জনসংখ্যা মাত্র ৩০ লক্ষ। অথচ বিশ্বফুটবলে চমকে দেওয়ার সাফল্য উরুগুয়ের। একমাত্র দেশ, যাদের দখলে ২০টি ট্রফি। এর মধ্যে রয়েছে দু’টো বিশ্বকাপ (১৯৩০ ও ১৯৫০)। অলিম্পিক্সে জোড়া সোনা (১৯২৪ ও ১৯২৮)। কোপা আমেরিকায় সেরা ১৫ বার। এক বার মুন্দিয়ালিতো কাপ চ্যাম্পিয়ন।
২০১৮ বিশ্বকাপে ‘এ’ গ্রুপে উরুগুয়ের সঙ্গেই রয়েছে রাশিয়া, মিশর ও সৌদি আরব। বিশেষজ্ঞদের মতে নক-আউটে লুইস সুয়ারেসদের যোগ্যতা অর্জনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ১৫ জুন প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ মিশর। এই ম্যাচের উপর অনেকটাই নির্ভর করছে উরুগুয়ের বিশ্বকাপ ভবিষ্যৎ। জিতলে চাপ অনেকটাই কমে যাবে কারণ, রাশিয়া ও সৌদি আরব ফিফা র্যাঙ্কিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে।
১৯৫০ সালে শেষ বার বিশ্বকাপ জিতেছিল উরুগুয়ে। ৬৮ বছর ধরে বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে এনসো ফ্রান্সেসকোলির দেশের। রাশিয়ায় তৃতীয় বিশ্বকাপের খোঁজে উরুগুয়ে কোচ অস্কার তাবারেসের প্রধান ভরসা ইউরোপের ক্লাবে খেলা দুই তারকা। এক জন লিয়োনেল মেসির সতীর্থ সুয়ারেস। আর এক নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোসের (জুনিয়র) সঙ্গী কাভানি। ক্লাব ফুটবলে এই মরসুমে দু’জনে মিলে করেছেন ৬০টি গোল। মার্চ মাসে চিন কাপে সুয়ারেস-কাভানি যুগলবন্দি উরুগুয়েকে ২-০ জেতায় চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ১০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন বার্সা তারকা। ৩৭ মিনিটে দুরন্ত শটে গোল করেছিলেন কাভানি।
লক্ষ্য: তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন কোচ তাবারেসের। ফাইল চিত্র
দুই স্ট্রাইকার ছন্দে থাকলেও উদ্বেগ কমছে না তাবারেসের। দুশ্চিন্তার কারণ রক্ষণ। যোগ্যতা অর্জন পর্বে দুর্দান্ত শুরু করেছিল তাবারেসের দল। কিন্তু ঘরের মাঠে চিলির ও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হেরেছিল বড় ব্যবধানে।
এমনকী বিশ্বকাপের মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ পেরুও হারিয়ে দিয়েছিল গ্রুপ লিগে। রক্ষণ শক্তিশালী করে দুরন্ত ছন্দে থাকা সুয়ারেস ও কাভনির জন্য সেরা রণনীতি তৈরি করাই এখন প্রধান পরীক্ষা তাবারেসের।
মিশন মস্কো: ২০১৮ বিশ্বকাপের গাইড, গ্রুপ ‘এ’-তে সকলের নজর উরুগুয়ের উপরে
গ্রুপ এ
সেরা দল: উরুগুয়ে
• ফিফা র্যাঙ্কিং ১৭
বিশ্বকাপ ইতিহাস
• প্রথম পর্বে ১২বার
• সেমিফাইনাল ৫বার
• ফাইনাল ২বার
• বিজয়ী ২বার (১৯৩০, ১৯৫০)
কী ভাবে রাশিয়ার পথে
• বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে কনমেবল (দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল ফেডারেশন) গ্রুপে দ্বিতীয় হয় উরুগুয়ে। প্রথম চার ম্যাচে খেলতে পারেননি লুইস সুয়ারেস। প্রথম দু’ ম্যাচে খেলতে পারেননি এদিনসন কাভানি। তা সত্ত্বেও এমন পারফরম্যান্স যথেষ্ট কৃতিত্বের।
কোচ
• অস্কার ওয়াশিংটন তাবারেসকেউরুগুয়েতে কোচ নয়, বলা হয় তিনিই এক ফুটবল প্রতিষ্ঠান। এমনই গভীর ফুটবল জ্ঞান তাঁর যে, ডাকা হয় ‘এল মাস্ত্রো’ (যার অর্থ শিক্ষক) নামে। অনেক বারই উরুগুয়ের কোচ থেকেছেন তিনি। ১৯৯০-তে ইতালিতে দায়িত্বে ছিলেন। গত দু’টি বিশ্বকাপ, ২০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ২০১৪-তে ব্রাজিলে সুয়ারেসদের কোচ ছিলেন। ২০১১-তে মেসির আর্জেন্তিনাকে হারিয়ে উরুগুয়ের কোপা আমেরিকা জয়ের নেপথ্য নায়ক তিনিই। মূলত আক্রমণাত্মক ফুটবলে বিশ্বাসী তাবারেসের প্রধান অস্ত্র ধুরন্ধর রণনীতি এবং অভিজ্ঞতা। ফুটবলারদের কাছে পিতৃসম বলে তাঁদের সেরাটা বার করে আনার ব্যাপারেও দক্ষ।
তারকা কারা
• লুইস সুয়ারেস, এদিনসন কাভানি এবং দিয়েহো হোদিন। এঁদের মধ্যে হোদিন রক্ষণের প্রধান স্তম্ভ। আর সুয়ারেস-কাভানি ফরোয়ার্ডে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা যুগলবন্দি। এক জন বার্সেলোনায় লিয়োনেল মেসির পাশেও উজ্জ্বল। অন্য জন (কাভানি) নেমারের অনুপস্থিতিতেও প্যারিস সাঁ জারমাঁকে টানছেন। দেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা দুই ফরোয়ার্ড তাঁরা। ৯৭ ম্যাচে সুয়ারেস করেছেন ৫০ গোল। কাভানি ১০০ ম্যাচে করেছেন ৪২ গোল।
শক্তি
• রক্ষণ বেশ শক্তিশালী। হোসে মারিয়া হিমেনেস এবং হোদিন সেরা ডিফেন্ডারদের অন্যতম। ক্লাব ফুটবলে দু’জনে একসঙ্গে খেলেন আতলেতিকো দে মাদ্রিদের হয়ে। সেই কারণে তাঁদের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়াও রয়েছে। মাঝমাঠে তারুণ্যের উদ্যম আনতে অনেক বদল করা হয়েছে দলে। এবং, সুয়ারেস ও কাভানি যুগলবন্দিতে উরুগুয়ের আক্রমণ ভাগ বিশ্বের অন্যতম সেরা।
দুর্বলতা
• মাঝমাঠে তারুণ্য আনতে গিয়ে অভিজ্ঞতাকে কম গুরুত্ব দেওয়া হল কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে। নতুনরা মানিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ফ্রেন্ডলি ম্যাচও পাননি। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, মাঝেমধ্যেই তীব্রতা হারিয়ে যায় উরুগুয়ের খেলায়। বিশ্বকাপে সে রকম ঘটলে কিন্তু ফল ভোগ করতে হবে।
১০
• যোগ্যতা অর্জন পর্বে কাভানি ১০টি গোল করে দক্ষিণ আমেরিকা গ্রুপে সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন।
পূর্বাভাস
• তাবারেসের অধীনে উন্নতি করেছে উরুগুয়ে। তুলনামূলক ভাবে সহজ গ্রুপে থাকায় নক-আউটে যাওয়া কঠিন হওয়া উচিত নয়। তার পরেই আসল পরীক্ষা শুরু হবে সুয়ারেস, কাভানিদের।
গ্রুপের বাকি তিন দল
• রাশিয়া: আয়োজক দেশ বলে রাশিয়াকে যোগ্যতা অর্জন পর্ব খেলে উঠতে হয়নি। ইউরো ২০১৬-এ যোগ্যতা অর্জন করেছিল। নিজেদের দেশে কনফেডারেশন্স কাপেও খেলেছে বলে বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে দু’টো প্রতিযোগিতাতেই গ্রুপ পর্বে বিদায় নিয়েছিল তারা। বলা হচ্ছে, এটা ইতিহাসে নিকৃষ্টতম রাশিয়া দল। ইউরো ২০১৬ থেকে ১৯টি ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র ছ’টিতে। সেগুলোও ছোট দলের বিরুদ্ধে।
• তারকা: ফিডর স্মোলভ। ২৮ বছরের স্ট্রাইকার রাশিয়ার সেরা অস্ত্র।
• সৌদি আরব: বিশ্বকাপের প্রস্তুতির রাস্তায় দু’জন কোচকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ২০০৬-এর পরে প্রথম বার বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করার পরেও কোচ এদগার্দো বাউজাকে সরিয়ে দেওয়া হয় ড্র হওয়ার মাত্র ৯ দিন আগে। নতুন কোচ খুয়ান আন্তোনিও পিজি। বিশ্বকাপে সৌদি আরবের সেরা ফল ১৯৯৪-তে দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছনো।
• তারকা: মহম্মদ আল সালাওয়ি। যোগ্যতা অর্জন পর্বে ১৬ গোল করেছিলেন ৩০ বছরের স্ট্রাইকার।
• মিশর: ১৯৯০-এর পরে ফের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে মিশর। আফ্রিকান কাপ অব নেশনস প্রতিযোগিতায় ফিরে এসেছে তাদের আধিপত্য। আর্জেন্তিনীয় কোচ হেক্টর কুপারের রক্ষণাত্মক নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু কুপারের রণনীতি যে সফল, তাতে সন্দেহ নেই।
• তারকা: লিভারপুলের মহম্মদ সালাহ। ইপিএলে ফর্মের বিচারে তিনিই এ বারের সেরা স্ট্রাইকার।