দাপট: তিনশোর আগেই থেমে যেতে হল বিরাটকে। ছবি: পিটিআই।
ফিটনেসের শিখরে থাকা শরীরটা ও রকম আধশোয়া হয়ে পড়ল কেন? বিরক্তিতে?
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা যখন দিল্লির ধোঁয়াশায় কাবু তখন তিনি প্রায় শুয়েই পড়লেন ক্রিজে। তিনি— বিরাট কোহালি। তাঁকে চাঙ্গা করার জন্য গ্যালারি থেকে আওয়াজ আসতে শুরু করল, ‘কো-হা-লি, কো-হা-লি, কো-হা-লি, কো-হা-লি’।
রবিবার তাঁর ব্যাটিং দেখতেই যে ঢল নেমেছিল ফিরোজ শাহ কোটলার গ্যালারিতে। সবাই দেখতে এসেছিলেন বিরাটের ডাবল সেঞ্চুরি, তার পরে ট্রিপল।
৪৩০ মিনিট ক্রিজে লড়াই করে তিনি তখন ২৪৩ রানে। স্মগ কাণ্ডে মিনিট কুড়ি খেলা বন্ধ থাকার পরে যখন ফের শুরু হয়, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই চায়নাম্যান বোলার লক্ষণ সান্দাকানের বলে বিরাট এলবিডব্লিউ। কোটলায় যেন নেমে এল শ্মশানের স্তব্ধতা। রিভিউ নিয়েও কোনও লাভ হয়নি। দিল্লির মন ভেঙে দিয়ে বিরাট ফিরে গেলেন ড্রেসিংরুমে।
এমনিতেই পিঠের ব্যথার জন্য এ দিন একটু অস্বস্তিতেই ছিলেন ক্রিজে। লাঞ্চের আগে ড্রিঙ্কসের সময় প্যাভিলিয়নেও যান তিনি। তার উপর এই গোলমাল শুরু হতে তাঁর মনঃসংযোগ ও ছন্দও হয়তো নষ্ট হয়ে যায়। বেশ বিরক্তই দেখাচ্ছিল ভারত অধিনায়ককে। প্রশ্ন উঠল, বিরাটের মনঃসংযোগে চিড় ধরাতেই শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের ধোঁয়াশা কাণ্ড?
ভারত প্রায় সাড়ে ন’ঘণ্টা ব্যাট করে ৫৩৬-৭-এ ডিক্লেয়ার দেওয়ার পরে কোটলা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষে শ্রীলঙ্কা ১৩১-৩। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ (৫৭) ও অধিনায়ক দীনেশ চান্দিমাল (২৫) অপরাজিত। শিখর ধবন ও কোহালি স্লিপে যথাক্রমে দিলরুয়ান পেরেরা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের ক্যাচ না ফস্কালে দিনের শেষে আরও চাপে পড়ে যেত শ্রীলঙ্কা।
এ দিন সকালে শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে বিরাটকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছিল বটে। যে ওভারে নতুন বল নেন লাকমলরা, সেই ওভারেই লাকমলকে ফ্লিক করে চার রান হাঁকিয়ে দলকে ৪০০ রানে পৌঁছে দেন অধিনায়ক।
তার পরে পৌঁছন নিজের মাইলস্টোনে। প্রায় ছ’ঘণ্টা ক্রিজে থেকে ২৩৮ বল খেলে দুশোয় পৌঁছন তিনি। লাকমলের শর্ট বল পুল করে মিড উইকেটে পাঠিয়ে দু’রান নিয়ে দুশোয় পৌঁছতেই হেলমেট খুলে দু’হাত তুলে প্রথমে গ্যালারির দিকে, তার পরে ড্রেসিংরুমের দিকে তাকান তিনি। পরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বোধহয় স্বর্গীয় বাবাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন। উল্টোদিক থেকে রোহিত শর্মা এসে জড়িয়ে ধরে ক্যাপ্টেনকে অভিনন্দন জানিয়ে যান। আর কোটলার গর্জনে তখন ছুটির দিল্লিও যেন অশান্ত।
এই নিয়ে টেস্টে ছ’নম্বর ডাবল সেঞ্চুরি তাঁর। যা সবই এসেছে গত ১৮ মাসে। তিনিই প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন, যাঁর এতগুলো ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে। পরপর দুই ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন তিনি। নাগপুরের পরে কোটলায়।
টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ানদের তালিকাতেও তিনি দ্রুত ওপরে উঠছেন। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি ডন ব্র্যাডম্যানের। ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এখন বিরাট, বীরেন্দ্র সহবাগ এবং সচিন তেন্ডুলকরের। ছ’টা। রাহুল দ্রাবিড়ের পাঁচ ও সুনীল গাওস্করের ৪।
সকাল থেকে এ দিন বিরাটের বিরুদ্ধে কোনও অস্ত্র আবিষ্কার করে উঠতে পারেননি লাকমলরা। দিনের প্রথম ড্রিঙ্কস ব্রেকে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি। এর মধ্যে পেরেরাকে স্টেপ আউট করে রোহিত সোজা বোলারের মাথার উপর দিয়ে ছয় হাঁকিয়ে অষ্টম হাফ সেঞ্চুরিটা সেরে নেন। লাঞ্চে ভারত ছিল ৫০০-৫। আর লাঞ্চের পরে দশ ওভার খেলেই ইনিংস সমাপ্তির ঘোষণা।
শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে নামার পরে প্রথম বলেই করুণারত্নেকে ফিরিয়ে দেন বঙ্গ জুটি শামি-ঋদ্ধি। এর পরে কুড়ি ওভারের মধ্যে আরও দু’জন ফিরে যান, ডিসিলভা ও দিলরুয়ান পেরেরা। কিন্তু এর পরে ক্রিজে এসে ক্রমশ জাঁকিয়ে বসলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। এই ইঙ্গিতটাই কিন্তু ভারতের জন্য খারাপ। ইশান্ত শর্মার একই ওভারে পরপর তিনি তিনটে চার ও শামিকেও পরপর দুটো বাউন্ডারি মারেন। তিনি ছন্দে চলে আসলে সমস্যা বাড়বে ভারতীয় বোলারদের তাতে সন্দেহ নেই। তাই তৃতীয় দিন সোমবার এই জুটি ভাঙাই প্রথম কাজ ভারতের।
খেলার খবরে সব সময় আপডেটেড থাকতে চোখ রাখুন আনন্দবাজারে।