ইন্ডিয়ান সুপার লিগের উদ্বোধন মানেই তারকা সমাবেশ। ফুটবলের বাইরেও বলিউড, ক্রিকেট তারকা, অন্যান্য সেলিব্রিটিদের চমকপ্রদ সমাবেশ। কিন্তু যুবভারতী নিয়ে ঝামেলার জেরে সেই চোখ ধাঁধানো উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে হঠাৎ-ই সংশয় তৈরি হয়েছে।
যুব বিশ্বকাপের পর যুবভারতী কার দখলে যাবে তা নিয়ে জট না খুললে এ বারের আইএসএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরে যেতে পারে অন্য শহরে। মুম্বইতে আইএমজি-আর দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আতলেতিকো দে কলকাতা এখনও যুবভারতী নিয়ে কোনও সবুজ সঙ্কেত দিতে পারেনি। ফলে উদ্বোধন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না নীতা অম্বানীর কোম্পানি। মুম্বই থেকে আইএসএলের এক কর্তা বুধবার বললেন, ‘‘টুনার্মেন্টের উদ্বোধন নিয়ে দু’তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে কথা চলছে। নতুন ভাবে সাজানো যুবভারতী যে-হেতু দেশের সেরা স্টেডিয়াম, তাই কলকাতার কথা আমরা সবার আগে ভাবছি।’’
এই অবস্থায় বুধবার তড়িঘড়ি রাজ্য সরকারের ক্রীড়া দফতরের কাছে নভেম্বর থেকে ২০১৮-র মার্চ মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসের জন্য যুবভারতী চেয়ে চিঠি দিল এটিকে টিম ম্যানেজমেন্ট। মজার ব্যাপার হল, এটিকে চিঠি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ দিন সন্ধ্যায় স্টেডিয়াম ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গলও। দু’একদিনের মধ্যে চিঠি দিচ্ছে মোহনবাগানও। ফলে আই লিগের দুই ক্লাব এবং এটিকের মধ্যে স্টেডিয়ামের দখল নিয়ে শুরু হয়েছে চূড়ান্ত ঝামেলা। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এ দিন অবশ্য বলে দিলেন, ‘‘আগে সবার চিঠি পাই। কে কবে মাঠ চায় দেখি। তার পর এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আমাদের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ।’’ মন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট, বিশ্বকাপের আগে কোনও বিতর্কে জড়াতে নারাজ রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে কলকাতার দুই প্রধানের কোনও সমস্যা না হলেও ঝামেলায় পড়বে এটিকে। কারণ ২৮ অক্টোবর বিশ্বকাপের ফাইনাল। এর পর যদি যুবভারতী নিয়ে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় সেটা অনেক দেরি হয়ে যাবে। তত দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষা করবে না লিগ কমিটি। অনুষ্ঠান সরে যাবে অন্য শহরে।
আইএসএল এবং আই লিগ এ বার একই সঙ্গে হবে। আর সে জন্যই যুবভারতী পাওয়া নিয়ে ডামাডোল। গত মরসুমে যুব বিশ্বকাপের জন্য মাঠ না পাওয়ায় রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে সরে যেতে হয়েছিল তৎকালীন হোসে মলিনার টিমকে। সূত্রের খবর, ফ্লাড লাইট-সহ স্টেডিয়াম প্রস্তুত করতে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়েছিল এটিকে টিম ম্যানেজমেন্টকে। এ বার তাই যুবভারতী পেতে মরিয়া তাঁরা।
আরও পড়ুন: ‘গডফাদার’ না থেকেও বিরাট রাজা
আইএসএল বনাম আই লিগ—এই দ্বন্দ্ব চলার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাশে দাঁড়িয়েছিলন ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের। দুই ক্লাবের সঙ্গে সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘‘কোনও চাপেই যেন দুই প্রধান যেন মাথা নিচু না করে। যুবভারতীতে সবাই খেলুক মিলেমিশে।’’ যা থেকে স্পষ্ট প্রথম দু’বছরের মতো একা স্টেডিয়াম ব্যবহারের ছাড়পত্র পাবে নাএটিকে। আর তাতেই চিন্তায় পড়ছে তাঁরা। তাদের চিন্তা, দুই লিগের জন্য মাঠ বরাদ্দ হলে কী ভাবে হবে বিপণনের কাজ? বিল বোর্ড সরানো গেলেও, ড্রেসিংরুম থেকে ভি আই পি এলাকার বিশাল সজ্জা কী ভাবে বারবার খোলা এবং লাগানো সম্ভব?
শোনা যাচ্ছে, ফেডারেশন ঠিক করেছে আইএসএলের সূচি দেখে আই লিগের খেলা ফেলা হবে। সে ক্ষেত্রে এক সপ্তাহে তিন টিমের তিনটি খেলা ফেললে জট আরও বাড়বে। দেখার, কী ভাবে সেই জট কাটে? তবে সেটা তো পরের ব্যাপার, আইএসএলের উদ্বোধনের জন্য এটিকে মাঠ পাবে কি না, পেলেও কবে তা জানতে পারবে, সেটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন।