিয়ে এনেছিলেন ক্রিকেটারদের মধ্যে। দেখা গেল সকলেই দারুণ উপভোগ করছেন নতুন এই খেলা। প্রত্যেক দিনই কোনও না কোনও নতুন অভিনবত্ব দেখা যাচ্ছে ভারতীয় অনুশীলনে।  যে কারণে ক্রিকেটাররা একঘেয়েমিতে ভুগছেন না। 

Advertisement

সুমিত ঘোষ

সাউদাম্পটন শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১০
Share:

মহড়া: চতুর্থ টেস্টে নামার আগে অনুশীলনে খোশমেজাজে আর অশ্বিন এবং ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহালি। ভারত সিরিজে পিছিয়ে ১-২। বুধবার সাউদাম্পটনে। রয়টার্স

সহজ বাংলা করে বললে, ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা। বুধবার ভারতীয় দলের অনুশীলনে সেটারই নতুন সংস্করণ দেখা গেল।

Advertisement

কী না, গোটা দল এ-ওর পিছনে দৌড়ে বেড়াচ্ছে! প্রত্যেকের কোমরে ঝুলছে অনুশীলনের সময়ে ব্যবহৃত হাতকাটা জ্যাকেট। খেলাটা হচ্ছে, দৌড়ে গিয়ে সেই জ্যাকেট হাতিয়ে নিতে হবে। আর যাঁর কোমরে জ্যাকেট রয়েছে, তাঁকে সেটা রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে। খেলার শেষে যার দখলে যত বেশি জ্যাকেট, তিনিই হবেন বিজয়ী।

ট্রেনার শঙ্কর বাসু এ দিন নতুন এই খেলার আয়োজন করে যেন শৈশব ফিরিয়ে এনেছিলেন ক্রিকেটারদের মধ্যে। দেখা গেল সকলেই দারুণ উপভোগ করছেন নতুন এই খেলা। প্রত্যেক দিনই কোনও না কোনও নতুন অভিনবত্ব দেখা যাচ্ছে ভারতীয় অনুশীলনে। যে কারণে ক্রিকেটাররা একঘেয়েমিতে ভুগছেন না।

Advertisement

এ দিনের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলাটা অবশ্য ‘টিম বন্ডিং’ বা দলের মধ্যে একাত্মতা তৈরি করার লক্ষ্যে আয়োজন করা হল। কখনও কোহালির কোমর থেকে জ্যাকেট তুলে নিয়ে দৌড় মারলেন জুনিয়র ক্রিকেটার ঋষভ পন্থ। আবার কখনও শিখর ধওয়নকে খোঁচা মেরে পালিয়ে যাচ্ছেন সবে দলে আসা পৃথ্বী শ। দেখতে দেখতে মনে হবে, নিছক একটা মজার খেলা নয়, সত্যিই দারুণ একাত্মতা তৈরি করার মঞ্চ। যেখানে সিনিয়র-জুনিয়র ভেদাভেদ নেই, প্রবীণ-নবীনের কাঁটাতারের সীমারেখা করা নেই। সকলে এক ছাদের তলায় সুখী ভারতীয় পরিবার।

কোহালির কথাবার্তা শুনেও মনে হবে আত্মবিশ্বাসী এক ক্রিকেটার এবং অধিনায়কের কথা শুনছি। ‘‘খেলার গতিটা এখন আমাদের পক্ষে। ট্রেন্ট ব্রিজে জিতে খুব উত্তেজক একটা পরিস্থিতিতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি,’’ চতুর্থ টেস্টে নামার আগে বলে দিলেন কোহালি। অন্যান্য অনেকের এ সব পরিস্থিতিতে গলা শুকিয়ে আসে। সিরিজ হারলে ইতিমধ্যেই বিরূপ থাকা মিডিয়া ছিড়ে খাবে। আর কোহালির বুক যেন তত চওড়া হয়। তত তাঁকে বীর, উন্নত শির দেখায়!

ইতিহাসের হাতছানি দু’দলের দিকেই থাকছে। ডন ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়ার পরে কোহালিরা একমাত্র দল হিসেবে ০-২ পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে ফিরে এসে সিরিজ জেতেন কি না, তা নিয়ে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে ক্রিকেট দুনিয়ায়। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে আগে চতুর্থ টেস্ট জিতে ২-২ করতে হবে ভারতকে। তেমনই কোহালির সঙ্গে যাঁর দ্বৈরথ হিসেবে এই সিরিজকে দেখা হচ্ছিল, সেই জেমস অ্যান্ডারসনও অনন্য কীর্তির সামনে। গ্লেন ম্যাকগ্রার ৫৬৩ উইকেট থেকে আর মাত্র ছয় শিকার দূরে ইংল্যান্ডের সুইং কিং।

টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীদের তালিকায় অ্যান্ডারসন এখন পাঁচ নম্বরে। সামনে একমাত্র পেসার হিসেবে শুধু ম্যাকগ্রা। তার আগে তিন কিংবদন্তি স্পিনার— অনিল কুম্বলে, শেন ওয়ার্ন, মুথাইয়া মুরলীধরন। আবার অ্যান্ডারসন এবং স্টুয়ার্ট ব্রড পেস বোলিং জুটি হিসেবে এক হাজার শিকারের সামনে। দু’জনে মিলে নিয়েছেন ৯৮৪ উইকেট। যা এখনও পর্যন্ত কোনও পেস বোলিং জুটির নেই। অ্যামব্রোজ এবং ওয়ালশ যৌথ ভাবে নিয়েছেন ৯২৪ উইকেট। ওয়াসিম আক্রম ও ওয়াকার ইউনিসের শিকার সংখ্যা ৭৮৭। অ্যালান ডোনাল্ড এবং শন পোলকের দখলে ৭৫১ উইকেট।

আপাতত অ্যান্ডারসনে অবশ্য অন্য এক রাজাকে নিয়ে তরঙ্গ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে— কিং কোহালি। এ দিন মাঠে ভারতীয় ড্রেসিংরুমের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা অফিসার যেমন হঠাৎই জানতে চাইলেন, ‘‘ইন্ডিয়ান ক্যাপ্টেন অটোগ্রাফ দেন? যদি কেউ সেলফি তোলার অনুরোধ জানায়, শোনেন? আমার এক বন্ধু আসতে চায়। কিং কোহালির ফ্যান।’’

তিনি— শেন ওয়ার্নও শোনা যাচ্ছে এই টেস্ট পার্টিতে যোগ দিতে পারেন। শোনা যাচ্ছে, প্রিয় কাউন্টি মাঠে টেস্ট দেখার জন্য হাজির থাকতে পারেন অস্ট্রেলীয় স্পিন কিংবদন্তি। হ্যাম্পশায়ার সম্ভবত বিশেষ ডিনারের ব্যবস্থাও করছে। তাতে ওয়ার্ন অন্যতম আকর্ষণ। সেরা চমক? কিং কোহালি! স্বয়ং ওয়ার্নই নাকি বিশেষ ভাবে চেয়েছেন ভারত অধিনায়ককে আমন্ত্রণ ডাকা হোক।

সকালে সাউদাম্পটন থেকে হ্যাম্পশায়ার যাওয়ার সময় ইংরেজ ট্যাক্সিচালককে পাওয়া গেল। তাঁর ছেলে ক্রিকেট খেলছে গ্ল্যামারগনের কোচিং সেন্টারে। টেস্ট দেখতে আসতে চায় প্রিয় ক্রিকেটার কোহালির জন্য। গ্ল্যামারগন কর্তৃপক্ষ ছুটি দেবে না বলে হা-হুতাশ করে যাচ্ছে সে বাবার কাছে। আগের সফরে ব্যর্থ হওয়া ইংল্যান্ডে ফেরত এসে তিনটি টেস্টে ৪৪০ রান, দু’টি সেঞ্চুরি, দু’টি হাফ সেঞ্চুরি যেন আরও বেশি করে বিশ্বায়ন ঘটিয়ে দিয়েছে কোহালিয়ানার।

আর তিনি নিজে ২০১৪-র সেই অভিশপ্ত সফর থেকে চরম শিক্ষা সাবধানী, নিয়ন্ত্রিত। সে বার লর্ডসে জিতে সিরিজে এগিয়ে গিয়েছিল ধোনির ভারত। তার পরে ১-৩ হারে। কোহালি বলছেন, ‘‘চার বছর আগে আমরা জেতার পরে অনেক কিছু ধরে নিয়েছিলাম। ক্রিকেট খুব মজার খেলা, নিজের দিকে অনেক কিছু ফিরে আসতে পারে।’’ যোগ করলেন, ‘‘ট্রেন্ট ব্রিজের চেয়েও ভাল খেলতে হবে এখানে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতে হবে। নির্মম থাকতে হবে।’’

কিং কোহালি ‘মিশন’-এ বেরিয়েছেন। যত ক্ষণ না লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে, অ্যাক্সেলেটর থেকে পা ওঠাতে নারাজ। ক্রিকেট-কোহিনুর নিয়ে ফিরতে চান তিনি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন