ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পরিকল্পনা শুরু ভারতের

মিশন ২০১৯: ফিল্ডিংয়ে জোর, চাই রিস্ট স্পিনারও

ফিল্ডিং নিয়ে আপস নয়: ভারতীয় ক্রিকেটে ফিটনেস নিয়ে সচেতনতা বেড়ে গিয়েছে অনেক দিন ধরেই। কিন্তু এ বারে যে রকম কড়াকড়ি করা হবে, তা কখনও হয়নি। ফিটনেস নিয়ে সামান্যতম আপসও করা হবে না।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

পাল্লেকেলে শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০৫:২৭
Share:

বিশ্বকাপের প্রাথমিক নকশায় কুলদীপও। ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপের এখনও দু’বছর বাকি থাকতে পারে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ইভেন্ট নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আসন্ন একদিনের সিরিজ থেকেই ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে দল সাজানো শুরু হয়ে যাচ্ছে। কী থাকছে সেই নকশায়? বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে আনন্দবাজার টিম ইন্ডিয়ার সেই ‘মিশন ২০১৯’-এর প্রাথমিক নকশা তুলে ধরার চেষ্টা করল—

Advertisement

ফিল্ডিং নিয়ে আপস নয়: ভারতীয় ক্রিকেটে ফিটনেস নিয়ে সচেতনতা বেড়ে গিয়েছে অনেক দিন ধরেই। কিন্তু এ বারে যে রকম কড়াকড়ি করা হবে, তা কখনও হয়নি। ফিটনেস নিয়ে সামান্যতম আপসও করা হবে না। সাম্প্রতিক সব বড় বড় আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতীয় দল সেমিফাইনাল বা ফাইনালে খেলেছে। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ, নিজেদের দেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দু’টোতেই সেমিফাইনালে হারে তারা। এর পর এ বছরেই ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফাইনালে হারে পাকিস্তানের কাছে। সেই সব হারের ময়নাতদন্ত করে দেখা গিয়েছে, ফিল্ডিংয়ে অনেক বেশি জোর দেওয়া সত্ত্বেও মান অনেক পড়ে গিয়েছে। বছর দুই আগেও যেখানে দলে অন্তত আট জন ক্ষিপ্র ফিল্ডার ছিল, এখন সেই সংখ্যাটা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ বা ছয়ে। ক্ষিপ্রতমদের মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্র জাডেজা বা বিরাট কোহালি। আগে ক্লোজ-ইনে সুরেশ রায়না ছিলেন। অন্তত ১৫-২০ রান একা বাঁচাতেন তিনি। তাঁর কোনও বিকল্প পাওয়া যায়নি এখনও। রায়নাকে যে ফিরিয়ে আনার কথা হচ্ছে, তার একটা বড় কারণ তাঁর ফিল্ডিং। যুবরাজ সিংহ বা কেদার যাদব এই জায়গায় পিছিয়ে পড়ছেন। বোলারদের মধ্যেও অ্যাভারেজ ফিল্ডারের সংখ্যা বেশি। মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব বা আর. অশ্বিন কেউ বাডতি হিমোগ্লোবিন যোগ করতে পারছেন না ফিল্ডিংয়ে। বিশ্বকাপের নকশায় টিঁকে থাকতে গেলে বাড়তি পরিশ্রম করে দ্রুত উন্নতি করতে হবে।

মিডল-অর্ডারে রদবদল: নজর রাখুন শ্রেয়স আইয়ারের উপর। দিন চারেক আগেও প্রিটোরিয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে ১৩১ বলে ১৪০ নট আউটের ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। মুম্বইয়ের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে পরখ করে দেখা হতে পারে। উপরের দিকে ব্যাট করে স্ট্রোক খেলতে পারেন। ২০১৫ আইপিএল নিলামে তাঁকে ২.৬ কোটি টাকায় কিনে হইচই ফেলে দিয়েছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। রঞ্জি ট্রফি বা ঘরোয়া ক্রিকেটে ভুরি ভুরি রান তো করছেনই, রাহুল দ্রাবিড়ের কোচিংয়ে ‘এ’ দলের হয়েও নিয়মিত ভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছেন। ভারতীয় দলে এখন মিডল-অর্ডারের যা অবস্থা, অন্তত দুই থেকে তিনটি স্পটে নতুন কাউকে দেখা যেতে পারে। যেমন একদিনের ক্রিকেটে অজিঙ্ক রাহানের ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁকে সব ম্যাচে খেলানো যায়নি। ওপেনে রোহিত শর্মা এবং শিখর ধবন নিশ্চিত। তা হলে রাহানের জায়গা কোথায় হবে? তাঁকে মিডল অর্ডারে খেলানো যাবে না। যুবরাজের জায়গায় যেমন রায়নাকে ফেরানোর কথা হচ্ছে, তেমনই শ্রেয়সের নাম ভাবা হচ্ছে রাহানের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে। রোহিত এবং ধবন ওপেন করবেন। কোহালি তিন নম্বর। কিন্তু চার নম্বরে ভাল কাউকে দরকার। শ্রেয়স এই জায়গা ভরাট করার প্রধান দাবিদার হিসেবে উঠে এলে অবাক হওয়ার থাকবে না।

Advertisement

রিস্ট স্পিনারের খোঁজ: ভারতের একদিনের দলে এই মুহূর্তে এক নম্বর স্পিনারের নাম রবীন্দ্র জাডেজা। টেস্টে যতই অশ্বিন এক নম্বর স্পিনার হন, ওয়ান ডে-তে অলরাউন্ড দক্ষতা অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। সেই কারণে অশ্বিনের চেয়ে এগিয়ে জাডেজা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও দেখা গিয়েছে দুই স্পিনার খেললে তবেই অশ্বিন সুযোগ পেয়েছেন। নয়তো জাডেজাই খেলেছেন কারণ তিনি ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— তিন বিভাগেই অবদান রাখতে পারেন। ২০১৯ বিশ্বকাপের রোডম্যাপে জাডেজা তাই ভাল মতোই রয়েছেন। অশ্বিনের কী হবে? সেটাই এখন স্পর্শকাতর প্রশ্ন টিম ম্যানেজমেন্টের সামনে। ক্রিকেটীয় দিক থেকে দেখতে গেলে ইংল্যান্ডে রিস্ট স্পিনার অর্থাৎ যাঁরা কব্জি ব্যবহার করে বল করেন, তেমন বোলার বেশি কার্যকর হবেন। অশ্বিনের মতো আঙুলের ব্যবহার করা ‘ফিঙ্গার স্পিনার’ নয়, দরকার লেগস্পিার বা চায়নাম্যান বোলার। পাল্লেকেলে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নেওয়া চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব তাই একদিনের ম্যাচেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ভাল করেছেন কুলদীপ। সেটা তাঁর পক্ষে থাকছে। নির্বাচকদের ভাবনায় আছেন লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহ্বাল-ও। তিনি এর আগে ভারতের হয়ে ওয়ান ডে ম্যাচে খেলে সফল হয়েছেন। এখন দেখার, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁর বোলিং নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাব অশ্বিন কী ভাবে দেন। তিনি যে আরও ক্ষুরধার হয়ে তরুণদের পাল্টা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, কে ভুলে যাওয়ার সাহস দেখাবে!

নতুন মুখ আনার ভাবনা: একাধিক তরুণ ক্রিকেটারের ওপর নজর রয়েছে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাঁদের সুযোগ দেওয়া হবে। যদিও দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেরা দলই খেলানো হবে বলে মোটামুটি ভাবে ঠিক করে রাখা হয়েছে। স্টিভ স্মিথদের বিরুদ্ধে কোনও পরীক্ষা-নীরিক্ষার ঝুঁকি নেওয়া হবে না। নিউজিল্যান্ড বা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বেশ কিছু তরুণ মুখকে দেখে নেওয়ার পরিকল্পনা নির্বাচকদের আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন