ভরসা: ভাঙা ঘরে গ্লভস আঁকড়েই বাঁচেন সন্দীপ। নিজস্ব চিত্র
ইস্টবেঙ্গলের মতো শক্তিশালী দলকে এক ধাক্কায় তিন নম্বরে পাঠিয়ে বহু বছর পরে কলকাতা লিগে রানার্স পিয়ারলেস। এটা যদি এ বার লিগে বড় চমক হয়, তার চেয়েও বড় চমক সম্ভবত এক চা-বিক্রেতার অসাধারণ পারফরম্যান্স!
অফিস-ক্লাবটির গোলের নীচে দাঁড়িয়ে তিনিট আটকে দিয়েছেন ডিপান্ডা ডিকা থেকে শুরু করে আল আমনা-দের। হাইভোল্টেজ লিগে বড় তারকাদের থামিয়ে নায়ক হয়ে গিয়েছেন এক সময়ের চা-বিক্রেতা, বৈদ্যবাটীর সন্দীপ পাল। অথচ, তাঁর একটা চাকরি নেই!
তিন বছর আগে ইস্টবেঙ্গলের চতুর্থ গোলকিপার হয়ে সারা মরসুম মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। যন্ত্রণায় কাঁদতেন। সেই ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর দিনেই পিয়ারলেসের তিন কাঠিতে প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
অবশ্য সেই অনুভূতি বা রানার্স হওয়ার আনন্দ সরিয়ে আপাতত একটা চাকরি তাঁর বেশি জরুরি। সংসারটা ভাল করে চালাতে হবে তো! তাঁর কথায়, ‘‘একটা চাকরি না পেলেই নয়। চাকরি না-জুটলে কী ভাবে চলবে, ভেবে কূল পাই না।’’
জিটি রোড ধরে বৈদ্যবাটী রাজারবাগানের রাস্তা ধরে কিছুটা গেলে খড়পাড়ায় সন্দীপদের বাড়ি। টালির চালের ঘর। রং-চটা দেওয়াল। সেখানেই বছর তেইশের গোলরক্ষকের স্বপ্ন সাজানো। জার্সি, গ্লাভস, প্রতিযোগিতায় পাওয়া উপহার। খেলার ফাঁকেই গত বছর মাধ্যমিক দিয়েছেন সন্দীপ। আগামী বছর উচ্চ মাধ্যমিক।
খেলার বাইরে সব সময় দুশ্চিন্তায় ভোগেন। বুঝেছেন, বড় দলে না-খেললে ভদ্রস্থ টাকা মেলে না। এক সময় শেওড়াফুলি স্টেশনে গুমটিতে চা বেচেছেন।
অনুষ্ঠান বাড়িতে ভিডিও-ছবি তুলেছেন। ক্লাব থেকে যা টাকা পান, তাতে ভাল ভাবে সংসার চলে না। বাড়তি রোজগারের জন্য নানা জায়গায় খেলে বেড়াতে হয়। তাঁর ভাই এখন ভিডিও-ছবি তোলে।
সন্দীপ জানান, ছোট থেকে পাড়ার মাঠে অনুশীলন করে তাঁর বেড়ে ওঠা। বছর দশেক আগে শেওড়াফুলির চলমান সমিতির প্রশিক্ষণ শিবিরে ভর্তি হন। কোচ সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ক্লাবের এক কর্মকর্তা গোলরক্ষক হওয়ার পরামর্শ দেন। গোলরক্ষক হওয়ার হাতেখড়ি সেখানেই। সেখান থেকে স্থানীয় বিএস পার্ক ক্লাব। ২০১২ থেকে ’১৪ পর্যন্ত আইএফএ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৫-তে ইস্টবেঙ্গলে। পরের বছর রেনবো। তার পরে জর্জ টেলিগ্রাফ।
চলতি মরসুমে সই করেন পিয়ারলেসে। তিন প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ফল। মোহনবাগানের সঙ্গে ড্র। মহমেডান এবং ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জয়। সব ম্যাচেই পিয়ারলেসের গোল সামলেছেন বৈদ্যবাটীর ছেলেটি। ২০১৬ এবং ’১৮ সালে সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার প্রতিনিধিত্বও করেছেন। স্থানীয় মহকুমা লিগে তিনি খেলেন বৈদ্যবাটী কৃষ্টিচক্রতে।
সন্দীপের ‘আইডল’, প্রাক্তন গোলরক্ষক, বৈদ্যবাটীরই হেমন্ত ডোরা। সন্দীপের কথায়, ‘‘পিয়ারলেসের পরিবেশ খুব ভাল। কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য-সহ দলের সব সাপোর্ট স্টাফ সাহায্য করেন।’’ মা বেবিদেবী বলেন, ‘‘ছেলে ফুটবল খেলে আরও নাম করুক। কিন্তু একটা চাকরি ওর দরকার।’’