Arun Lal

জৈব বলয়! জেলে থাকার থেকেও কঠিন: অরুণ লাল

১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টিয়েন্টি প্রতিযোগিতা। তার জন্য গোটা বাংলা দলের বর্তমান ঠিকানা ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি পাঁচতারা হোটেল।

Advertisement

সব্যসাচী বাগচী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ ২১:৩২
Share:

কোচ অরুণ লালের মতে জৈব বলয়ে জীবনযাপন করাটা জেল কাটানোর থেকেও কঠিন।

‘নিউ নর্মাল’। দুই শব্দের এই ছোট্ট কথাটা এখন সবার মুখে মুখে। এই ‘নিউ নর্মাল’-এ আবার জৈব বলয়ে থাকার ব্যাপারটাও রয়েছে। আর সেটা নিয়েই বেশ চাপে গোটা বিশ্বের ক্রীড়া মহল। এই তালিকায় বিরাট কোহালি, লিয়োনেল মেসি, নোভাক জোকোভিচ, পিভি সিন্ধুদের মতো বড় বড় তারকাদের নাম রয়েছে। বদ্ধ ঘরে থাকার চাপ যে ধীরে ধীরে আতঙ্কের আকার নিচ্ছে সেটা স্বীকার করে নিচ্ছেন সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে অংশ নিতে চলা বাংলা দলের ক্রিকেটাররা। দমবন্ধ হয়ে যাওয়া পরিস্থিতির মধ্যে আবার পারফরম্যান্স করার চাপ। তবুও তাঁদের কিছু করার নেই।

Advertisement

আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টিয়েন্টি প্রতিযোগিতা। তার জন্য গোটা বাংলা দলের বর্তমান ঠিকানা ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি পাঁচতারা হোটেল। গত ২ জানুয়ারি থেকে হোটেলে তৈরি জৈব বলয়ে ঢুকে পড়েছে বাংলা দল। আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সবাইকে সেখানে থাকতে হবে। তারপর মিলবে অনুশীলন করার অনুমতি। ইতিমধ্যেই তিনবার করোনা পরীক্ষা করে ফেলেছে গোটা দল। সবারই রিপোর্ট নেগেটিভ।

কোচ অরুণ লালের মতে জৈব বলয়ে জীবনযাপন করাটা জেল কাটানোর থেকেও কঠিন। আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফ থেকে বহু যুদ্ধের নায়ক ও ক্যানসার জয়ী অরুণ লালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি রীতিমতো বিরক্ত। বললেন, ‘‘ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার সঙ্গে জৈব বলয়ে থাকাকে তুলনা করতে যাবেন না। দুটি দু’রকম লড়াই। আমার মতে জৈব বলয়ে জীবনযাপন করা জেল খাটার থেকেও কঠিন। এই পাঁচতারা হোটেলের পরিষেবা দারুণ। কিন্তু কোনও ঘরের জানলা খোলা সম্ভব নয়। ফলে মুক্ত বাতাস শরীরে আসার কোনও সুযোগ নেই। সারাদিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকছি। এই জীবন আরও কঠিন। ফলতায় আমার ফার্ম হাউস আছে। বালিগঞ্জের বাড়িতে রয়েছে একাধিক গাছপালা। অথচ এখানে বদ্ধ ঘরে দিনযাপন করছি। বিশ্বাস করুন এই জীবন আরও কঠিন।’’

Advertisement

আরও খবর: নিম্নমানের খাবার! বোর্ডের কাছে অভিযোগ মুম্বইয়ে কোয়রান্টিনে থাকা দলগুলোর

ক্যানসারকে হারালেও বয়স তো হয়েছে। এরমধ্যে আবার তাঁর মা ও স্ত্রী প্রবল অসুস্থ। তাঁদের নিয়েও সমান চিন্তিত ‘ফাইটার লাল’। পরিবার নিয়ে প্রশ্ন করতেই তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মা-র বয়স ৯০। স্ত্রী রিনা খুবই অসুস্থ। সকালে চোখ খুললেই ওদের নিয়ে চিন্তা শুরু হয়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন করে দুজনের খবরাখবর নিচ্ছি। কোনও অঘটন ঘটলে আমাকে বালিগঞ্জ যেতেই হবে। এদিকে সেখানে গেলে ফের জৈব বলয়ে ঢুকতে পারব না। সত্যি বলতে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সবাই জীবনযাপন করছি। এরমধ্যে আবার পারফরম্যান্স করার চাপ। ভাল খেললে সব ঠিক। কিন্তু ছেলেরা প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেই পোস্টমর্টেম শুরু হবে। কিন্তু আমাদের মানসিক অবস্থা নিয়ে কেউ ভাবে না।’’

অবশ্য শ্রীবৎস গোস্বামী কিন্তু তাঁর কোচের মত এতটা রুক্ষ নন। গত আইপিএলে জৈব বলয়ে ছিলেন। তাই তাঁর এই বিষয়ে ধারণা বাকিদের থেকে অনেক বেশি। দলের সহ-অধিনায়কের প্রতিক্রিয়া, ‘‘লিলুয়াতে পৈতৃক বাড়ি হলেও এখন বাইপাস সংলগ্ন হোটেলে থাকছি। মানিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আইপিএলের পর বেঙ্গল টি-টোয়েন্টি লিগে খেলেছি। ফলে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা আছে।’’ কিন্তু বদ্ধ ঘরে অনেকটা দিন একা থাকলে বিরক্ত হন না? শ্রী যোগ করলেন, ‘‘ক্ষোভ প্রকাশ করে কোনও লাভ নেই। এতে নিজের শরীরের ক্ষতি। আর শরীর খারাপ হলে সেই প্রভাব পারফরম্যান্সেও পড়বে। তাই মাথা ঠান্ডা রাখাই বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। আর মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য আমার দাওয়াই সায়েন্স ফিকশন ও স্পিরিচুয়াল বই।’’

বাংলার সহ-অধিনায়ক শ্রীবৎস গোস্বামী।

অনুষ্টুপ মজুমদার গত মরসুমের নায়ক। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দলের অধিনায়ক রুকু। এই মুহুর্তে বাইপাস লাগোয়া হোটেলে থাকলেও তাঁর বাড়ি গড়িয়া। তাই বঙ্গ অধিনায়কের কাছেও ব্যাপারটা অদ্ভুত। বলছিলেন, ‘‘গোটা বিষয়টা আমার কাছেও অদ্ভুত। তবে কয়েকদিন আগে বেঙ্গল টি-টিয়েন্টি লিগ খেলার সৌজন্যে জৈব বলয়ে থেকেছি। তাই আমি ধীরে ধীরে অভ্যেস করে ফেলেছি। কিন্তু ছোট্ট ছেলেটার কথা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায়। যদিও কিছু করার নেই। আমাদের জীবনের উপর এখন অন্যের অধিকার।’’

বাংলার অধিনায়ক অনুষ্টুপ মজুমদার।

আরও খবর: বল গিয়ে পড়ল গ্লাসে, সেই বিয়ারই পান করলেন ক্রিকেটপ্রেমী​

আপাতত কয়েকটা দিন ব্যাট-বলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। হোটেলের ঘরের বাইরে বেরিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে আড্ডাও বন্ধ। সকালে ঘুম ভাঙলেই হালকা গা ঘামানো, এবং এরপর কয়েকবার ভার্চুয়াল টিম মিটিং। এটাই ওর রোজের রুটিন। তবে হ্যাংওভার কাটানোর জন্য আরও একটা জিনিস সঙ্গে রাখছেন, ‘ফেলুদা সমগ্র’। অনুষ্টুপ বললেন, ‘‘এটা আমার অনেক বছরের অভ্যাস। তবে এখন ফেলুদা সমগ্র আরও বেশি পড়ছি। মন ভাল রাখার জন্য।’’

হাজার অসুবিধা সত্বেও পৃথিবীর সব ক্রীড়াবিদ জৈব বলয়ে থাকা মানিয়ে নিয়েছেন।কারণ, এই বলয়ে থাকার জন্যই যে পৃথিবীর সমস্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলো সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে।
সৌজন্যে ‘সবার উপরে কোভিড সত্য’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন